সুমি ইসলামঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক মা। মায়ের কোনো তুলনা হয় না। সন্তানের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, তাকে দেখাশোনা, তাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা- সব, মায়ের হাতেই হাতেখড়ি। মায়ের সঙ্গে সন্তানের এই সম্পর্ক সৃষ্টির শুরু থেকেই।

মা হাজার ব্যস্ত থাকলেও সন্তানের জন্য থাকে তার অফুরন্ত সময়। মা তার সন্তানকে তার সর্বোচ্চ দিয়ে ভালোবাসেন।মা ছেলে পৃথিবীর এক মধুর সম্পর্ক। মা ছেলে সম্পর্কের তুলনা কোন কিছু দিয়েই দেওয়া সম্ভব নয়। পৃথিবীতে একটি মাত্র প্রিয় শব্দ ‘মা’ যা ভাবতেই প্রতিটি মানুষের হৃদয় গহীনে এক অনন্য পবিত্র ভালোবাসার অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে। নারী জীবনের সর্বোচ্চ সার্থকতাই যেন এই শব্দের মাঝে লুকায়িত।

একজন নারী যখন মাতৃত্বের স্বপ্নকে আলিঙ্গন করেন তখন থেকেই নিজেকে তার সন্তানের জন্য উৎসর্গ করার স্বপ্ন দেখেন। এই উৎসর্গে তার ঘাম ঝড়ানো কষ্ট যেন কিছুই নয়। বাবা মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু্ হতে পারে না। এ সম্পর্ক খারাপ হলে পরিবারে নানা জটিলতা আর অশান্তির সৃষ্টি হয় ছোটবেলায় শিশুরা বেশির ভাগ সময় মায়ের সাথেই থাকে । তাই বলে যে ,মা ছেলে সম্পর্ক পরেও ভালো থাকবে এমন গ্যারান্টি কেউ কখনও দিতে পারে না।!

সব সময় সম্পর্ক ভালো এবং সুন্দর সম্পর্ক রাখার জন্য অবশ্যই সে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে আর সেটা করতে হবে ছোটবেলা থেকেই ৷ মা ছেলে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ থাকতে হবে শিশু জন্মের পর থেকেই। সন্তানের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা বাবা এবং মায়ের সমান দায়িত্ব,এতে ছেলে মেয়ে সহজ হয়ে ওদের দুঃখ কষ্ট ও সমস্যার কথা জানাতে দ্বিধা করবেনা। সংসারে ছোট-খাট বিষয় নিয়ে সন্তানের সাথে আলোচনা করা উচিত । সে কোন অপরাধ করলে ভয় দেখিয়ে বা বকাঝকা দিয়ে নয় ,বরং সে বিষয়ে তার সাথে সরাসরি আলোচনা করা উচিৎ। পরিবারের সুখ-শান্তি রক্ষায় আলোচনার কোনো বিকল্প নেই ৷ তাই ‘‘শিশুকে শিশু না ভেবে একজন সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গণ্য করে আলোচনায় ওকেও অংশ নিতে দিন। শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং ওকে বলার সুযোগ দিন৷ এর মধ্য দিয়ে আপনার সন্তানটিও বুঝবে যে সে পরিবারের একজন সদস্য এবং ওর মতামতেরও মূল্য আছে৷ এতে শিশুর দায়িত্ববোধ এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাও বাড়বে’’৷

ভালো পিতা-মাতা হওয়াটা একটা কঠিন কাজ। আর সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলা আরও কঠিন। সন্তানের সাথে সু সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে আগে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করাতে হবে,যে তাকে আপনি অনেক ভালোবাসেন, আপনার পৃথিবীময় শুধুই তার বিচরন। সন্তানের বয়স যাই হোক না কেন। যদি কখনও সম্পর্কের অবনতিও হয় তবুও সন্তান যেন বুঝতে পারে তার জন্য তার বাবা-মার গভীর ভালবাসা রয়েছে । আপনার বিশ্বাস এবং ভালো উপলব্ধি সম্পর্কে সন্তানকে শিক্ষা দিন এবং নিজের ভালো গুণের সঙ্গে সন্তানকে পরিচিত করুন। যাতে তারা উদ্বুদ্ধ হয় এবং সন্তানদের জানার আগ্রহ বাড়াতে তাদের অফুরন্ত প্রশ্ন করার সুযোগ দিন। নিজের উপলব্ধি ও বিশ্বাস চাপিয়ে দেবের কোন দরকার নেই । সন্তানদের সঙ্গে একসাথে টিভি দেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সন্তানদের পছন্দকে শ্রদ্ধা করতে হবে। যদি আপনার তাদের পছন্দের মধ্যে যৌক্তিক না হয় তবে তাদের বুঝিয়ে মত বদলাতে চেষ্টা করতে হবে। জোর করবেন না। এমনকি সন্তানদের খাবার-দাবার, পোশাক নিয়েও শেয়ার করতে পারেন। সন্তানদের জন্য একটি বিশেষ সময় নির্ধারণ করুন যাতে তাদের সমস্যা ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ওয়ান টু ওয়ান শেয়ার করতে পারেন। অবস্থা বুঝে সন্তানকে হূদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক সময় সন্তানের চাহিদা ও বিশ্বাসের প্রতি যত্নবান হতে হবে। অনেক সময় সন্তানের কঠিন সিদ্ধান্ত বদলানো যায়, বিপথ থেকে সুপথে আনা যায়, প্রতিকূল মানসিকতা অনুকূলে আনা যায়। আর এজন্য পিতা-মাতার সহযোগিতা ও কৌশলী ভূমিকা খুবই দরকার। পাশাপাশি মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত: পিতা-মাতার আচরণ, অভ্যাস, কর্মকান্ড যেন সন্তানের কাছে অনভিপ্রেত মনে না হয় তাও পিতা-মাতাকে দেখতে হবে। কারণ সব সন্তানই তাদের পিতা-মাতাকে মহান আসনে দেখতে চায়। বৃতমানে সম্পর্কে দূরত্ব আনছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার,আনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একদিকে মা একদিকে বাবা আর অন্যদিকে সন্তান যে যার মতন, ফেসবুক, টিভি বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যাস্ত, এই বাজে অভ্যাসটা দুর করে সন্তানের সাথে বসে মজার অভিজ্ঞতার কথা বা মজার গল্প শেয়ার করলে সময়টা আনেক ভালো যাবে এবং সন্তানের সাথে সম্পর্ক আরো মধুর হবে।

গোপন নয় কোনো কিছু – কৈশোরে ছেলে মেয়েদের শরীরে নানা রকম পরিবর্তন আসে। হরমোনের কারণে তা ঘটে। ছেলেদের কণ্ঠে পরিবর্তন আসে। মেয়েরা গুটিয়ে নেয় নিজেদের। সন্তান বিষয়টি লুকিয়ে রাখে, আর অনেক মা-বাবা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে সংকোচ করেন। ফলে সন্তান ও মা-বাবার মধ্যে একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়।

সব সময় সন্তানের প্রাইভেসিতে নাক গলান, অভিভাবক সুলভ আচরণ করলে সে আপনার সঙ্গে মিশতে ভয় পেতে পারে। সন্তানের এমন অনেক বিষয় আছে যা আপত্তিকর, যা হয়তো সে আপনার সঙ্গে শেয়ার করেনি, অথচ আপনি কোনো ভাবে জানতে পেরে কিছু না জিজ্ঞেস করেই মারধর বা বকুনি শুরু করলেন, তা হলে তার মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাব দেখা দিতে পারে।

বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানের মনে উঁকি দেয় হাজার রকমের অনুভব। এর মধ্যে একটি যৌনতা। তখন যৌনতাকেন্দ্রিক বিষয় গুলোর সঙ্গে সে জড়িয়ে পড়ে। নাওয়া-খাওয়া, পড়াশোনা ভুলে এই রহস্যময় জগতে ডুবে থাকে। অনেকে হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত। সে খুঁজতে থাকে নির্জনতা। রাত জেগে মোবাইল ফোনে কথা বলে। পরিবার থেকে নিজেকে আলাদা ভাবতে থাকে। এই বয়সে সে একটু লাগাম ছাড়া চলতে চায়। তাকে এই আচরণ মোকাবেলা করতে শেখাতে হবে। মা-বাবাকে বোঝাতে হবে, তাঁরাই সন্তানের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়।

-শি

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily