মিলি সুলতানা, কুইন্স, নিউইয়র্ক থেকেঃ

সন্তান জন্ম দেয়ার পর তাকে একটু স্পর্শ কর‍তে পারেননি মা ফওজিয়া হানিফ আলি। ২০১৯ সালে ফওজিয়ার প্রথম গর্ভপাত ঘটে।

মা হতে পারার অপার আনন্দ প্রত্যেক মেয়ের কাছে খুব কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু যখন স্বপ্ন ভেঙে যায় তখন একজন নবাগতা মায়ের মানসিকভাবে ভেঙে।

ফওজিয়ার বেলাতেও তাই হয়েছিল। স্বামী ওয়াজিদ আলি জানালেন, ফওজিয়ার মানসিকভাবে উচ্ছল হয়ে উঠেছিলো দ্বিতীয়বার প্রেগন্যান্ট হয়ে।

খুবই স্বাস্থ্যসচেতন ফওজিয়া টাইম টু টাইম হাসপাতালে যেতেন চেক আপ করতে। গর্ভের বাচ্চা ঠিক আছে কিনা, তার হার্টবিট চলছে কিনা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতেন।

তিনি বার্মিংহাম ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রোবেশন সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন।

রুটিন চেক আপের এক পর্যায়ে ফওজিয়ার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ডাক্তার তার ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেন। ৩১ সপ্তাহের বাচ্চাকে সিজারিয়ান অপারেশন দুনিয়ার আলো বাতাসে নিয়ে আসা হয়। তার নাম রাখা হয় আয়ান আলি।

সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু আয়ানকে দেখার সৌভাগ্য কিন্তু ফওজিয়ার হয়নি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে আলাদা রাখা হয়। তবে নার্স সুন্দর একটা কাজ করেন।

শিশু আয়ানের ছবি তুলে প্রিন্ট করে তার মাকে দেখানো হয়। ছবিতে হাত বুলিয়ে চোখের জলে ভাসেন ফওজিয়া।

সন্তান জন্মদানের চতুর্থ দিনে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তিনি কোমায় চলে যান। তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিলো।

ষষ্ঠ দিনে ফওজিয়ার ভেন্টিলেটর খুলে নেয়া হয়। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করা হয়।

শিশু আয়ান তার বাবার কাছে আছে। স্ত্রীকে হারিয়ে অকস্মাৎ শোকে হতভম্ব ওয়াজিদ আলি। ফওজিয়ার নিজ হাতে সাজানো বাচ্চার রুমটি এখনো সেই অবস্থাতেই আছে। খেলনা পুতুলে ভর্তি রুমটা। রুমের দেয়ালে মিষ্টি গোলাপি রঙ লাগিয়েছেন। কিন্তু সন্তানকে কোলে নিয়ে এই রুমে আসার ভাগ্য তার হয়নি। ২৯ বছর বয়সে জীবনের পাততাড়ি গুটিয়ে নিতে হয় ফওজিয়াকে।

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily