বাজেট পরবর্তী ভাবনা

বাজেট পরবর্তী ভাবনা
বাজেট পরবর্তী ভাবনা

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী
ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্টঃ

জোনভিত্তিক লকডাউন করে করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে বাঁচানোর প্রয়াস গ্রহণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করা এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য নিরন্তর প্রয়াসকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সরকার প্রথম থেকেই মানুষের জীবন এবং জীবিকা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছে।

ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে আমরা হারিয়েছি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মারা গেছেন। তাদের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আওয়ামী সরকার মতাদর্শের অনুসারী হিসেবে নিদারুণভাবে ব্যথিত হয়েছি। এদিকে দেশের অনেক মানুষের সঙ্গে সরকারের বেশ ক’জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তাদের সবার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। এ বৈরি পরিবেশে ইতোমধ্যে যথাযথ নিয়ম মেনে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন দেশের অর্থমন্ত্রী। বাজেটটি অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য। কিন্তু একটি সংঘবদ্ধ বিশেষ সুবিধাবাদী গ্রুপ আছে, যারা বিভিন্ন সময়ে সরকারের প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা নেন। আরেকটি গ্রুপ আছে বিদেশনির্ভর কনসালটেন্সি করেন। দুটি গ্রুপের আশ্চর্য সমন্বয় দেখলাম এবার। তারস্বরে বলা শুরু করেছে, বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। আসলে বাংলা প্রবাদ বাক্যগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ : কাজের সময় কাজী আর কাজ ফুরালে পাজি।

তবে যেভাবে সানেম ও সিপিডি বলা শুরু করেছে, তারা অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের চেয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যাই দিচ্ছে। বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং বরেণ্য অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য রেখেছেন।

