কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ২ ওষুধের সংমিশ্রণে ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ২ ওষুধের সংমিশ্রণে ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু
কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ২ ওষুধের সংমিশ্রণে ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরুকোভিড-১৯ চিকিৎসায় ২ ওষুধের সংমিশ্রণে ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু

স্বাস্থ্যঃ
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউট আইসিডিডিআর’বি আজ বলেছে, একজন সিনিয়র বাংলাদেশী চিকিৎসকের নেতৃত্বে সংস্থার একটি দল কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় দুটি ওষুধের সংমিশ্রণের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছে, যা স্বল্প ব্যয়ে এই রোগের চিকিৎসায় ভাল কাজ করছে।

সংস্থাটি জানায়, এই গবেষণার লক্ষ্য হল আইভারমেকটিন-এর সাথে ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিন-এর সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান করলে ভাইরাসের সংক্রমণ কমার হার এবং জ্বর ও কাশি কমতে কয়দিন লাগে সেসম্পর্কে ধারণা লাভ করা। বুধবার আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ আইসিডিডিআর’বি কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় আ্যান্টি-প্যারাসাইটিক বা পরজীবী নাশক ওষুধ আইভারমেকটিন-এর সাথে অ্যান্টিবায়েটিক ডক্সিসাইক্লিন, অথবা শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে একটি দৈবচয়ন ভিত্তিক পরীক্ষামূলক গবেষণা শুরু করেছে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হবে।

স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ আজ বলেছে, সম্প্রতি একজন সিনিয়র বাংলাদেশি চিকিৎসকের নেতৃত্বে একটি টিমের তৈরি দুটি ওষুধের একটি সংমিশ্রণের কার্যকারিতা পরীক্ষা দ্রুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানানোর পর আইসিডিডিআরবি এ কথা জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইভারমেকটিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি ওষুধ যা ১৯৮০ সাল থেকে পরজীবীজনিত সংক্রমণ প্রশমনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অতীতে দেখা গেছে যে, গবেষণাগারে অনেক ধরণের ভাইরাস নাশক হিসেবেও এটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

‘এই গবেষণায় কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় নিয়োজিত ঢাকার চারটি হাসপাতালের ৭২ জন রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গবেষণাটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাথে শুরু হয়েছে, এবং বাকি হাসপাতালগুলোর সাথে আলোচনা চলছে।

আইসিডিডিআর,বি জানায়, এই গবেষণার লক্ষ্য হল আইভারমেকটিনের সাথে ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিন-এর সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান করলে ভাইরাসের সংক্রমণ কমার হার এবং জ্বর ও কাশি কমতে কয়দিন লাগে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা।

‘এছাড়াও, এই গবেষণা অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তন, অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও রোগী কেন ৮৮ শতাংশের বেশি অক্সিজেন স্যাচুরেশন (এসপিও২) ধরে রাখতে পারে না, রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ ও হাসপাতালে ভর্তি থাকার দিনের সংখ্যায় পরিবর্তন, এবং এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করা।

দুই মাসের এই গবেষণার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজিএইচএস) অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বাসসকে বলেন, ‘মেডিকেল প্রটোকলের আলোকে গবেষণা চলছে এবং আমরা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের এটি জরুরি ভিত্তিতে ত্বরান্বিত করতে বলেছি।

আজাদ বলেন, ডিজিএইচএসের কারিগরি স্টাডি টিম আইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিনের সংমিশ্রণের কার্যকারিতা সম্পর্কে সবুজ সংকেত দিলে ওষুধ দুটি কোভিড-১৯ রোগীদর ‘সীমিত মাত্রায়’ প্রয়োগের জন্য প্রেসক্রাইব করা হবে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যাপক পরিসরে প্রয়োগের আগে, এই সংমিশ্রণটি নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)’র ক্লিনিকাল ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হতে হবে।

এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন এবং গবেষণা দলে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে চলেছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণারয়ের মিডিয়া সেলের প্রধান বলেন, ‘এগুলো স্বল্পমূল্যের ওষুধ, এই সংমিশ্রণটি করোনভাইরাস নিরাময়ে কার্যকর প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ গর্বিত হবে,’ রহমান বলেন।

এই সংমিশ্রণের উদ্ভাবক বেসরকারি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হসপিটাল (বিএমসিএইচ)-এর মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মো. তারেক আলম বাসসকে বলেন, দুইটি ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগে ৬০ জন করোনা রোগীর সকলেই সংক্রমণমুক্ত ও সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

তিনি বলেন, তারা অ্যান্ট্রিপ্রোটোজোয়াল মেডিসিন আইভারমেকটিনের সিঙ্গল ডোজের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সুস্থতায় আশ্চর্যজনক সাফল্য পাওয়া গেছে।

ডা. আলম বলেন, তার টিম এই ওষুধ দুটি শুধু করোনা রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োগের অনুমতি দেয়। যারা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন এবং পরে টেস্টে যাদের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে তাদের এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এই ওষুধ প্রয়োগের চারদিনের মধ্যে তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

আলম বলেন, ওষুধ প্রয়োগের পরে আইইডিসিআর-এর নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বিতীয়বার তাদের টেস্ট করে করোনা নেগেটিভ পেয়েছি। এই ওষুধে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

তিনি বলেন, এই ওষুধের ‘সাফল্যের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী’ এবং তারা এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় কার্যকর ওষুধ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আলম বলেন, ‘ওষুধটি ব্যবহারের জন্য সরকারি অনুমোদন পেতে আমরা ডিজি হেলথ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তারা আমাদের বলেছে, তারা এ ব্যাপারে যাচাই ও সমীক্ষা করে দেখবে।

তিনি বলেন, তার টিম এই সাফল্য নিয়ে আন্তর্জাতিক জার্নালের জন্য একটি পেপার তৈরি করছে। বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা এবং স্বীকৃতির জন্য এটি প্রয়োজন। এই উদ্ভাবনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ব্যাপারে তারা দৃঢ় আশাবাদী।

আলম বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সির অনুমোদনের আগে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় দেশে অথবা অন্য কোথাও এই ওষুধের ব্যবহার ‘অফিসিয়ালি অনুমোদিত’ হবে না।

আলমের সহযোগী ডা. রবিউল মোর্শেদ বলেন, কোভিড ১৯ মোকাবেলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা সত্তে¦ও ধানমন্ডিতে অবস্থিত দেশের অন্যতম বেসরকারি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (বিএমসিএইচ)-এ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অনেক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এই ওষুধ প্রয়োগে তারা চার দিনের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং তিন দিনের মধ্যে করোনার উপসর্গ থেকে মুক্ত হয়েছেন।

-বাসস

FacebookTwitter