জাতীয়ঃ
উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হল নির্মাণে সরকার এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চলচ্চিত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য তার সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আজ ১৭ জানুয়ারি, রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৯ বিতরণী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র বাংলাদেশে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। সবার যেন কল্যাণ হয় সেই লক্ষ নিয়েই চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট নীতিমালা করা হয়েছে।’
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যেন দেশের বাইরেও যেতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের মান রক্ষা করে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। সেইসাথে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারেরও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এক হাজার কোটি টাকার ফান্ড তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে বন্ধ সিনেমা হলগুলো চালু ও আধুনিকায়ন করা হবে।’
বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘(বঙ্গবন্ধু) বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু সম্পন্ন করে যেতে পারেননি।
১৫ আগস্ট আমাদের জীবনটাকেই পালটে দিয়েছে। এরপর বাঙালির সংস্কৃতিটাই নষ্ট হতে বসেছিল। জাতীর পিতার অধরা কাজগুলো সম্পন্ন করাই আমাদের দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই শিল্প নষ্ট হয়ে যাক তা আমরা চাই না। সিনেমাগুলো সেভাবেই তৈরি করতে হবে যেন পরিবার নিয়ে দেখা যায়। শিশুদের জন্যও সিনেমা তৈরি করতে হবে যেন তারা সিনেমা দেখে শিক্ষা নিয়ে জীবনকে প্রস্তুত করতে পারে।’
সকাল ১০টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৯-এর আসর।
এবার ২৬টি শাখায় শিল্পী, কলাকুশলী, প্রতিষ্ঠান ও চলচ্চিত্রকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য অভিনয়শিল্পী মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ও সুচন্দাকে দেয়া হয় যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পী ও কলাকুশলীদের হাতে পুরস্কার তুলে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত তহবিল শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ তহবিল চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী দিনই শুধু নয়, চলচ্চিত্র শিল্প একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে, আমাদের চলচ্চিত্র দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্ব বাজারেও একটি স্থান করে নিতে পারবে।’
যারা সম্মাননা ও পুরস্কার পেলেন :
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৯-এর আসরে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ও কোহিনূর আক্তার সূচন্দা। আর যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে “ন’ ডরাই” ও “ফাগুন হাওয়ায়”। শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে “নারী জীবন” ও শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র হয়েছে “যা ছিলো অন্ধকারে”।
“ন’ ডরাই” চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক হয়েছেন তানিম রহমান অংশু। “আবার বসন্ত” সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছেন তারিক আনাম খান। আর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল (ন’ ডরাই)।
এছাড়া শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু (ফাগুন হওয়ায়), শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী : নারগিস আক্তার (মায়া- দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা জাহিদ হাসান (সাপলুডু), শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছে যৌথভাবে নাইমুর রহমান আপন (কালো মেঘের ভেলা) ও আফরীন আক্তার (যদি একদিন)।
এবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ইমন (মায়া- দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হাবিবুর রহমান (মনের মতো মানুষ পাইলাম না), শ্রেষ্ঠ গায়ক মৃণাল কান্তি দাস (তুমি চাইয়া দেখো- শাটল ট্রেন), শ্রেষ্ঠ গায়িকা হয়েছেন যৌথভাবে মমতাজ বেগম (বাড়ির ওই পূর্বধারে- মায়া- দ্য লস্ট মাদার) ও ফাতিমা-তুয যাহুরা ঐশী (মায়া, মায়ারে- মায়া- দ্য লস্ট মাদার)।
আর শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পুরস্কার পেয়েছেন নির্মলেন্দু গুণ (ইস্টিশনে জন্ম আমার- কালো মেঘের ভেলা) ও কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী (চল হে বন্ধু- মায়া- দ্য লস্ট মাদার)। এছাড়া শ্রেষ্ঠ সুরকার হয়েছেন প্লাবন কোরেশী (বাড়ির ওই পূর্বধারে- মায়া দ্য লস্ট মাদার) ও তানভীর তারেক (আমার মায়ের আঁচল- মায়া দ্য লস্ট মাদার)।
“মায়া-দ্য লস্ট মাদার” চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন মাসুদ পথিক। আর “ন’ ডরাই”-এর চিত্রনাট্যকার মাহবুব উর রহমান হয়েছেন শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার।
এছাড়া শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা জাকির হোসেন রাজু (মনের মতো মানুষ পাইলাম না), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক জুনায়েদ আহমেদ হালিম (মায়া- দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বসু ও ফরিদ আহমেদ (মনের মতো মানুষ পাইলাম না), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক সুমন কুমার সরকার (ন’ ডরাই), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক রিপন নাথ (ন’ ডরাই), শ্রেষ্ঠ পোষাক ও সাজ-সজ্জা খন্দকার সাজিয়া আফরিন (ফাগুন হাওয়ায়), শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান হয়েছেন রাজু (মায়া- দ্য লস্ট মাদার)।
-ডিকে