অনলাইনঃ
করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের দিনগুলোতে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীরা নিজ নিজ বাড়ি থেকে কাজ অব্যহত রাখলেও, বেশিরভাগ সরকারি কর্মজীবীরা অনলাইনে অফিস না করে ছুটি উপভোগ করছেন।
তথ্য প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল (অনলাইন) অফিস ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন কার্যক্রমের প্রাক্তন জাতীয় প্রকল্প পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে সকল সরকারি কর্মকর্তাই বাড়ি বসে অনলাইনে কাজ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট সুবিধার জন্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সরকারি অফিসগুলোর ক্ষেত্রে এটি এখন খুবই সম্ভব। জুম এবং গুগল ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এছাড়া চিঠিপত্র এবং অন্যান্য ফাইলগুলো ই-ফাইলিং সিস্টেমের মাধ্যমে সহজেই স্থানান্তর করা যায়। তবে এগুলো এখন হচ্ছে না।’
এর আগে বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশে পরিণত করতে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা ব্যবহার করার জন্য সকল মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কিন্তু তা পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি। তবে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করছে।
দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবং বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতির অবনতি ঘটার প্রেক্ষিতে সরকার গত ২৩ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে এবং পরে তা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সূত্র জানায়, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে কাজের কোনো চাপ না থাকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধস্তন সংস্থার কর্মকর্তাদের বাড়ি থেকে কাজ করার প্রয়োজন পড়ছে না।
বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি থেকে কাজ করছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তারাও বাড়ি থেকে অফিসের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন, যখন অন্যরা সাধারণ ছুটি উপভোগ করছেন।
কিন্তু পিএমও, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, বিদেশি ও প্রবাসী কল্যাণ, খাদ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট ভিন্ন।
জনপ্রশাসন সচিব শাইখ ইউসুফ হারুন জানান, তাদের কিছু কর্মকর্তা বাড়ি থেকে কাজ করছেন এবং বাকিরা সাধারণ ছুটি বিবেচনায় প্রস্তুত করা রোস্টার অনুযায়ী অফিসে যোগ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ই-ডকুমেন্ট এবং হার্ড ফাইল উভয় নিয়েই কাজ করছি। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের সাথেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখছি।’
যোগাযোগ করা হলে এলজিডির সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, তারা ছুটির সময়কালে ই-ফাইলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে বৈঠকের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
‘স্থানীয় প্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন,’ যোগ করেন তিনি।
দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, তিনি তার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ নিয়মিত অফিসে যোগ দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্য একটি রোস্টার তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
একই কথা জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুবুর রহমানও। তারা বাড়ি থেকে কাজ করছেন এবং একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক সম্প্রতি জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ের সকল সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের যেকোনো জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করার জন্য তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি বড় বড় সংস্থার কর্মকর্তারা বাড়ি থেকেই অনলাইনে কাজ করছেন।
গ্রামীণফোনের পরিচালক (নিয়ন্ত্রক বিষয়ক) হোসেন শাহাদাত জানান, সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগেই তারা তাদের কর্মচারীদের ‘অফিস ফ্রম হোম (বাড়ি থেকে কাজ)’ সুবিধা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করতে আমরা প্রথম দিকে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, তবে এখন এটি আমাদের সবার জন্যই স্বাচ্ছন্দ্যময়।’
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করছেন।
এদিকে আরেক বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি গত বছর থেকেই ‘অফিস ফ্রম হোমের’ ব্যবস্থা করে আসছিল। তাদের সেই প্রস্তুতি এখন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রবির প্রধান করপোরেট ও নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা প্রধান শাহেদ আলম জানান, তাদের কর্মচারীদের আগেই বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ ছিল।
‘আমরা প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন বাড়ি থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না,’ যোগ করেন তিনি।
বর্তমান প্রেক্ষপটে করোনা ভাইরাসের প্রভাব বিশ্বব্যাপী। এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলমান থাকলে সারাবিশ্বের অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রেই এর বিরুপ প্রভাব পড়বে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের উন্নত দেশে ভার্চুয়াল অফিস কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা করছেন।
কেএম/রিপোর্ট সংগৃহিত