জাতীয় সম্পদঃ
ঢাকার জনগনের স্বপ্নের মেট্রোরেলের ছয়টি কোচের প্রথম ট্রেন দেশে এসে পৌঁছেছে। মেট্রোরেলের কোচ বহনকারী জাহাজটি বুধবার (৩১ মার্চ) মোংলা বন্দরে ভিড়েছে।

বগিগুলো খালাস করে বার্জে তোলার কাজও শুরু হয়েছে হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ।

জাপানের কোবে বন্দর থেকে ছেড়ে আসা এমভি এসপিএম ব্যাংকক বিকেল ৪টায় মোংলা বন্দরে পৌঁছায়। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এই ট্রেনের কোচের সংখ্যা ছয়টি। এগুলো আলাদা আলাদা আচ্ছাদন দিয়ে মুড়িয়ে আনা হয়েছে। বার্জে তোলার পর শুল্ক কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা হবে। এতে ১০ দিন সময় লাগতে পারে। এরপরই ঢাকার পথে রওনা হবে। উত্তরার কাছে নদীতে এসে থামবে। সেখান থেকে বড় ট্রলিতে করে উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে রাখা হবে।

ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৮ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এ বি এম আরিফুর রহমান জানান, মেট্রোরেলের লাইন-৬ কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৮ এর আওতায় ২৪টি যাত্রীবাহী কোচ আমদানি করা হবে। ছয়টি কোচের একটি প্যাকেজের ভ্যাট এবং শুল্ক সহ প্রায় ১০০-১০৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আবহাওয়া এবং করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে প্রতি মাসে ছয়টি করে কোচ মোংলা বন্দরে আসবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে জাপানে থাকা অবস্থায় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ উপস্থিত থেকে কোচগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে পারেনি। তৃতীয় পক্ষের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করেছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা তা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এখন উত্তরার ডিপোতে এলে ডিএমটিসিএলের বিশেষজ্ঞরা পুনরায় ১৯ ধরনের বড় পরীক্ষা করবেন। এরপর কোচগুলো জোড়া দেওয়ার পর শুরু হবে পরীক্ষামূলক চলাচল। এ জন্য ডিপো থেকে পল্লবী পর্যন্ত মেট্রোরেলের লাইন, সংকেতব্যবস্থা ও স্টেশন অবকাঠামো প্রস্তুত করা হচ্ছে।

জাপানের কাওয়াসাকি–মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। দুপাশে দুটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে ট্রেনের সেটগুলো তৈরি হচ্ছে জাপানে। এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে পাঁচ সেট ট্রেন, যার প্রথমটি দেশে এসে পৌঁছেছে।

দ্বিতীয় সেট ট্রেনটি জাপান থেকে ১৫ এপ্রিল রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি পৌঁছাতে পারে ১৬ জুন। আর তৃতীয় ট্রেনটি ১৩ জুন রওনা দিয়ে ১৩ আগস্ট পৌঁছাতে পারে। বাকি দুটি সেটের আসার সময়সীমা এখনো ঠিক হয়নি।
মেট্রো ম্যাস রেপিড ট্রানজিট-এমআরটি-৬ রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল ১০ কিলোমিটার। দুই অংশে ভাগ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

প্রাথমিকভাবে কাজ শেষ করার ডেডলাইন ভিন্ন নেওয়া হয়েছিলো। মিরপুর অংশের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিলো ২০২১ সালের মধ্যেই। আর মতিঝিল অংশের ডেডলাইন ছিলো ২০২৩ সাল। তবে সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে পুরো প্রায় সাড়ে ২১ কিলোমিটার মেট্রোরেল শেষ করা হবে। আর নতুন ডেডলাইন মিট করতে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।

দেখতে কেমন হবে মেট্রোরেলের ট্রেন সেট
মেট্রোরেল ট্রেন সেট জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙে রঙ করা থাকবে। ট্রেন সেটের বডি এবং ভিতরের কাঠামোর সবকিছুই স্টেনলেস স্টিলে তৈরি করা হচ্ছে। কোচে ব্যবহৃত গ্লাসগুলো থাকবে বুলেটপ্রুফ।

আরও পড়তে পারেন:

একেকটি কোচে ১ হাজার ৭৩৮ জন যাত্রী যেতে পারবেন। যাত্রী যাতে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারেন সে ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি কোচের দুদিকে চারটি দরজা থাকবে। ট্রেনে সিটগুলো লম্বালম্বি পাতা থাকবে প্রতিটি কোচে প্রতিবন্ধী কিংবা বয়ঃবৃদ্ধদের যারা বসতে পারবেন না তাদের জন্য থাকবে দুটি করে হুইলচেয়ার।

প্রতিটি কোচেই হুইলচেয়ার রাখার ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি ট্রেনে ৬টি কোচের মধ্যে একটি কোচ শুধুমাত্র নারী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। বাকিগুলোতে নারী পুরুষ উভয়ই একসঙ্গে যেতে পারবেন।

-কেবি

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily