১০ হাজার রাজাকারের তালিকায় যারা

অনলাইনঃ
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা এবং পাকিস্তানিদের দোসর হিসেবে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকা ব্যক্তিদের এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। গতকাল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী
আ ক ম মোজাম্মেল হক এ তালিকা প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রাথমিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের খসড়া তালিকাও প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হলো। ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।

মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধিনতাবিরোধীরা রাজাকার-আল বদর নামে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।

চলতি বছরের ১৬ই ডিসেম্বরের আগে তাদের নামের তালিকা প্রণয়ন করা ছিল আমার প্রতিশ্রুতি।

সংসদেও এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম।

এরই আলোকে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংরক্ষণাগারে মুক্তিযুদ্ধের সময় নানা দালিলিক প্রমাণাদি রয়েছে, ওই সময়ের সংরক্ষিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা আশানুরূপ সাড়া পাইনি। তবে আমরা আবারও তাদের অনুরোধ করবো, জানুয়ারি মাসের মধ্যে সেই সময়ের তথ্যাদি পাঠিয়ে সহযোগিতা করবেন।

মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা কোনো তালিকা প্রস্তুত করি নাই, প্রকাশ করেছি মাত্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত পাকিন্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত একাত্তরের রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বা স্বাধীনতাবিরোধীদের তথ্য সংগ্রহ করে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তৎকালীন বিভিন্ন জেলার রেকর্ড রুম হতে এবং ওই সময়ে বিজি প্রেসে ছাপানো তালিকাও সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে।

যাচাই বাছাই করে ধাপে ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে সুকৌশলে মুক্তিযুদ্ধের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও অনেক নথি খোয়া গেছে। তিনি বলেন, ২৬শে মার্চের প্রাক্কালে দ্বিতীয় দফা রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। কোনো ব্যক্তি যাতে অযথা তালিকাভুক্ত না হয় সে বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। বেসরকারিভাবে যাদের নাম আসবে তাদের বিষয়ে তদন্ত করে শেষ ধাপে তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রয়োজনে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রী হিসেবে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তালিকা প্রকাশ করবো। এটা সরকারি গেজেট না। তবে সরকার চাইলে গেজেট করতে পারে। রাজনৈতিক ও পেশাগত বিবেচনায় তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। যাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা নেই। মামলা করার জন্য এই তালিকা প্রকাশ নয়। তবে কেউ চাইলে মামলার ক্ষেত্রে এটা উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। স্বেচ্ছায় যারা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন তারা স্বাধীনতা বিরোধী বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস এবং শাহ আজিজুর রহমানের নাম এই তালিকায় নেই। কারণ তারা উচ্চমানের রাজাকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার অধিকার বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কারও ছিল না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাকে দেশের মানুষ রায় দিয়েছিল। অনেকেই তা পাঠ (স্বাধীনতার ঘোষণা) করতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরাও বিভিন্ন জনসভায় পাঠ করেছি। তাই বলে কেউ দাবি করতে পারে না যে, তিনি ঘোষক।

মন্ত্রী বলেন, এ তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে (www.molwa.gov.bd) পাওয়া যাবে। তৎকালীন বিভিন্ন জেলার রেকর্ড রুম হতে এবং ওই সময়ে বিজি প্রেসে ছাপানো তালিকাও সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে।

যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে।

মুক্তযোদ্ধাদের প্রসঙ্গে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, শেখ হাসিনার সদয় নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১০ বছরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আগামী ২৬শে মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। বর্তমান তথ্য মতে, কোন না কোন তালিকায় অন্তর্ভূক্তির সংখ্যা ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৬ জন। এর মধ্যে দাবিদার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৫১ হাজার ২৮৫ জন। বর্তমানে ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ১ হাজার ৪৬১ জন। কিন্তু এই ২ লাখ ৫১ হাজার ২৮৫ সংখ্যক তালিকার অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামে একাধিক গেজেট/অন্যান্য দলিল থাকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশি মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি নয়। একাধিক দলিলভূক্ত মুক্তিযোদ্ধাগণের চূড়ান্ত একক তালিকা তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

-ডিকে

FacebookTwitter