স্বাস্থ্যঃ
রাশিয়ার টিকা ‘স্পুটনিক-ভি’ জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) টিকার অনুমোদন নিয়ে ডাকা সভায় বলা হয়, টিকার জরুরি ব্যবহারে অনুমোদনের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জাতীয় কমিটি।
সুপারিশের প্রেক্ষিতে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেলে রাশিয়ার এই টিকা আমদানি ও ব্যবহারে আইনগত কোনও বাধা থাকবে না।
‘স্পুটনিক-ভি’ অনুমোদন পেলে দেশে অনুমোদন পাওয়া টিকার সংখ্যা দাঁড়াবে দুটি। বর্তমানে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ ব্যবহৃত হচ্ছে। টিকা গ্রহীতারা দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছেন।
রাশিয়া থেকে টিকা আনতে প্রক্রিয়া আরেকটু এগিয়েছে। রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট সংস্থা আরডিআইএফ বাংলাদেশকে ১৮ পাতার একটি চুক্তিপত্র পাঠিয়েছে। সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, কিনতে চাইলে রাশিয়া বাংলাদেশকে আগামী মাস অর্থাৎ মে থেকেই টিকা দিতে পারবে।
রাশিয়ার দাবি ‘স্পুটনিক-ভি’র কার্যকারিতা ৯১%। টিকাটি ৫০টির বেশি দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ এই টিকা নিয়েছেন।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন দিলে এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড—এই সাত দেশে ব্যবহারের অনুমোদন থাকলে সেসব ওষুধ, টিকা বা চিকিৎসাসামগ্রী বাংলাদেশে অনুমোদন দেওয়া হয়।
ধরে নেওয়া হয় বৈজ্ঞানিভাবে কার্যকর ও নিরাপদ বলেই এসব ওষুধ ও টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ওই দেশগুলো অনুমোদন দেয়। কিন্তু রাশিয়ার টিকাটি ওই সব দেশ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন এখনো পায়নি। সে কারণে টিকাটির বিশেষ অনুমোদন দরকার।
করোনার টিকা নিয়ে গঠিত কোর কমিটি রাশিয়ার ‘স্পুটনিক-ভি’ ও চীনের সিনোফার্মের টিকা সংগ্রহের জন্য প্রাথমিকভাবে সুপারিশ করেছে। কমিটি মোট সাতটি টিকা নিয়ে আলোচনা করে। এর মধ্যে চীনের সিনোভ্যাক ও সিনোফার্ম, স্পুতনিক-ভি, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা ছিল।
কমিটি বলছে, তারা নিরাপত্তা, কার্যকারিতা, সংরক্ষণের সুবিধা, দাম ও টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যবহারের সক্ষমতা বিবেচনায় চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার ‘স্পুটনিক-ভি’ টিকা দুটি সংগ্রহের প্রাথমিক সুপারিশ করে।
এদিকে গত রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন একটি চিঠি দেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিঠিতে সচিব জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা সংগ্রহের জন্য রাশিয়া বাংলাদেশকে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুরোধ করেছে।
দেশে ভারত থেকে টিকা আসা অনিশ্চয়তায় পড়ায় গণটিকাদান কর্মসূচিতে ছেদ পড়েছে। গতকাল সোমবার থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার জন্য মজুত সরকারের হাতে নেই।
এদিকে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে,মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে পৌঁছাবে আরও ২১ লাখ ডোজ টিকা। এর মধ্যে ২০ লাখই অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার, যা সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে আনছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। বাকি এক লাখ পাওয়া যাবে টিকার বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্স থেকে, এই টিকা ফাইজারের। চীন উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে তাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের তৈরি করোনার পাঁচ লাখ টিকা পাঠাতে চায়।
সে হিসেবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ কোভিশিল্ড, ফাইজার ও সিনোফার্মে মিলিয়ে ২৬ লাখ করোনা প্রতিরোধী টিকা পাচ্ছে।
-কেএম