আশা করেছিলাম এ দুজনের বক্তব্য আরেকটু ফলাও করে প্রচারিত হবে। অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, আগে টাকা খরচ হবে- পরে অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটা দেখা যাবে। এ বৈরি সময়ে তার একটি উক্তি কিন্তু অনেক কথা বুঝিয়ে দেয়। সারা বিশ্ব কিন্তু আজ টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। সরকারপ্রধানের প্রয়াসে আমরা ২০১০ সাল থেকে উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগোচ্ছি। কোভিড-১৯ বিশ্বের অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও আঘাত হেনেছে। তার পরও বাংলাদেশে সরকার, রাজনীতিবিদ, আমলা, পুলিশ, আর্মি, চিকিৎসাকর্মী, শিক্ষকসহ সবাই চেষ্টা করছেন যার যার অবস্থানে থেকে দেশের সমস্যা দূর করতে। তবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর একটি উক্তি আমি সবসময় স্মরণ করি, মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি কখনও উন্নয়নের সার্থকতা চিহ্নিত করে না। আমরাও দেখেছি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও কর্মসংস্থানের অধিকারী হয়েছিল এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আবদ্ধ হচ্ছিল। অথচ এ যেন সাজানো সংসারে কোভিড-১৯ তছনছ করে দিল। জাতীয় বাজেটে কালো টাকাকে বৈধ করার সুযোগ দান নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। টিআইবিও বক্তব্য দিয়েছে। জানি না টিআইবির এ ক্ষমতা অন্য কোন দেশের জাতীয় বাজেট সম্পর্কে বলার সুযোগ ঘটে কিনা। আসলে আমাদের দেশে আমরা অতি সহজেই অন্যকে আমাদের ব্যাপারে নাক গলাতে সুযোগ করে দেই। পুঁজির স্বাভাবিক ধর্ম হচ্ছে- প্রান্তিক স্থান থেকে কেন্দ্রে পাচার হয়ে যাবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দিলে বরং এ টাকা পাচার হয়ে যেতে পারে। তবে যারা কালো টাকা স্বাস্থ্য চিকিৎসা অন্ন বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ করে মানুষের সাধারণ জীবনমান ঠিক রাখবে তাদের জন্য দায়মুক্তির একটি বিল জাতীয় সংসদে পাস করা যেতে পারে। নইলে যারা অর্থ পাচার করছে তাদের বিরদ্ধে আরও কঠোর শাস্তি প্রদান আবশ্যক। এ দেশ থেকে বাইরের দেশে টাকা প্রেরণের জন্য এবং সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আসলে ব্যাংকিং খাতে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি যেমন উপেক্ষিত ছিল, অতি লোভে তাতি নষ্ট হয়েছে। যারা বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকেন তারা কখনও মালিক হতে পারেন না, বরং তারা হবেন ফ্যাসিলিটর। আশ্চর্যের ব্যাপার আমানতকারীরাই হচ্ছেন ব্যাংকের মূল চালিকাশক্তি। অথচ তাদের ভূমিকা এদেশে মুখ্যের বদলে গৌণ হয়ে যায়। পুঁজিবাজারকেও ঠিক করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। মোবাইল ব্যবহারকারীদের ওপর কর ধার্যটি যথাযথ হয়েছে। তবে মোবাইল কোম্পানিগুলো কিভাবে টাকা কেটে নিচ্ছে তার একটি বিবরণ মোবাইল সিম ব্যবহারকারীদের দিতে বাধ্য থাকা উচিত। নচেৎ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় মোবাইলে বা বায়োটারে সিম থাকলেও টাকা কেটে নেয়া সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি না। চাইলেও সিম থেকে কিভাবে টাকা কেটে নিচ্ছে তা সাধারণ মানুষকে জানাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ভোক্তা অধিদফতরে কমপ্লেন করতে হচ্ছে। জবাবদিহির উর্ধে তো মোবাইল সিম অপারেটররা হতে পারেন না। দেশে মোবাইল ব্যাংকিং বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচীর কথা বলা হচ্ছে। এটি করতে গেলে প্রথমেই বাংলাদেশে যত মোবাইল সিম অপারেটর আছে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও গ্রাহক লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং জবাবদিহি সুনিশ্চিত করতে হবে। নচেৎ ক্রেতা সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে প্রবাসীদের পাঠানো টাকার ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা বহাল রাখাটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত হয়েছে। বস্তুত এবারের বাজেটের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যতের পথপরিক্রমা।’ এক দুঃসময়ে যখন বৈশ্বিক অর্থনীতি আক্রান্ত তখন অবশ্যই অর্থনীতির রূপরেখা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুর্যোগ মুহূর্তগুলো মোকাবেলা করে কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেয়ার নির্দেশনা এতে পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে এ বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথাগত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে নৈতিকতা পূর্ণ কর্মকা-কে প্রাধান্য দেয়ার যে আশ্বাস অর্থমন্ত্রী বাজেট পরবর্তী আলোচনায় আশ্বস্ত করেছেন, সেটির পূর্ণ বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাচ্ছি। সানেম কিভাবে যে মন্তব্য করল বিনিয়োগ বাড়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ, এটি মোটেই যুক্তিগ্রাহ্য নয়। সব সময়েই আমি বাংলাদেশে বাজেট বাস্তবায়নে PDCA (Plan-Do-Check-Act) অনুসারে কাজ করার জন্য বলে আসছি। প্রতিটি খাতের বরাদ্দ যাতে ১ জুলাই, ২০২০ থেকে দেয়া হয় যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। না লাগে সেটিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন তৃণমূল পর্যায় থেকে ফিডব্যাকের ভিত্তিতে যদি গ্রহণ করে তবে তা ভাল হবে। প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া যেমন ঠিক আছে, তেমনি যখন মহামারী থেমে যাবে তখন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। আশা করা যায় কর্মসংস্থানও হবে। জাতীয় পর্যায়ে বাজেটের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে আমদানি বিকল্পায়ন শিল্প প্রতিষ্ঠা অন্তত ৪৯২টি উপজেলা এবং স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন মারফত গ্রহণ করতে হবে। যারা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণের অর্থ মেরে দিচ্ছে, তারা যদি কোন রাজনৈতিক নেতা হয়, তবে কেবল বহিষ্কার নয়, যাতে ভবিষ্যতে তারা নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও আইনের বিধান থাকতে হবে। সামাজিক সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট মাত্রায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে নতুন শ্রম বাজার খুঁজে বের করার দায়িত্ব বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী লোকবল তৈরি করতে হবে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে কখন পরীক্ষা হবে ঠিক নেই। এ জন্যই ইন্টারনেটের মাধ্যমে মিট গুগলে ক্লাস নেয়ার জন্য ধার হিসাবে নবম শ্রেণী ও তদুর্ধ ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল অথবা ল্যাপটপ দেয়া যেতে পারে। বিনামূল্যে পড়ার সময়টুকুর জন্য ইন্টারনেট সরবরাহের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। আমরা ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে অনেক আগে থেকেই উদ্যোক্তা অর্থনীতির ছাত্রছাত্রীদের পাঠ-পঠনের জন্য ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পড়ানোর ব্যবস্থা রেখেছিলাম। যখন সরকার লকডাউন করল তখন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ স্যারের অনুমতি নিয়ে মার্চের শেষ দিকে ক্লাস ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুরু করি। যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তখন ফাইনাল পরীক্ষা ফিজিক্যালি দেয়া যাবে। তবে গুগল শিটের মাধ্যমে ক্লাস টেস্ট, কুইজ, এ্যাসাইনমেন্ট নেয়া হচ্ছে। আসলে বাসায় বসে থাকলে তরুণ-তরুণীদের মাথায় যেমন জং পড়ে যেতে পারে, তেমনি নানামুখী সুযোগ-সন্ধানীরা অলস মস্তিষ্ককে ভুল পথে পরিচালিত করবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান অত্যন্ত দক্ষ শিক্ষক এবং ছাত্র দরদী। তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের সন্তান-সন্তুতি তাদের সহায়তায় প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। এমনকি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ইউএনওকে, চেয়ারম্যানকে ফোন করে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করার সঙ্গে সঙ্গে বিকাশের মাধ্যমেও অর্থ প্রেরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। আবার যাকাত ফান্ড থেকেও নিঃস্ব পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সহায়তা করছেন। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিব-দুঃখী ছাত্রছাত্রীর জন্য সহায়তা স্বপ্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গ এবং প্রাক্তন এ্যালামনাইরা যদি গ্রহণ করেন তবে ভাল হয়। তবে যেসব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নিজেদের পাস করা ভাল ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা থাকা দরকার। পাশাপাশি ঘরে বসে টিভিতে পড়ার চেয়ে অনলাইনে পড়াশোনাটি সার্থক করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অনলাইনে এডুকেশন পদ্ধতির ওপর নারিসুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরেট করার সময়ে এবং পরবর্তীতে এআইটিতে প্রশিক্ষণকালীন সময়ে যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং কম্পিউটার পাঠ-পঠন করায় যেটুকু রপ্ত করেছিলাম সেটি এখন দারুণ কাজে দিয়েছে। জীবনে কোন শিক্ষাই ফেলনা নয়। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিনা পারিশ্রমিক ভার্চুয়াল মিটিং ও প্রেজেন্টশনের অভিজ্ঞতাও নয়।

