অর্থনীতিঃ
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, বললেণ অর্থমন্ত্রী।
আজ গৌরবময় বিজয় দিবস।
১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বিজয়ের অনুভূতি সবসময়ই আনন্দের।
তবে একই সঙ্গে দিনটি বেদনারও, কেননা অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে।
জনবহুল ও সীমিত সম্পদের এ দেশকে স্বয়ম্ভর করে তোলার কাজও সহজ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কঠিন দিনগুলোয় রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র চালু করতে হয়েছিল।
এরপর আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই মোকাবেলা করতে হয়েছে। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে। তবে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ রক্ষায় হতে হবে যত্নবান। আমাদের সামনে সম্ভাবনা অসীম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সমস্যা মোকাবেলায় সচেষ্ট হলে আমাদের অগ্রগতি ঘটবে দ্রুত। আমরা সে পথেই অগ্রসর হব- এই হোক বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।
আজ সোমবার বিকালে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ কর্তৃক মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্মাদক মুজীবুল হক মুজীব, জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি হাজী ইলিয়াস মিয়া, সহ সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মুন্নি আক্তার মুন্নি এবং জেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি হাসিনা আক্তারসহ প্রমুখ।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে সুন্দর সময় আমরা এখন পার করছি। গত দুই দশকে পৃথিবীতে কয়েকবার অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে সারা বিশ্বে যে মহা অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল তাতে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার বেশ কিছু দেশ চরম অবস্থায় পতিত হয়। আর ২০০৮ সালের বিপর্যয়ে খোদ আমেরিকাসহ অনেক দেশে চরম অবস্থার সষ্টি হয়। কিন্তু তখনও আমাদের অর্থনীতি বিপর্যের সম্মুখীন হয়নি। এখন পৃথিবীতে তৃতীয় চরম অবস্থা বিরাজ করছে আর সেটি হচ্ছে তথাকথিত বানিজ্য যুদ্ধ। চলমান এই বানিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে সারাবিশ্বের অথনীতিতে নিম্নমুখীতা দেখা দিয়েছে। এতে চীনের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক চার শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমে গেছে, কিন্তু বাংলাদেশের অথনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে অর্থনৈতিক খাতে উন্নতি সাধন করেছ চলেছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। গত অর্থবছরে আমরা ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। চলতি অর্থবছরেই আমরা ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি, যা ২০২৪ সাল নাগাদ দাড়াবে ১০ শতাংশ এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। বিশ্বে যে কয়েকটি দেশের রপ্তানি আয় খুব দ্রুত বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, ক্ষুদা ও দারিদ্রের হার কমে হার কমেছে পূর্বের তুলনায় অনেক। এটাকে কোন কল্প কাহিনীর মত মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। এতে সবচেয়ে বড় অবদান বাংলাদেশের মানুষের। কেননা আমাদের উৎপাদন আর চাহিদা আমাদের নিজেরাই তৈরি করি। ফলে আমাদের আর্থিক খাতে এই মুহুর্তে কোন রকম ঝুঁকি নেই। আমাদের রয়েছে কর্মদক্ষ ভবিষ্য যুবশক্তির সম্ভাবনা।
২০৩০ সাল নাগাদ ৩ কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং তখন কারোর কর্মসংস্থানের অভাব থাকবে না। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্ব সেরা। দেশের সার্বিক অগ্রগতির রুপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সকল স্তরের সকল পেশা ও শ্রেণীর মানুষের অবদান রাখছেন।
এরপরে মাননীয় অর্থমন্ত্রী সকালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সহায়তায় অর্থ অনুদান চেক বিতরণ করেন। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এসব অনুদান বিতরণ করা হয়।
অনুদান বিতরণে আরো উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার, লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বি.কম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিয়া মোহাম্মদ কিয়াম উদ্দিনসহ প্রমুখ।
-শিশির