মিলি সুলতানা, কুইন্স, নিউইয়র্ক থেকেঃ
অনেক সময় মানুষের জীবন কাহিনী নাটক সিনেমার কাহিনীকে হার মানায়। ১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসে একটি কনস্ট্রাকশন এরিয়ায় কর্মরত শ্রমিক গারল্যান্ড রকি কাজ শেষে আবর্জনা ব্যাগে ঢুকিয়ে গার্বেজ করতে যাচ্ছিলেন। গার্বেজ বিনের ঢাকনা খুলে রকি দেখতে পেলেন প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়ানো কিছু একটা নিঃশব্দে নড়াচড়া করছিলো। তিনি ভেবেছিলেন বিড়ালছানার মত কিছু একটা হবে। কিন্তু তাঁর ধারণা ভুল ছিল — ব্যাগের ভেতর ফুলের মত নিস্পাপ নবজাতক। গারল্যান্ড রকি সাথে সাথে প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে শিশুটিকে বের করে তাঁর সাথে থাকা টাওয়েলে জড়িয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলেন। হাসপাতালের ডাক্তার নার্সরা শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য করিৎকর্মা হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের প্রচেষ্টায় নবজাতক কন্যাশিশুর প্রাণ রক্ষা পেলো।
গারল্যান্ড রকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন শিশুকন্যাটিকে যেন কোনো ভালো পরিবারের কাছে দত্তক দেয়া হয়। শিশুটিকে দত্তক নিয়েছিলেন এক দম্পতি। তার নাম দেয়া হয় মরগ্যান হিল।
সেই দম্পতির আদর যত্নে বেড়ে উঠেছেন মরগ্যান। সেই সময় মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পেয়েছিলো গারল্যান্ড রকির নবজাতক উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার মহৎ ঘটনাটি। মরগ্যানের বায়োলজিকাল বাবা মা সেইসব নিউজের পেপার কাটিং খুব যত্ন করে একটি অ্যালবামে রেখে দিয়েছিলেন। ওই দম্পতি মরগ্যানকে তার অতীত ইতিহাস থেকে আড়াল করেননি। তাঁরা চেয়েছেন, মহান ব্যক্তি গারল্যান্ড রকির কথা মরগ্যান জানুক।
সেই থেকে মরগ্যানের বুকে আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠতে থাকে যে, জীবনের কোনো একদিন তার জীবনদাতা (Life Savior) গারল্যান্ডকে দুইচোখে যেন দেখতে পান। দিনে দিনে এটা মরগ্যানের জীবনের একমাত্র স্বপ্নে পরিণত হতে থাকে। তিনি প্রায়ই তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে তার জীবন কাহিনী,তার স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষার কথাগুলো শেয়ার করতে শুরু করেন। অনেকের নজরে পড়ে মরগ্যানের মর্মস্পর্শী জীবন কাহিনী। যারা কখনও গারল্যান্ড রকিকে দেখেননি, তারাও শুভ কামনা জানান মরগ্যান যেন খুঁজে পান তার জীবনদাতা রকিকে।
“HKSB” নামের একটি টিভি চ্যানেলের করিৎকর্মা একঝাঁক রিপোর্টার ব্যাপক উদ্যোগ নেয় গারল্যান্ডের সাথে মরগ্যানের মিলন দেখা সাক্ষাৎ ঘটিয়ে দিতে। টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে মরগ্যান ও তার বাবা মা’র সাথে যোগাযোগ করা হয় সাক্ষাতকার দেয়ার জন্য। নির্দিষ্ট দিনে টিভি চ্যানেলের রিপোর্টাররা পৌঁছে যায় মরগ্যানের বাড়িতে। সোফায় বসে মরগ্যান ক্যামেরার সামনে তার আবেগ অনুভূতির কথা বলে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “যদি তুমি তোমার সেই অ্যাঞ্জেলকে খুঁজে পাও কি করবে? তাঁকে কি বলবে?” প্রশ্ন শুনে মরগ্যানের চোখ ছলছল করে উঠলো। তিনি একটা বড় দীর্ঘস্বাস ফেলে বললেন, “আমি আমার লাইফ অ্যাঞ্জেলকে পেলে তাঁকে জড়িয়ে ধরবো। তাঁর হাতদুটো’তে চুমু খাবো। তাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদবো……….!” মরগ্যানের কথা শেষ হয়না। রিপোর্টার বললেন, “তোমার লাইফ অ্যাঞ্জেল ঠিক এই মূহুর্তে তোমার বাসায়। তিনি হেঁটে হেঁটে তোমার দিকে আসছেন।”
এমন সময় ছড়ির শব্দ শোনা গেল। কেউ ছড়ির সাহায্যে হাঁটছেন। মরগ্যান কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। তিনি দেখলেন, একজন সিনিয়র সিটিজেন ছড়ির সাহায্যে হেঁটে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন। টিভি রিপোর্টার বললেন, “এই দেখো তোমার জীবনের সেরা ব্যক্তি গারল্যান্ড রকি।” মরগ্যান হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। চিৎকার করে কাঁদলেন। তার লাইফ স্যাভিয়রকে জড়িয়ে ধরলেন। মরগ্যানের কপালে চুমু খেলেন গারল্যান্ড রকি। তাঁরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন। মরগ্যানের বায়োলজিক্যাল বাবা মা থ্যাংকস জানালেন রকিকে। রকি বলেছেন, সব কৃতিত্ব টিভি চ্যানেলের। আমি এই শিশুকে কখনো ভুলতে পারিনি। প্রায়ই ওর নবজাতক চেহারা স্বপ্নে দেখতাম। কোথায় আছে, কেমন আছে ভাবতাম। ঈশ্বরের প্রার্থনা করতাম, ও যেন সুন্দরভাবে বেঁচে থাকুক। “KHSB” এর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, আমাদের মধ্যে সাক্ষাত ঘটিয়ে দেয়ার জন্য।
-শিশির