অনলাইন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মকবুল হোসেন। ২৪ মে, রবিবার, রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী ফজলুর রহমান।
ফজলুর রহমান বলেন, ‘উনার করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছিল। তিন দিন আগে তিনি সিএমএইচে ভর্তি হন।’
তার স্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান ফজলুর।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাজি মকবুল। এছাড়া ডজন খানেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ হলো- শমরিতা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, আলহাজ মকবুল হোসেন ইউনিভার্সিটি কলেজ, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মোহাম্মদপুর ল কলেজসহ আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার।
সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্সুরেন্সসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও মালিক এই হাজি মকবুল হোসেন।
তবে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে তার প্রতিষ্ঠান শমরিতা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধি ও বাড়তি ফি আদায় বন্ধসহ কয়েকটি দাবিতে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
সেই বিক্ষোভ বন্ধ করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি ও গালাগালি করেছিলেন হাজি এম মকবুল হোসেন। সেদিন সড়কে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়ার ঘটনার সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মকবুল বলেন, ‘বসে পড় বসে পড়, সব বইসা পড়। এমবিবিএস পড়তে আসছ, অ্যা? পাবনা জান না বন্ধ করে দিছে, কী বাল হইছে অথোরিটির, প্রিন্সিপালের কী হইছে?’
এ সময় পাশে দাঁড়ানো পুলিশ সদস্যদের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘পাবনা মেডিকেল কলেজ বুঝছেন টোটালি বন্ধ করে দিছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ টোটালি বন্ধ করে দিছে। ওই প্রিন্সিপালের কী হবে, বাল হইছে? তোমার এক বছর মিস হবে। তোমাকে এক্সপেলড করা হবে।’
কলেজের পাঁচশ শিক্ষার্থীর মধ্যে এখানে কয়জন উপস্থিত আছে সে প্রশ্ন তোলেন মকবুল। তখন এক শিক্ষার্থী বলেন, অন্য শিক্ষার্থীরা বাসায় থাকলেও এই আন্দোলনের সঙ্গে তারা একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
তখন হাজি মকবুল বলেন, ‘আর আমার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে সরকার। যারা ইতরামি করবে, খুলি উড়াই দিবে। ওই যে পুলিশ আছে, যারা ইতরামি করবে খুলি উড়াই দিবে।’
এক শিক্ষার্থী কলেজের মালিকের এই কথার প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, ‘ওই বেটা ওর সাহস কত! ওর (আরেকজনকে দেখিয়ে) সাহস কত! কত বড় বেয়াদব!’
এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলেন মকবুল হোসেন। কয়েকজন অন্যদের অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানালে একজনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আরে বেটা তুই তোর কথা চিন্তা কর।’
এছাড়া জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।
তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে মকবুল হোসেন আপিল করলে ২০১১ সালে ১৩ বছরের সাজাটি বাতিল করে দেন আদালত।
-কেএম