আর্ন্তজাতিকঃ
ভারতের অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে একটি ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে মন্দির নির্মাণের রায় দিয়েছে আদালত।
একই সাথে মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলমানদের জন্য আলাদা জমি বরাদ্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নানা নাটকীয়তা ও চরম উৎকণ্ঠার মাঝে শেষ পর্যন্ত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আজ ৯ নভেম্বর, শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
অযোধ্যার বিতর্কিত জমিটি নিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা দায়েরের ৭০ বছর পর এ নিয়ে রায় দিলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টে একটানা ৪০ দিন শুনানি হওয়ার পরে রায় লেখার জন্য মাসখানেক সময় নেয়া হয়। সর্বসম্মত রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনি ভিত্তিতেই জমির মালিকানা স্থির করা উচিত। বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে জমির মালিকানা ঠিক করা সম্ভব নয়। তবে কাঠামো থেকেই কোনো দাবি করা যায় না। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এখানেই রামের জন্মভূমি ছিল। তবে এএসআই এ কথা বলেনি, যে তার (বাবরি মসজিদ) নিচে মন্দিরই ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, সেগুলি অনৈসলামিক। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড অধিকার দাবি করতে পারে না। বিকল্প জমি পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। অন্যত্র ৫ একর জমি দেয়া হবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে। তারা সেখানে মসজিদ তৈরি করতে পারবে।’
ভারতের রাজনীতিতে সব থেকে স্পর্শকাতর এ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গোটা উত্তরপ্রদেশকে নিরাপত্তার চাঁদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে চার হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৭৮টি রেল স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের সমস্ত স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।
লক্ষ্ণৌ এবং অযোধ্যায় দুটি হেলিকপ্টার মোতায়েন রাখা হয়েছে। গতকাল রাত থেকেই গোটা উত্তরপ্রদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ একাধিক টুইটবার্তায় লিখেছেন, “অযোধ্যা মামলার রায় কারও জয় বা পরাজয় হবে না”।
তিনি আরও লিখেন, “সম্প্রীতি রক্ষা করা দেশবাসীর সবার আগে কর্তব্য।”
এদিকে দিল্লি থেকে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কোন সুযোগ নেই, কারণ এটিই ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
বিবিসি জানায়, অযোধ্যার বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটি যে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে, সেখানে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বারো হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আর অযোধ্যায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই কারফিউ জারি রয়েছে।
এদিন রায় ঘোষণার আগে গতকাল প্রধান বিচারপতি গগৈ গতকাল শুক্রবারই রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন। উত্তর প্রদেশসহ দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক ও রাজস্থানসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আজ স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার হওয়ার কারণে বেশির ভাগ সরকারি অফিসেও ছুটি।
১৯৯২ সালে কট্টর হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় অন্ততপক্ষে ২০০০ লোক প্রাণ হারায়।
কট্টরপন্থী হিন্দুদের দাবি, বাবরি মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল। একটি রামমন্দির ভেঙ্গে মোগল আমলে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।
বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক চলছে কয়েক শতাব্দী ধরে। এ নিয়ে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বহুবার দাঙ্গা বেঁধেছে, প্রাণ গেছে হাজারো মানুষের।
ব্রিটিশ সরকার এ জমির ভেতরের অংশটা মুসলিমদের আর বাইরে চত্বরটা হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা রামের মূর্তি রেখে দিলে প্রতিবাদ করেন মুসলমানরা। এরপ সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালা বন্ধ করে দেয়। জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সেবছরই আদালতে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়।
এরপরে ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজার অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রাম জন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। অন্যদিকে মামলাও চলতে থাকে।
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে – দু’ভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তার বিরুদ্ধে উভয় পক্ষই ২০১১ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চালায়। তবে তা ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি নিয়ে বিশেষ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
-কেএম