অনলাইনঃ
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে কেন্দ্রগুলোর তালিকা তৈরি করে তাতে ৬৪ ভাগ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তা ছকও তৈরি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ না করে তা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নির্বাচনের দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের সোয়া লাখ সদস্য সরাসরি মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া রিজার্ভ ফোর্স, কেন্দ্রভিত্তিক মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, পুলিশের তালিকায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা সারাদেশে ৪০ হাজার ২৭৩টি ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৮২৭টি কেন্দ্রই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি ১৪ হাজার ৪৪৬টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে দুর্গম এলাকায় এক হাজার ৬৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এ হিসাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সারাদেশে মোট ভোটকেন্দ্রের ৬৪ দশমিক ১৩ ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। বাকি ৩৫ দশমিক ৮৭ ভাগ সাধারণ কেন্দ্র।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা গণমাধ্যমকে জানান, পুলিশের দৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কেন্দ্র নেই। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাধারণ কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায়ও পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভোটকেন্দ্রগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর একটি ‘সমতল এলাকা’ ও অপরটি ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে ধরা হয়েছে। দুটি এলাকাতেই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘সাধারণ’ হিসেবে কেন্দ্রগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, যেসব ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রার্থী বা তার নিকটাত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে এমন কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী গোলযোগ বা বিশৃঙ্খলা হতে পারে- এমন কেন্দ্র, কোন প্রার্থীর পক্ষে কোন গোষ্ঠী অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে- এমন সব কেন্দ্রকে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করেছে। এ ছাড়া ভৌগোলিক অবস্থান ও ভোটকেন্দ্রের স্থাপনাকেও এ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ এলাকার কেন্দ্র হিসেবে দুর্গম এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ি এলাকা, চরাঞ্চল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটে- এমন এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলো রয়েছে।
সূত্র জানায়, পুলিশের করা তালিকায় ঢাকা মহানগর এলাকায় দুই হাজার ১১২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি এক হাজার ২৬৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় ৫৯১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৪৩টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৪৮টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খুলনা মহানগর এলাকায় ৩০৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৯টি সাধারণ কেন্দ্র পাওয়া গেলেও ২১০টিই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর এলাকার ১৯৬টির মধ্যে ১৬৮টিই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ও ২৮টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বরিশাল মহানগর এলাকার ১৯৭টির মধ্যে ৭১টি সাধারণ ও ১২৬টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সিলেট মহানগর এলাকার ২৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০২টি, অপর ৯১টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগর এলাকার ৪২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৮টিই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে পুলিশ। মাত্র ৮৮ কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রংপুর মহানগর এলাকার ১৯৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ৮০টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঢাকা রেঞ্জের জেলাগুলোর মধ্যে মোট কেন্দ্র রয়েছে সাত হাজার ৩৩৪টি। এর মধ্যে চার হাজার ৭৪টিই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই রেঞ্জে তিন হাজার ২৬০টি কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের পাঁচ হাজার ৭৯৮টি কেন্দ্রের মধ্যে তিন হাজার ৮৮১টি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক হাজার ৯১৭টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজশাহী রেঞ্জের চার হাজার ৮৯৫টি কেন্দ্রের মধ্যে দুই হাজার ৮০৭টি গুরুত্বপূর্ণ ও দুই হাজার ৮৮টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ রেঞ্জের দুই হাজার ৭১১টি কেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ৭৫৩টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ৯৫৮টি সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রংপুর রেঞ্জের চার হাজার ১৪৮টি কেন্দ্রের মধ্যে দুই হাজার ৯০৭টি গুরুত্বপূর্ণ ও এক হাজার ২৪১টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জের চার হাজার ৫২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে দুই হাজার ৮৪৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই রেঞ্জে এক হাজার ৬৭৬টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বরিশাল রেঞ্জের দুই হাজার ৩৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ৬৯৭টিই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই রেঞ্জে মাত্র ৬৩৪টি কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সিলেট রেঞ্জের দুই হাজার ১৮৩টি কেন্দ্রের এক হাজার ২৯৩টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৮৯০টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা বেশি থাকবে। এ জন্য পুলিশের স্থানীয় ইউনিটগুলোর চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।