বাঁচার সম্ভাবনাময় যারা শুধু তাদেরই চিকিৎসা দিচ্ছে ইতালি

আন্তর্জাতিকঃ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরারে প্রদুর্ভাবকে বিশ্ব-মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে এ ভাইসারে মারা গেছে ২৫০ জন। এতে করে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা এক হাজার ২৬৬ জন। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১১ জনে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭০১ জন।

এই পরিস্থিতিতে ১৩ মার্চ, শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাব ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছে। যদিওবা প্রথম দিকে এই ভাইরাসকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাননি। এদিকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে রেশনিং সিস্টেম চালু করেছে ইতালি, যাদের বাঁচার সম্ভাবনা বেশি কেবল তাদেরই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি শুভ কামাল তার ফেসবুক পোস্টে এমন তথ্য জানান।

শুভ কামালের পোস্টটি তুলে ধরা হলো-  

‘আজকের পর থেকে এক মাসের জন্য ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করার জন্য বলেছে অফিস থেকে। কারণ এক মাসের জন্য কানেক্টিকাট স্টেটে স্টেট অফ এমার্জেন্সি জারি করেছে, ডাউনটাউনের সব অফিসকে নোটিশ দিয়েছে যাদের বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ আছে তাদের যেন সেটা করতে বলে। আমি ভাই আর এক মাস বাসা থেকে বের হবো না। বাজার-টাজার আছে, আমার এক দেড় মাস যাওয়ার কথা। তবে জানিনা অলরেডি ভাইরাস ধরে ফেলেছে কিনা, কারণ করোনার লক্ষণ নাকি ১৪ দিন পরেও প্রকাশ পায়।’

‘গত দুই দিন ধরে লোকজন দোকানের সামনে বিশাল লম্বা লাইন দিচ্ছে। আমি ৯৯ ভাগ শিওর ছিলাম এই অবস্থা আসতেছে, তাই যেদিন ইতালিতে লকডাউন করেছে সেদিনই বাজার করে ফেলেছি। আপাতত এক মাস আমার বাইরে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।’

‘গত দুইদিন ধরে বেশ আপসেট ছিলাম। আব্বা-আম্মা দু’জনেই নিউজার্সিতে এয়ারপোর্টে চাকরি করেন, দূর থেকে বেশি অস্থির লাগছিল তাদের জন্য। আজকে খবরে দেখলাম সব এয়ারপোর্ট এম্নিতেই খালি, আন্তর্জাতিক বিমান আসা বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের কাজও কমিয়ে দিয়েছে, হালকা লাগছে আপাতত।’

‘আমার ধারণা বাংলাদেশে বসে এই দুশ্চিন্তার ব্যপ্তি কত হতে পারে তা কেউ উপলদ্ধি করতে পারছেন না। এটা মহামারি, ছোটবেলায় সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে যেসব মহামারির কথা পড়েছি তেমন মহামারি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আগের যুগে মানুষ যেমন মহামারির কাছে অসহায় ছিল, এখনো তাই!’

‘বিলিভ ইট অর নট, আমেরিকায় করোনা টেস্টের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ থেকে যে টেস্টের যন্ত্র দিচ্ছে সেটা আমেরিকা নেয়নি, তারা নাকি নিজে বানাবে! সেটা এখনো পর্যাপ্ত পরিমানে বানানো সম্ভব হয়নি। আসলে ট্রাম্প করোনা ভাইরাসকে গুরুত্বই দিচ্ছিলো না। আমার এক কলিগ এক সপ্তাহ ধরে করোনার টেস্ট করাতে চাচ্ছে সে এখনো পারেনাই। এই ব্যাপারটাও আপসেট করছিল।’

‘একসঙ্গে এক এলাকায় তিন হাজার জন অসুস্থ হলে তাদের ট্রিটমেন্ট করা কোন দেশেই সম্ভব না। ইতালিতেও এখন রেশনিং সিস্টেমে চলে গেছে, যাদের বাঁচার সম্ভাবনা বেশি কেবল তাদেরই চিকিৎসা দিচ্ছে। যে মানুষকে স্বাভাবিক সময়ে হয়তো চেষ্টা করলে বাঁচানো যেত, এখন তাদের ভেন্টিলেটর খুলে যার বাঁচার সম্ভাবনা একটু বেশি তাকেই দিয়ে দিচ্ছে, সারভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট! আমি জানি আমেরিকায়ও হাসপাতাল গুলোতে একই নির্দেশ দেয়া আছে, অবস্থা বেশি খারাপ হলে এখানেও তাই করবে!’

‘আরেক চিন্তা ছিল ইকোনমি নিয়ে। এমন মহামারি নিশ্চিত ভাবেই রিসেশন (ব্যবসায় মন্দা) ডেকে আনবে। রিসেশনে নরমাল দোকানে যারা জব করে তাদের সমস্যা হয়না, কম ঘন্টা করে কাজ পাওয়া গেলেও তাদের বেশির ভাগেরই চাকরি থাকে ঠিকই। কিন্তু রিসেশন হলে অফিসিয়াল চাকরিজীবীদের ধুপধাপ চাকরি চলে যায়। রিসেশনে পড়ে কোম্পানি লে অফ (বরখাস্ত করা) করে দিলে বাসা ভাড়া দিবো কেম্নে এই চিন্তায় তো দুই দিন ঘুমই হয় নাই।’

‘যাই হোক, দেরিতে হলেও ট্রাম্প ভাই এখন করোনা নিয়ে সিরিয়াস হয়েছেন। আজকে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সী জারি করেছেন। এখন প্রাইভেট কোম্পানিকেও করোনাভাইরাসের টেস্টিং করার পারমিশন দিচ্ছে আস্তে আস্তে। সব এলাকাই আস্তে আস্তে অঘোষিত লকডাউনের (অবরুদ্ধ) দিকে চলে যাচ্ছে, অবস্থা যত খারাপ দিকে যাচ্ছিল তত খারাপ হবেনা এখন আশা করা যাচ্ছে। ইকোনমিতে (অর্থনীতিতে) প্রশাসন দেড় ট্রিলিয়ন ডলার পুশ করছে, যে রিসেশন আসবে ভাবছিলাম সেটা হয়তো তত তীব্রভাবে আসবে না। সব মিলিয়ে আজকে সামান্য একটু হালকা লাগছে।’

‘ইকোনমি এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে সরকার সুন্দর কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন নিউইয়র্ক স্টেটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যদি প্রমাণ দেয় করোনাভাইরাস আসায় তার ব্যবসা আগের মত হচ্ছেনা, তাহলে তাদের সরকার থেকে সাহায্য করবে। সব কোম্পানিগুলোকে সরকার অনুরোধ করছে কর্মচারীদের পেমেন্ট (বেতন) যেন বন্ধ না করে, এজন্য নানাখাতে ট্যাক্স মওকুফ করে সরকার কোম্পানিদের সাহায্য করছে।’

‘সব মিলিয়ে ব্যাপারটা ভয়ের…’

-কেএম

FacebookTwitter