করোনা কালে শব ই বরাতে নামাজের নিয়ম

করোনা কালে শব ই বরাতে নামাজের নিয়ম
করোনা কালে শব ই বরাতে নামাজের নিয়ম

ধর্মঃ
দেশে প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ ঘর ছাড়িয়েছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেই সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় মসজিদে ওয়াক্তের নামাজে পাঁচজন এবং জুমার নামাজে ১০ থাকার নির্দেশও জারি করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) পবিত্র শবে বরাত। মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মহিমান্বিত রাত পবিত্র শবে বরাত। করোনার এই ক্লান্তিলগ্নে যারা বাসায় আছেন (হোম কোয়ারেন্টিন) তারা এই রাতে কিভাবে নামাজ পড়বেন সেটাই আজ আপনাদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে।

শবে বরাত শব্দটি ফারসি। শব মানে রাত, আর বরাত মানে মুক্তি। সেই হিসেবে শবে বরাত হচ্ছে মুক্তির রজনী। এ রাতে আল্লাহ মানবজাতির জন্য তার অসীম রহমতের দরজা খুলে দেন। ক্ষমা প্রার্থণার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করার সুযোগ ঘটে এই পবিত্র রাতে।

মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এই রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকতে মুসলমানদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। শবে বরাত সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘জিবরাইল (আ.) আমাকে বলেছেন, আপনি আপনার উম্মতদের জানিয়ে দিন, তারা যেন শবে বরাতের রাতকে জীবিত রাখে।’ অর্থাৎ তারা যেন ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাতটি কাটিয়ে দেন।

মহিমান্বিত এই রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় মহান আল্লাহর দরবারে সকাতরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নফল নামাজ, জিকির-আজকার, পবিত্র কোরআন মজিদ তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য।

একইসঙ্গে মরহুম আত্মীয়-স্বজনসহ চিরবিদায় নেয়া মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।

এছাড়া পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতেও সন্ধ্যার পর থেকেই মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। অনেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থেকে শেষ রাতে সেহরি খেয়ে পরদিন নফল রোজা রাখেন। শাবান মাসের পরই আসে পবিত্র মাহে রমজান। তাই শবে বরাত মুসলমানদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। শবে বরাতের মধ্য দিয়েই শুরু হয় রমজান মাসের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি।

শব ই বরাতের নামাজের নিয়তঃ

“নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাক‘আতাই ছালাতিল লাইলাতিল বারাতি নাফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার”।

বাংলায় নিয়ত:- “ আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহ তা’য়ালার উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দুই ‘রাক’আত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার”।

শব ই বরাতের নামাজঃ

শবে বরাতের নামাজ দু’রাকাত করে যত বেশি পড়া যায় তত বেশি ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই উত্তম।

প্রতি ৪ রাকাত পর পর কিছু তাসবিহ্-তাহলীল আদায় করে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া কামনা করা অতি উত্তম। এভাবে সারা রাত নামাজ আদায় করা যেতে পারে। পবিত্র শবে বরাতে এভাবে নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে। তাই আসুন এই পবিত্র রাতে আমরা বেশি বেশি করে নফল নামাজ আদায় করি।

শব ই বরাতের নামাজ এবং নিয়ম কানুনঃ

সন্ধ্যায়- এই রাতে মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাযত এবং অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দুই রকাত করে মোট ৬ রকাত নফল নামায পড়া উত্তম।

এই ৬ রাকাত নফল নামাজের নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এরপর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে। দু রাকাত নামাজ শেষ করে সূরা ইয়াছিন বা সূরা ইখলাছ শরীফ ২১ বার তিলায়াত করতে হবে।

শব ই বরাতের নফল নামাজঃ

দুই রাকাত তহিয়াতুল অযুর নামাজ, নিয়ম- প্রতি রাকাতে আল হামদুলিল্লাহ (সূরা ফাতিহা) পড়ার পর , ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ শরীফ (সূরা এখলাছ)। ফযীলতঃ প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকী লিখা হবে।

দুই রাকাত নফল নামাজ, নিয়ম- ১ নম্বর নামাজের মত, প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ শরীফ, অতপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফযীলতঃ রুজিতে রবকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখসিস পাওয়া যাবে।

আট রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে পড়তে হবে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, সূরা এখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব। ফযীলতঃ গুনাহ থেকে পাক হবে, দু’আ কবুল হবে এবং বেশি বেশি নেকী পাওয়া যাবে।

১২ রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামাজ শেষ করে, ১০ বার কলমা তওহীদ, ১০ বার কলমা তামজীদ এবং ১০ বার দুরূদ শরীফ।

১৪ রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে, নিয়ম- প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন। ফযীলতঃ যে কোন দু’আ চাইলে তা কবুল হবে।

চার রাকাত নফল নামাজ এক সালামে পড়তে হবে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফযীলত: গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।

আট রাকাত নফল নামাজ এক সালামে, নিয়ম- প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফজিলত: এর ফজিলতে সর্ম্পকে বর্ণিত আছে যে, হযরতে সৈয়্যদাতুনা ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহা এরশাদ করেছেন, ‘আমি ওই নামাজ আদায় কারীর সাফায়াত করা ব্যতীত জান্নাতে কদম রাখব না।

রোজার ফজিলত হুজুর সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে শাবানে ১ দিন রোজা রেখেছে, তাকে আমার সাফায়াত হবে। আরো একটি হাদীস শরীফে আছে যে, হুজুর সালল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শাবানের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে, তাকে জাহান্নামের আগুন ছোঁবে না। এছাড়াও পড়তে পারেন ‘সালাতুল তাসবীহ এর নামাজ। এই নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুকে এই নামায শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এই নামাজ পড়লে আল্লাহ আয-যাওযাল আপনার আউয়াল আখেরের সগীরা কবীরা জানা অজানা সকল গুণাহ মাফ করে দেবেন।

‘হে চাচা জান! আপনি যদি পারেন, তবে দৈনিক একবার করে এই নামাজ পড়বেন। যদি দৈনিক না পারেন, তবে সপ্তাহে একবার পড়বেন। যদি সপ্তাহে না পারেন, তবে মাসে একবার পড়বেন। যদি মাসে না পারেন, তবে বছরে একবার পড়বেন। যদি এটাও না পারেন, তবে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামাজ পড়বেন (তবুও ছাড়বেন না)।

-কেএম

FacebookTwitter