হিন্দু আইন: জোরপূর্বক ধর্মান্তর বেড়ে যাবে, ধারণাটি ঠিক নয়

জোরপূর্বক ধর্মান্তর বেড়ে যাবে, ধারণাটি ঠিক নয়
জোরপূর্বক ধর্মান্তর বেড়ে যাবে, ধারণাটি ঠিক নয়

আইন আদালতঃ
দেশে যে আইন রয়েছে এতে ধর্মান্তরিত হলে হিন্দু নারী-পুরুষ সম্পত্তির অধিকার হারাবেন। কারণ বাংলাদেশ লজ রিভিশন অ্যান্ড ডিক্লারেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এ ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনটি বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করেনি বলে জানান বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।

বৃহস্পতিবার ‘খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন-২০২০’ নিয়ে অনলাইন এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেই সেমিনারে এ কথা বলেন হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। জাতীয় পর্যায়ে হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগ কোয়ালিশন এই খসড়া তৈরি করেছে।

হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি বলেন, সম্পত্তির অধিকার হিন্দু নারীদের দিলে জোরপূর্বক ধর্মান্তর বেড়ে যাবে, ধারণাটি ঠিক নয়। বাংলাদেশ লজ রিভিশন অ্যান্ড ডিক্লারেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এ ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনটি বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করেনি। তবে হিন্দু নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই আইন প্রণয়নে কোনো বাধা নেই।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, বেদ যুগে নারীর সমমর্যাদায় স্থান পেয়েছিল। এখনো পাওয়া উচিত। হিন্দু নারীর সম্পত্তির অধিকারে বাধা সনাতন পন্থা। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, সনাতনপন্থীরাই এই ধর্মের মূল চালিকাশক্তি। ধর্মান্তরিত হলে নারী সম্পত্তি পাবে কি পাবে না, এটি সমাধান হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত ওয়েবিনারে বক্তব্য রেখেছেন বাংলাদেশ হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, সংসদ সদস্য আরোমা দত্ত, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টান মহিলা ঐক্য পরিষদের দিপালী চত্রুবর্তী।

বর্তমান আইনে বিধবা নারীরা জীবনস্বত্বে যে সম্পত্তি পান, তা তিনি বিক্রি বা উইল করতে পারেন না। ভারত ১৯৫৬ সালে ‘হিন্দু সাকসেশন এ্যাক্ট’ পাশ করেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে হিন্দু নারী ও পুরুষের উক্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অংশ নিশ্চিত করেছে। এবং পরবর্তীতে ২০০৫ ও ২০০৭ সালে তারা আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও যুগোপযোগী করেছে।

বাংলাদেশের সংবিধান-১৯৭২ এর ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ-১৯৭৯ এ বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষর করেছে। যেখানে নারীর অধিকার ভোগ ও চর্চার প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার কথা বলা হয়েছে। অথচ সম্পত্তিতে সমান অধিকার না থাকার কারণে হিন্দু নারী ও মেয়েরা বিভিন্নভাবে বঞ্চনা, বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিন্দু নারীদের এই বৈষম্যমূলক অবস্থা বিবেচনা করে ২০১৮ সালে ২৮ এপ্রিল জাতীয় লিগ্যাল এইড দিবস, জন্মাষ্টমি সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হিন্দু নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানিয়েছেন হিন্দু উত্তরাধিকার আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় এ উদ্যোগ।

এ প্রস্তাবনাটি নিয়ে সাতটি বিভাগীয় শহরে হিন্দু আইনজীবী সহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি, হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে এবং তাদের মতামত খসড়া আইনটিতে যুক্ত করা হয়েছে।

ওয়েবিনারে ‘খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন’ প্রণয়নের প্রেক্ষাপট আলোচনা করেন এমজেএফের পরিচালক রীনা রায়, আইনটি সংক্রান্ত প্রস্তাবমা উপস্থাপন করেন এমজেএফের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস, বাংলাদেশে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন না থাকার ফলে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কথা বলেছেন নারীপক্ষের রীতা দাস রায়, কেইস স্টাডি উপস্থাপন করেছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ডেপুটি ডিরেক্টর নীনা গোস্বামী, ডেপুটি ডিরেক্টর, খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন প্রণয়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেছেন ব্লাস্টের এডভাইজার এডভোকেট তাজুল ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের আলোকে উত্তরাধিকার আইন বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ময়না তালুকদার, সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন:

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সভাপতিত্বে অনলাইনে ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।

-কেএম

FacebookTwitter