শিক্ষাঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নেয়া ‘মাস্টারপ্লান’ ঘিরে চলমান আন্দোলন ক্রমশই জটিল আকার ধারন করছে।
আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
এই পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেছিলেন, ‘আন্দোলন এতটা জটিল না যে সমাধান করতে পারবো না।’
তিনি আন্দোলনের সমাধানে আন্দোলনকারীদেরকে তাদের দাবির বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হওয়ার পরামর্শ দেয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
প্রকাশিত সেই স্বাক্ষাতকারের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের সংগঠক ও নেতৃবৃন্দরা বলছেন, খোদ উপাচার্যের প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমের কারণেই আন্দোলন জটিল হয়ে উঠছে। একই সাথে মাস্টারপ্লানকে ঘিরে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগে যেহেতু উপচার্যের নামও জড়িয়েছে তাই তদন্তের স্বার্থে তার সাময়িক অব্যহতি নেয়ার দাবিও সামনে এসেছে।
উপাচার্যের দেয়া স্বাক্ষাতকারের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের অন্যতম কয়েকজন সংগঠক বাংলা’র কাছে স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন।
অধ্যাপক রায়হান রাইন, মুখপত্র, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ :
‘আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিকে জটিল করছেন।
মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে যে যৌক্তিক প্রশ্নগুলো উঠেছে, সেগুলোর জবাব তো তিনি দেনই না, বরং তিনি আলোচনাকে প্রহসনে রূপান্তরিত করেছেন। গতকাল ( বুধবার) তিনি আমাদেরকে আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছেন, অন্যদিকে বলছেন দাবিগুলো নিয়ে তার বিশেষ কিছু করার নেই। তিনি যদি আমাদের দাবির প্রতি নমনীয় না হন, তবে বলবো তিনিই আলোচনার প্রধান প্রতিবন্ধক এবং পরিস্থিতি ধীরে ধীরে জটিলতর হচ্ছে।’
‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তিনি তদন্ত করতে পারেন’, উপাচার্যের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অধ্যাপক রাইন বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগও তিনি তদন্ত করতে পারেন না। কারণ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে ইউজিসি তদন্ত করতে পারে অথবা বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে পারে।’
হল সরানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য বলছেন স্থাপত্যবিদদের সাথে তিনি আলোচনা করবেন। কিন্তু তিনি এতদিন করলেন না কেন এই আলোচনা। এতদিন যদি তিনি স্থপতিদের সাথে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করতেন, তাহলে পরিস্থিতি এতটা জটিল হত না।
উপাচার্য বলছেন হলগুলো সরানো সম্ভব না। কিন্তু এখানকার প্রকৌশলীরা বলছেন, হলগুলো সরানো সম্ভব। তবে মাস্টারপ্ল্যানটিকে পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে, কিছু ধাপ পার করতে হবে। সে কাজগুলো করা কঠিন কিছু না। উপাচার্য বলেছেন পরিকল্পনার ১৯-২০ করা যাবে, ১৫-২০ না। আমরা বলছি, যতটুকু ত্রুটি আছে, ততটুকুই সংশোধন করতে হবে।’
আশিকুর রহমান, সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট :
‘এখানে জটিলতা খোঁজাটাই বোকামি। আন্দোলনে যে জনসম্পৃক্ততা এবং শিক্ষার্থীদের যে গণজোয়ার তা প্রমাণ করে উপাচার্য বললেই আন্দোলন জটিল বা সহজ হয়ে যাবে না।
তিনি যদি শিক্ষার্থীদের এই গণজোয়ারকে আমলে না নেন, তাহলে পরিস্থিতি কেবল জটিলই না, জটিল, যৌগিক এবং এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে তিনি নিজেই একটি ইংরেজি দৈনিকে এক ধরণের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
এছাড়া শিডিউল ছিনতাইয়ের একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছিলো। সেই অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কিছুই করেননি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে একটি শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এই ফাঁকি নিয়েই আমাদের কথা। আমরা বলিনি তিনিই দোষী। আমরা একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি।’
নজির আমিন চৌধুরী জয়, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি :
‘আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনড় ও একগুয়েমী অবস্থান থেকে সরতে হবে। তারা যদি এই অবস্থান থেকে না সরেন, তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে এবং সেই দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।’
দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপাচার্যকে দোষী বা নির্দোষী কোনোটাই বলতে পারছি না।
একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে একত্রিত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা যায়। তদন্ত চলাকালে উপাচার্য তার দায়িত্ব পালন করবেন না। তিনি যদি নির্দোষ প্রমাণিত হোন, তাহলে তিনি তার নিজের জায়গায় ফিরে যাবেন।’
আরও পড়ুনঃ
১০ কেচি সোনা সহ কেবিন ক্রু আটক
মাহাথির মোহাম্মদ, সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট :
‘উপাচার্য বলেছেন যে আন্দোলন এত জটিল না যে সমাধান করা যাবে না কিন্তু আজকে দুপুরে (বৃহস্পতিবার) তিনি আমাদের ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবি সর্বোচ্চ মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। আমরা এই আশ্বাসে আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু যদি তিনি তার আশ্বাস না রাখেন সেটাকে আমরা বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত করব। এবং এর প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতীতে অনেক শক্তিশালী উপাচার্যের যে পরিণতি এনে দিয়েছে তারও সে পরিণতি হবে।’
-কেএম