বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিঃ
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি উপকারভোগীদের কাছে প্রেরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভাতার ৭৫ শতাংশ টাকা বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব নুরুজ্জামান আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব মো. আশরাফ আলী খান খসরু, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
বাংলাদেশ সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর দুস্থদের মাঝে হাজার হাজার কোটি টাকার ভাতা বিতরণ করে থাকে। সরকার থেকে ব্যক্তিকে (জি-টু-পি) পাঠানো এই সহায়তা কার্যক্রমে ইতিমধ্যে ২১টি জেলায় ৭৭টি উপজেলায় ১২ লাখ ৩৭ হাজার উপকারভোগীর কাছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতার অর্থ বিতরণ করেছে সরকার।
মোট ৮৮ লাখ ৫০ হাজার উপকারভোগীর বাকি ৭৬ লাখ ১৩ হাজার উপকারভোগীকে টাকা পৌঁছে দেবে ‘নগদ’ ও অপর একটি এমএফএস।
এই পদ্ধতিতে ভাতা বিতরণের জন্যে গত বছরের শেষের দিকে সরকার আট বিভাগের আটটি ইউনিয়নে ডেমো করে, যার ভিত্তিতে সরকার ‘নগদ’ এর মাধ্যমে ভাতার ৭৫ শতাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়।
‘নগদ’ এর বিতরণ করা এই ৭৫ শতাংশ উপকারভোগী দেশের ৪০টি জেলার বাসিন্দা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবচেয়ে নিরাপদে সরকারি ভাতা জনগণের মাঝে বিতরণের ক্ষেত্রে ‘নগদ’ একটি উদহারণ তৈরি করেছে। ‘নগদ’-এর উপর সরকারের আস্থার প্রতিদান হিসেবেই দুস্থদের মাঝে ভাতা বিতরণে তিন-চতুর্থাংশ ভাতা ‘নগদ’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে।
সরকারি এই ভাতা ক্যাশ আউট করতে উপকারভোগীকে অতিরিক্ত কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না। সরকার মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটর ‘নগদ’-কে প্রতি হাজারে ৭ টাকা ক্যাশ আউট চার্জ দেবে, বাকি টাকা ‘নগদ’ বহন করবে।
যার ফলে সরকারি ভাতা ক্যাশ-আউট করতে ভাতাভোগীকে কোনো অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে না।
চলতি বছর সরকার মোট চারটি কর্মসূচির আওতায় এই ভাতা প্রদান করবে, যেখানে সরকারের মোট বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ৫ হাজার ৮৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
এই চারটি কর্মসূচির মধ্যে বয়স্কভাতাভোগী ব্যক্তির সংখ্যা ৪৯ লাখ, যেখানে সরকারের বরাদ্দ ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৫০ হাজার, যার পেছনে সরকারি বরাদ্দ ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি ভাতা বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করবে সরকার।
এই চারটি খাতে ৮৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বিপরীতে সরকার ৫ হাজার ৮৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বিতরণ করবে।
এর আগে করোনা মহামারির সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ লাখ অসহায় পরিবারকে এমএফএস-এর মাধ্যমে ঈদ উপহার বিতরণ করেন যার মধ্যে ১৭ লাখ পরিবারের ‘নগদ’-এর মাধ্যমে উপহার পায়।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিশেষ করে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভাতা বিতরণকে আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশনের বড় নজির বলে মন্তব্য করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, “সরকারি সেবা যে কতটা বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা তৈরি করেছে, তার প্রমাণ হচ্ছে ‘নগদ’। প্রযুক্তিগতভাবে ‘নগদ’ এতটাই দক্ষ যে জনগণের সঙ্গে সরকারি সমস্ত আর্থিক লেনদেনই ডাক বিভাগের এই সেবা করে দিতে পারে। অন্তত একেটি ক্ষেত্রে সরকারকে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দান করার জন্য আমি ‘নগদ’-কে ধন্যবাদ জানাই।”
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এম.পি, বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভাতা বিতরণের যে ডেমো আমরা করেছি সেখানে আমরা খেয়াল করেছি ‘নগদ’-এর প্রযুক্তি খুবই আধুনিক এবং তাদের সেবার কলেবরও অত্যন্ত বিস্তৃত। আশা করছি এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে কম সময়ে, সঠিক মানুষটির হাতে সরকারের কাঙ্ক্ষিত ভাতা পৌঁছে যাবে।”
সমাজকল্যাণ সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর ভাতা বিতরণের ক্ষেত্রে আজ আমরা নতুন একটি অধ্যায়ের শুরু করলাম। আর সেখানে সরকারি একটি সেবা কোম্পানিকে আমরা পাশে পেয়েছি এটি সত্যিই আমাদের কাছে বিস্ময়কর ছিল। ‘নগদ’-কে ধন্যবাদ।”
‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, “আমাদের জন্য এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা সব সময়ই দেশ ও দেশের জনগণের কথা মাথায় রেখে আমাদের সেবাগুলোকে সাজিয়েছি। সে কারণেই অল্প সময়েই আমরা সরকার ও জনগণের ভালোবাসা পেয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, ‘নগদ’ সরকারের পুরো ভাতা বিতরণ ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করবে এবং জনগণ ও কোনো রকম ঝক্কি ছাড়াই তাদের প্রাপ্য বুঝে পাবে।”
-শিশির