উচ্চ শব্দ কম সময়ের জন্য হলেও তা শ্রবণ শক্তির জন্য ক্ষতিকর। ঢাকা শহর সহনীয় মাত্রার চেয়ে তিনগুন তীব্রতার শব্দদূষণে আক্রান্ত। এর ফলে প্রায় অধর্ কোটি মানুষ তীব্র স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
সকলের সচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশগত এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ শাহাবউদ্দিন, এমপি আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস ২০২১ উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত অনলাইন ওয়ার্কশপে এ কথা বলেন।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবীর এর পরিচালনায় কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।
প্রতিবছর এপ্রিল মাসের চতুর্থ সপ্তাহের বুধবার আন্তর্জাতিক শব্দসচেতনতা দিবস পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারন করা হয়েছে Protect Your Hearing, Protect Your Health বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে এ দিবস উদযাপন করা হয়। মানুষের শ্রবণ, স্বাস্থ্য ও জীবনমানের উপর শব্দের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো ও শব্দদূষণের বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণে কমিউনিটিকে উদ্বুদ্ধ করাই এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
সুচনা বক্তব্যে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, শব্দ দূষন বিষয়টি বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বর্পূন জনস্বাস্থ্য ইস্যু। সাম্প্রতকি সময়ে সরকার এবং পরবিশে বন ও জলবায়ু মন্ত্রনালয় পরবিশে অধদিপ্তররে মাধ্যমে শব্দ দূষন রোধ এবং এ বিষয়ে সার্বিক সচতেনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে। বিশেষ করে পথচারী, শিশু, নারী বৃদ্ধ ও ছাত্র ছাত্রীদের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার প্রতিকার বিষয়ে সমন্বিত র্কাযক্রম গ্রহন করছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ শাহাবউদ্দিন, এমপি বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরের শব্দদূষণ যে পর্যায়ে অবস্থান করছে তা খুবই আশংকাজনক। ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণ রোধে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন সড়ক নিরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের পরিবেশ উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিবেশ উন্নয়নে এবং বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার খাদ্য, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এমপি বলেন, আন্তর্জাতিক শব্দসচেতনতা দিবস ২০২১ উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হবে মানুষকে শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতন করা। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে উৎসাহিত করা। শব্দদূষণ রোধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে সচেতন করার সাথে সাথে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, শব্দদূষণ প্রতিরোধে মিডিয়াগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে শব্দের অপকারিতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। শব্দদূষণরোধে মানুষকে সচেতন করতে হবে, এডভোকেসি করা, মোটিভেট করা এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের কাজ করতে হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের সচেতন হতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান,এন ডি সি বলেন, শব্দদূষণকে প্রাথমিক পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব দেয়া হলেও সময়ের পরিক্রমায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকসমূহ লক্ষনীয়ভাবে দৃশ্যমান হওয়ায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ঠদের সচেতনতা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে শব্দদূষণের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আমাদের তেমন কোন গবেষনা বা তথ্য উপাত্ত নেই। প্রতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর কত শতাংশ শব্দদূষণের দ্বারা আক্রান্ত সে তথ্য জানা দরকার। এতে করে মানুষ আরো বেশি সচেতন হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) মো: মনিরুজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণ রোধে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সারা দেশে শব্দদূষণের অবস্থা সম্পর্কে গবেষণা করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ২০০৬ সালে শব্দদূষণ(নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করে উক্ত বিধিমালায় সকলঅঞ্চলকে ০৫টি জোনে বিভক্ত করে দিন এবং রাত্রে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সচিবালয়সহ বেশ কয়েকটি সড়ক নিরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
উক্ত কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন বিআরটিসি এর চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম, ডি আই জি হাইওয়ে পুলিশ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক মোঃ ফারুক আহমেদ, ঢাকা দাক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী , বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
-শিশির