শোভন বাংলাদেশের সন্ধানের ১৩ সিরিজের ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

শোভন বাংলাদেশের সন্ধানের ১৩ সিরিজের ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত
শোভন বাংলাদেশের সন্ধানের ১৩ সিরিজের ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

অর্থনীতি
গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সদ্য প্রকাশিত “বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে” গবেষণাগ্রন্থটির বিষয়বস্তুর উপর ১৩ সিরিজ জুম ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বৈষম্য হ্রাস ও শোভন সমাজ প্রতিষ্ঠাঃ রাষ্ট্র-সরকার টাকা পয়সা পাবে কোথায়? কালো টাকা, অর্থ পাচার, সম্পদ কর ইত্যাদি“- শীর্ষক ৯ম ওয়েবিনারিটি গতকাল ২২ মে, ২০২১ রোজ শনিবার সন্ধ্যা ৭:০০ টায় অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়েবিনারটিতে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, মুখ্য উপদেষ্টা, প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাক্তন গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক ; অধ্যাপক ড. একে এম মতিউর রহমান, জেপি মরগান চেজ এনডাউড প্রফেসর অব ফাইনান্স, ম্যাকনেজ স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ এবং অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন এ জেড এম সালেহ, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তার আলোচনায় বলেন বিশ্বব্যবস্থায় একটা অদ্ভুদ ব্যাপার হলো বিশ্বের নিরাপত্তা বিধানের প্রধান দায়িত্ব যে বৃহৎ শক্তিগুলোর- তারাই মানুষের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানোর কাজটি করছে।

বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ এবং যুদ্ধাস্ত্রের জন্য যে পরিমান ব্যয় করা হয় তার ১% টাকাও মানুষের জন্য ব্যয় করা হয় না। তিনি তার আলোচনায় উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশে ধনিক শ্রেণির বৃদ্ধির হার বিশ্বে সর্বোচ্চ, একই সাথে পরিবেশ দূষণের হারও সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশে বৃহৎ প্রকল্পগুলোর নির্মাণ ব্যয় বিশ্বে সর্বোচ্চ কারণ এর মধ্যে আছে ভয়াবহ দুর্নীতি যেটা সম্ভব হয় জবাবদিহিতার অভাবে।

তিনি বলেন বর্তমান শোভন সমাজ গড়তে হলে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করতে হবে, প্রাণবিনাশী বা ভুল প্রকল্পে (রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপপুর, মাতারবাড়ি ) অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করতে হবে কারণ এগুলো মানুষের দারিদ্র বৃদ্ধি করছে।

অধ্যাপক ড. একে এম মতিউর রহমান তার আলোচনায় বলেন পরিবেশকে উপেক্ষা করে উন্নয়নের দিকে ধাবিত হলে সে উন্নয়ন টেকসই উন্নয়ন হবেনা। শোভন সমাজের জন্য শোভন মানুষ লাগবে। মাথাপিছু আয় কখনো সমান হবেনা কিন্তু আয় বৈষম্য কিভাবে কমানো যায় এবং আয় বৈষম্য যেন লাগামহীন না হয় সেই লক্ষ্যে সরকারকে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

এই ওয়েবিনারের আলোচনায় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন বৈষম্যর সবচেয়ে খারাপতর রুপ হলো সুযোগের বৈষম্য। বাংলাদেশে আড়াই কোটি মানুষ কর দেয়ার যোগ্য কিন্তু কর দেন ২৫লক্ষ মানুষ। তিনি বলেন সমাজকে আরও শোভন করার জন্য শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে। কুদরত ই খুদার শিক্ষা কমিশনের আলোকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় একমুখী শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বড় অংশকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধাভোগী সম্পর্কে সরকারের কতটুকু নজর আছে এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই ।২৫ লাখ ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা দিতে ব্যাঙ্কের ম্যানেজাররা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তারা চেনা জানা লোকজনদেরই ঋণ দিতে ইচ্ছুক। এই সমস্যা সমাধানে বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, পিকেএসএফ দের প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতায়িত করতে হবে, প্রয়োজনে এসব উদ্যোক্তাদের ১% সুদে ঋণ দিতে হবে এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডের আশ্রয় নিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ৪৩০০০ ব্যাঙ্ক একাউন্ট হোল্ডারের হাতে এখন সমগ্র ব্যাঙ্ক আমানতের অর্ধেক পুঞ্জিভূত।

ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে ১৮ জন কালো টাকা, অর্থ পাচার, সম্পদ- কর ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং অধ্যাপক বারকাতের বই এর ভূয়োশী প্রশংসা করেন। আলোচকরা তাদের কাছে অংশগ্রহণকারীদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের প্রশ্নের উত্তর দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের ২০ বছরের গবেষণার ফসল “বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে” বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা। ৭৩৬ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটি সম্পর্কে অভিনন্দনবাণী দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি। কৃতজ্ঞতাপত্র, মুখবন্ধ ও মোট ১২টি অধ্যায় ছাড়াও বইটিতে আছে ২৭টি সারণি, ৩৯টি লেখচিত্র, তথ্যপঞ্জি ও নির্ঘণ্ট।

গ্রন্থ উপর আজ পর্যন্ত ৯ টি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনীতি সমিতি জানায় এই গ্রন্থটি নিয়ে আরো ৪ টি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে। যার বিষয়বস্তুসমূহ হচ্ছে ১। সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে কোভিড -১৯ এর অভিঘাত ২। জনগণের স্বাস্থ্য ৩। শোভন সমাজের লক্ষ্যে জাতীয় বাজেট ৪। শোভন সমাজ ও মূল ধারার অর্থনীতি।

অর্থনীতি সমিতির ১৩- সিরিজের ওয়েবিনারের “সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে কোভিড -১৯ এর অভিঘাত”- শীর্ষক পরবর্তী ওয়েবিনার জুমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯ মে শনিবার, সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় যা একইসাথে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ইউটিউব এবং ফেসবুক লাইভে সম্প্রচার করা হবে।

আগামী ওয়েবিনার কোভিড-১৯ এবং অর্থনৈতিক অভিঘাত – এ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যাপক ড. হায়দার আলী খান, ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়, ইউ এস এ ; অধ্যাপক জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার এবং হুমায়রা আহমেদ, সহযোগী গবেষক, বিআইডিএস ।

-শিশির

FacebookTwitter