ভবিষ্যতে প্রবাসী বিদেশীদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে চলে এলে তাদের মেধা অনুযায়ী অন্য দেশে যাতে চাকরি পায় কিংবা নিজের দেশে কিছু করতে পারে সে জন্য সমন্বিত কর্মসূচীর প্রয়োজন রয়েছে। মহামারীর কারণেই চলতি বাজেটের মূল বাজেটর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে সরকারী খরচ প্রথম আট মাসে হয়েছে ৩৩.৫%। সাধারণত আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে শেষ চার মাসে বেশি খরচ হয়। এ প্রথা এবার ভাঙ্গা দরকার। ইচ্ছা করলেই রাতারাতি স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তার পরও সরকারের পক্ষে যতটুকু সম্ভব করা হচ্ছে এবং আগামী বাজেটে করার কথা বলা হয়েছে। তবে বেসরকারী হাসপাতালের অতি মুনাফা এবং জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকায় তাদের অধিকাংশ মালিকই ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। তাদের ওপর প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধি করা দরকার। এটি একটা মাফিয়া নেক্সাস যা ভাঙ্গা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যে স্বাস্থ্য বীমা ছাত্রছাত্রীদের জন্য করার কথা বলেছিলেন, আমি মনে করি দেশের বীমা কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। স্বাস্থ্য বীমা পলিসি আমাদের দেশে আরও জনপ্রিয় করতে গেলে নমনীয় এবং ব্যবহারোপযোগী করতে হবে। সরকার ডাক্তার, নার্স নিয়োগের পর মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ করতে যাচ্ছে। হাসপাতালে বায়োটেকনোলজিস্ট এবং ফিজিওথেরাপিস্টেরও প্রয়োজন। কোন হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেনার পূর্বে দক্ষ জনবল আছে কিনা সেটি নিশ্চিত করা দরকার। আবার তৃণমূল পর্যায়ে প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনীর ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। সে জন্য বিসিএসের মাধ্যমে এ দুটো ক্যাডারেও লোকবল বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্ছনীয়। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে সমগ্র দেশের স্থানীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক দক্ষতাকে বিভাজন করে সে স্থান কোন ধরনের পণ্যাদি উৎপাদনে সম্পৃক্ত হতে পারে সে জন্য জরিপভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরি করে বাস্তবায়ন করতে হবে। কৃষি ও শিল্প খাতের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতাভিত্তিক সরবরাহজনিত ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় অঞ্চলে পচনশীল দ্রব্যাদির সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সরকার ম্যাঙ্গো এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্যবস্থা করে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আবার লকডাউন অঞ্চলভিত্তিক শুরু হওয়ায় যে অঞ্চলে রেড জোন থাকবে, সেখানে ঋতুভিত্তিক ফল-ফলাদি আম-জাম-কাঁঠাল-লিচু-জামরুল-তালকে সহজলভ্যভাবে বেচাকেনার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে দেশে ভিয়েতনামী নারিকেলের চাষের ব্যবস্থা করা দরকার ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এ কারণে যে ভিয়েতনামী নারিকেল দেশী নারিকেলের তুলনায় দ্রুত ফলন দিয়ে থাকে। আবার ড্রাগন ও স্ট্রবেরি ফলের চাষও বৃদ্ধি করা যায়। কেননা যে সমস্ত ফল দ্রুত অধিকহারে ফলন দেবে তা যাদের জীবন-জীবিকা, তাদের ভরসার স্থল হয়। প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এক কোটি বৃক্ষরোপণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যারা নির্দেশ বাস্তবায়ন করবেন তারা যেন আন্তরিকতার সঙ্গে নিজেদের সম্পত্তিতে তা লাগান। অপরের ক্রীড়নক হয়ে অন্যের সম্পত্তিতে বিনা অনুমতিতে গাছ না লাগায় এবং যে বৃক্ষগুলো লাগাবে সেগুলোর ফলন যেন দ্রুত হয় সে দিকে বাস্তবায়নকারীদের আন্তরিকতার প্রয়োজন রয়েছে। এবারের বাজেটটি বাস্তবায়ন যোগ্য ও সময়োপযোগী। স্বাস্থ্য খাতে যেটুকু বরাদ্দ আছে সেটুকুও সততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। কৃষি খাতেরও একই অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী গাছ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি এনেছেন। তার সাধু উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হোক। হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়- চিকিৎসা গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যু ক্রিমিন্যাল অফেন্স ঘোষণাটি অত্যন্ত সাধুবাদযোগ্য এবং ধন্যবাদযোগ্য ও প্রশংসনীয়।

-শিশির

FacebookTwitter