মিলি সুলতানা, কুইন্স, নিউইয়র্ক থেকেঃ

মিশিগানের ডেট্রয়েটের লিসা ইওয়াল্ড (৫৩) গত কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে হেনরি ফোর্ড হেলথ সিস্টেমের রেজিস্টার্ড নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। করোনা রোগীর সংস্পর্শে গিয়ে লিসা অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত সপ্তাহে তার মাথাঘোরা শরীর ব্যথা ও বমি বমি ভাব শুরু হয়। তিনি তার সহকর্মীদের কাছে অসুস্থতার কথা প্রকাশ করেন। লিসা মনে করছিলেন তার করোনা টেস্ট হওয়া দরকার। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সহযোগিতা না করে বললেন, “করোনার সিম্পটম দেখা না যাওয়া পর্যন্ত টেস্ট করা যাবেনা।” চরম হতাশ হন লিসা। যেখানে জীবনের অর্ধেকটা সময় উৎসর্গ করেছেন, সেখান থেকে তার প্রতি অমানবিক আচরণে ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু স্মার্ট লিসা বুদ্ধি খাটিয়ে হতাশার রিএক্ট বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখে হাসিমুখে সেবাকাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। করোনা টেস্টের জন্য দুই দুইবার তাকে রিফিউজ করা হয়েছিলো। ডাক্তার নার্সদের পেশাগত জীবনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা সম্ভবত এটাই প্রথম।

ব্যাপারটা লক্ষ্য করেন তার এক বন্ধু এবং ভাগ্নি। বন্ধু চেয়েছিলেন অন্য জায়গায় তাকে নিয়ে করোনা টেস্ট করাতে। কিন্তু রাজি হননি অভিমানী লিসা। জেদ ছিল তার প্রচুর। লিসার ধারণায় ছিলনা যে তার অসুস্থতাকে গুরুত্ব দেয়া হবেনা। শক্ত আত্মসম্মানবোধ তাকে নুয়ে পড়তে দেয়নি। মনের কষ্ট মনে চেপে নিত্যদিনের ডিউটি করে যাচ্ছিলেন। সহকর্মীদের সাথে মন খারাপ করেছেন মৃত রোগীর বিষয়ে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কখনো কখনো তাকে বলতে হয়েছে, “He /she is no more………!” কলিগরা দেখেছে লিসার চোখ ছলছল করতো। মৃত রোগীর শরীর থেকে অক্সিজেনের যন্ত্রপাতি খুলে নেয়ার সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছেন লিসা ইওয়ার্ড। মৃত্যুর আগে লিসা তার বন্ধুকে ফোনে বলেছিলেন, “তোমার মত বন্ধু সবার ভাগ্যে জোটেনা।”

লিসা একজন Pet lover (পশু প্রেমিক) ছিলেন। একদিন ডিউটি থেকে ফিরে দরোজার লক খুলছিলেন। দেখতে পেলেন তার প্রতিবেশির পালিত কুকুরটি অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছে। প্রতিবেশী ছিলেন কর্মস্থলে। লিসা বাসায় আর ঢোকেননি। কুকুরটাকে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। কুকুরকে চিকিৎসা দেয়া হল, আইভি দেয়া হল। প্রতিবেশি যখন জানতে পারলেন লিসা তার অনুপস্থিতি বিশাল মহৎকাজ করেছেন। তিনি কৃতজ্ঞতা জানালেন। জবাবে লিসা বললেন, “আমরা আমাদের কাজে না এলে আকাশ থেকে কি এঞ্জেল নেমে এসে হেল্প করবে?” লিসার প্রতিবেশি অশ্রুপাত করেছেন সেই স্মৃতিচারণ করে। এমন দয়াশীল মানবিক মানুষটার সাথে যেভাবে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হল তা সত্যি কষ্টদায়ক। পৃথিবীর ভালো মানুষগুলোর সাথে অদৃষ্টের এমন পরিহাস কেন??
আগের রাতে কাজিন ব্রাদারের সাথে টুইটারে চ্যাট হয়েছিলো লিসার। এক বন্ধুর সাথে ফেসটাইমে কথাও হয়েছিলো। পরদিন তাকে আর হাসপাতালে দেখা যায়নি। ফোন করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। বাসায় এসে তালা ভেঙে দেখা যায় লিসার মৃতদেহ পড়ে আছে কার্পেটে।

জীবিত অবস্থায় করোনা টেস্ট ভাগ্যে না জুটলেও মৃত্যুর পর টেস্ট হয়। এবং রেজাল্ট আসে পজিটিভ।

-শিশির

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily