জাতীয়ঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোকে নিজেদের আয়ে ব্যয় নির্বাহের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারি সংস্থা যেগুলো ব্যবসার জন্য তৈরি করা হয়েছে যেমন ব্যাংক, বীমা, বিমান, বিটিসিএল- এগুলো নামেই কোম্পানি। তাদেরকে ভর্তুকি দিয়ে চালানো অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা যেন নিজেরা নিজেদের খরচ চালাতে পারে।’
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমনন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সভায় যুক্ত হন।
একনেক সভাশেষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে এ কথা জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সভায় অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন (১ম পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানি হওয়ার পরেও সরকারি বরাদ্দে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও এরা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সরকারি প্রতিষ্ঠান যেগুলো ব্যবসা করছে, তারা যেন নিজেদের আয় থেকে ব্যয় করে।
একনেক সভায় মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ১টি সংশোধিত। নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ ও সংশোধিত প্রকল্পে বাড়তি বরাদ্দ মিলিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৯০১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৮ হাজার ৯৯১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক উৎস হতে ঋণ ২ হাজার ৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৮০৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
সভায় উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম (২য় পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আওতায় ১৮৬টি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রতিটি উপজেলায় উন্মুক্ত খেলার মাঠ তৈরি করা হবে। স্টেডিয়ামের মতো ঘেরা থাকবে না, হাঁটার ও বসার জায়গা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এগুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। কোন রিজার্ভ থাকবে না। কোনো ক্লাবের বা ব্যক্তির আওতায় থাকবে না। ইউএনওরা এগুলো দেখভাল করতে পারবে। কিন্তু সবাই খেলার অধিকার পাবে, উন্মুক্ত রাখতে হবে।
সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প এবং ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প।
তিনি বলেন, প্রকল্প দুটির বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে খাল খননের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সাবধান হতে সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ার করেছেন। কারণ, খাল খননের ক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিয়ম যেন না হয় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সাবধান করেছেন।
সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ১ হাজার ৩৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ১৯৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা খরচ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংশোধনীতে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কাজ শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাগিদ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলছে এটা, তাড়াতাড়ি শেষ করুন। আর কত দিন নেবেন? প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, কোরিয়ান একটি কোম্পানি ২০১৪ সালে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল।
২০১৯ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তখন এক বছর সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু গতবছর করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার কোরিয়ানরা দেশে ফিরে যায়। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আরো দেড় বছর বাড়ানো হয়েছে।
সভায় ৯১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সাইনবোর্ড-মোড়েলগঞ্জ-রায়েন্দা-শরণখোলা-বগী সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পানগুচি নদীর উপর পানগুচি সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রায় ৪শ কোটি টাকা ঋণ দেবে।
একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো-৫২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৩৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাঙ্গামাটি জেলার কারিগর পাড়া হতে বিলাইছড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প, ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও চাঁদপুর জেলারগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৩ হাজার ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ) প্রকল্প।
করোনার টিকা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহে সরকার বসে নেই। ভারতের বিকল্প চ্যানেল থেকে টিকা সংগ্রহের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ভারতের প্রতি আমাদের সমবেদনা আছে। আমরা পারলে তাদের সহায়তা প্রদান করবো। ভ্যাকসিন মিলছে না। অক্সিজেন মিলছে না। আশা করছি, এই অবস্থা আমাদের এখানে হবে না। ভারতের অবস্থা দেখে আমরা শিখছি।
-বাসস