নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
অপরাধ করলে রেহাই মিলছে না নওগাঁর এসপি ইকবাল হোসেনের কাছে। প্রভাবশালীদের আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল তাদেরও রেহাই নেই । ফলে নওগাঁর অপরাধীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
সম্প্রতি সময়ে বড় বড় মাদক চোরাচালান , খুনসহ অস্ত্র ব্যবসার সাথে যারা জড়িত প্রায় সবাইকে তিনি ধরাশায়ী করেছেন ।
যোগদানের পর থেকেই ডিবিসহ জেলার সকল থানার ওসিকে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন । ফলে অপরাধ কিংবা অবৈধ কর্মে লিপ্ত এবং সুবিধাভূগীরাও বেশ আতঙ্কে আছে ।
উল্লেখ্য : অল্প কিছুদিন আগে রাণীনগরে একটি লিজকৃত পুকুর দখলকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর আজিম হত্যার ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে ( রোজার মধ্যে ঈদের কয়েকদিন আগে ইফতারীর আগ মুহূর্তে) মামলার অন্যতম প্রধান আসামী সায়েমকে এবং অন্য চারজনকে একজন প্রভাবশালীর গাড়ী থেকে নামিয়ে গ্রেফতার করেছেন । ফলে অনেক বড় ধরনের জনরোষ ও সহিংসতা রোধ করা সম্ভব হয়েছে ।
এরপর এবার কোরবানি ঈদের পর পর একটি মেলায় রাফেলড্র এর সময় একজন শিশু গুলিবিদ্ধ হলে (সম্পূর্ণ ধরা ছোঁয়া ও ধারনার বাইরে এমন আসামীদের) অতি অল্প সময়ে অর্থাৎ সেদিনই মধ্যরাতে অকল্পনীয়ভাবে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন ।
খুব তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ওমর ফারুক নামক এক আসামী একজনকে মথায় গুলি করলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হোন । শুধু তাই নয় , যার কাছ থেকে সেটি কিনেছে সেই অস্ত্র ব্যবসায়ী (একজন অষ্টলজিস্ট পরিচয় দাতা,পাথর ও আংটি বিক্রেতা) অনন্যা বিপণি’র মালিক বাবুলকেও তিনি গ্রেফতার করতে সক্ষম হন ।
জানা যায় , বাবুল দীর্ঘদিন যাবৎ কখনও অন্তরালে কখনও প্রকাশ্যে দাপটের সাথে শহরের অতি প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ও আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে বিভিন্ন রকম ব্যবসা চালিয়ে আসছিল ।
এদিকে উদ্ধারকৃত অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের আরো তথ্য সংগ্রহ , মামলা এবং চার্জশীট প্রদানসহ জড়িতদের নেটওয়ার্কেরও অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে । এবং কিছু কিছু ক্লুও তিনি পেতে সক্ষম হয়েছেন , অচিরেই আরো বড় বড় হোতারা ধরাশায়ী হতে যাচ্ছেন ।
অপর দিকে এসপি’র সরাসরি নির্দেশনায় ভূয়া ডিবি , ভূ্য়া সেনা সদস্য , ভূয়া ডিজিএফআই সদস্য পরিচয় দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে এমনদেরও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে ।
জানা যায় , অপরাধ দমন এবং জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু (ঈদ, পূজা) ও সময়গুলোতে জনমনে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সম্প্রতিক নওগাঁ জেলা পুলিশের প্রশংসনীয় সাফল্য রয়েছে ।
তাঁর যোগদানের পর \ সম্প্রতিক পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিত কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ ও শিরনাম :———–
* ১২০ কেজি গাঁজাসহ ছয়জন ও ১০০কেজি গাঁজাসহ তিন জন গ্রেফতার । পৃথক পৃথক অভিযানে ( বিভিন্ন সময় ) বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও হিরোইন উদ্ধার ।
* প্রাইমারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার ।
* নওগাঁয় জাল নোট তৈরী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
* নওগাঁয় নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার ।
* নিষিদ্ধ অ্যাম্পুলসহ ওষুধ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার ।
* চোরাই \ ডুপ্লিকেট নম্বরধারী মটর সাইকেল উদ্ধার ও মুল হোতাসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার ।
* মটর সাইকেলে অভিনব কায়দায় লুকানো ফেন্সিডিল ও হিরোইনসহ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার ।
* শিশু ধর্ষণ এর সাথে জড়িত মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার ।
* চুরি\হারিয়ে যাওয়া দামীসব মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করে প্রকৃত মালিককে ফেরৎ প্রদান ।
* সন্ধ্যা নামলেই যেসব স্থানে ছিনতাই হত সেখানে টহল জোড়দার করেছে পুলিশ।
* একজন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক এবং অপরজন ডিবি পরিচয় দানকারী , ছিনতাই এর সাথে জড়িত থাকায় তাদেরও রেহাই মেলেনি , আছে জেল হাজতে।
এছাড়াও প্রেমের ফাঁদ পেতে , ডেকে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় ছবি তুলে ব্লাকমেল করে সর্বস্ব লুটে নিত এমন প্রতারক চক্রের ৪জন নারী ও ৪জন পুরুষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
নওগাঁর দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, আলোচিত এসব অপারেশন পরিচালনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মূলভূমিকায় ছিলেন পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন নিজে ।
শুধু তাই নয় , সময় সময় উদ্ভুত দেশের চলমান পরিস্থিতি\অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে এবং নওগাঁয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং তা সহিংসতায় যেন রূপ না নেয়, সে ব্যাপারেও তাঁর ভুমিকা প্রশংসনীয়। ইতোঃমধ্যে তার যথেষ্ট প্রমাণও তিনি রেখেছেন ।
-এসএম