অনলাইনঃ
বহুল আলোচিত ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ইন্টারপোল রেড নোটিশধারী পলাতক আসামি জিসান আহমেদ ওরফে মন্টিকে দুবাইয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ২ অক্টোবর, বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ইন্টারপোল বাংলাদেশ শাখার ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম। জিসানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গতকাল ৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, ‘দুবাইয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এনসিবির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আমাদের জিসানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানিয়েছেন। আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করছি।’
তিনি আরো জানান, দুবাই কর্তৃপক্ষ জিসানকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, ‘আলী আকবর চৌধুরী’ নামে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাইয়ে অবস্থান করছিলেন জিসান। সেখানে তার ঠিকানা দেখিয়েছেন শারদা পল্লী, ঘানাইলা, মালুগ্রাম শিলচর, চাষার, আসাম। বাবার নাম হাবিবুর রহমান চৌধুরী ও মায়ের নাম শাফিতুন্নেছা চৌধুরী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর স্ত্রীর নামের স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে রিনাজ বেগম চৌধুরী। পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান দুবাই হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
তবে গ্রেপ্তার হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় চাইলেও জিসানকে সরাসরি দেশে ফেরাতে পারবে না ঢাকা। পাসপোর্টসূত্রে ভারতের নাগরিক জিসানকে প্রথমে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। পরে সেখান থেকে তাকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চালাতে পারে বাংলাদেশ।
২০০২ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবির দুই ইন্সপেক্টরকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে আলোচনায় আসেন জিসান। এর পরে দীর্ঘ সময় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। আর ২০০৫ সালে পালিয়ে যান ভারতে। ২০০৯ সালে জিসানকে আটক করে কলকাতা পুলিশ। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে কলকাতায় বসেই ঢাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
এরপর ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে বছর দুয়েক আগে দুবাই যান জিসান। সেখানে থেকেই ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণে কলকাঠি নাড়তেন জিসান। দুবাইয়ে থেকেই ভারতীয় পাসপোর্টে তিনি জার্মানিতে স্থায়ী বসবাসেরও সুযোগ পান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুবাইয়ে জিসানের দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে গাড়ির ব্যবসা। এসব দেখভাল করেন তার আপন ছোটভাই শামীম ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাকিল মাজহার। মাজহার সূত্রাপুর যুবলীগ দক্ষিণের সহসম্পাদক রাজিব হত্যা মামলার আসামি। এ হত্যার পরই পালিয়ে দুবাই যান তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত দেশের গত এক দশকের শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসী তালিকায় ছিলো জিসানের নাম। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ঘোষণা করা হয়েছিলো পুরস্কারও। রাজধানীর গুলশান, বনানী, বাড্ডা, মতিঝিলসহ বেশ কিছু অঞ্চলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতেন তিনি। জিসানের বিরুদ্ধে ঢাকায় একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং যুবলীগ নেতা জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুণরায় আলোচনায় উঠে আসে জিসানের নাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জিসানের নামে অপরাধ জগতের অনেক অজানা তথ্য দিয়েছেন। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘টেন্ডারবাজ‘ যুবলীগ নেতা জি কে শামীম তারই লোক। শামীমের মাধ্যমেই দুবাইয়ে বসে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন জিসান।
-কেএম