রাজনীতিঃ
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ (সংশোধিত ২০০৯) এর ৯০ এর বি ধারা অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর মূলধারার কমিটিতে ৩৩% নারীর অন্তর্ভুক্তির সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
এই আইন অনুযায়ী, এ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি কমিটিতে এক তৃতীয়াংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। কিন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো এই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি নয়।
আজ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২০ উপলক্ষে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালরে আয়োজনে একটি বহুদলীয় সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকদের প্রতি দলগুলোর তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নারী ও পুরুষ নেতৃবৃন্দ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আরপিও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দলের কমিটিগুলোতে এক তৃতীয়াংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সম্মেলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নারী নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সামনে বাংলাদেশে রাজনীতিতে নারীদের প্রতিবন্ধকতাসমূহ চিহ্নিত করে তা উত্তরণের জন্যে নিম্নলিখিত সুপারিশমালা তুলে ধরেন।
ক) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ (সংশোধিত ২০০৯) এর ৯০ এর বি ধারা বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক মনিটরিং সেল গঠন করা। এই সেল রাজনৈতিক দলের মূলধারার কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে কিনা তা নিয়মিতভাবে মনিটর করবে।
খ) উক্ত ধারা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোতে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করা। এই সেল রাজনৈতিক দলের তৃণমূল কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে কিনা তা নিয়মিত মনিটর করবে।
গ) রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্র থেকে জেলার নেতৃবৃন্দের প্রতি এবং জেলা থেকে উপজেলার নেতৃবৃন্দের প্রতি চিঠির মাধ্যমে নারী অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
ঘ) তৃণমূলের কোন কমিটিতে কাঙ্খিত সংখ্যক নারী নেতা না থাকলে সেই কমিটির অনুমোদন না দেওয়া ।
ঙ) ২০২০ সালের মধ্যে মূলধারার কমিটিতে ৩৩% নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রত্যেক দলের নিজস্ব রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
চ) নারীর জন্যে দলের ভিতরে এবং বাইরে নিরাপদ এবং সহযোগিতামূলক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
ছ) নারীদের রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
এই সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রায় ১০০ নারী এবং পুরুষ রাজনৈতিক নতো অংশগ্রহণ করেন। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্ণেল ((অব:) ফারুক খান এমপি; বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ; জাতীয় পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কো- চেয়ারম্যান জনাব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, এবং বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আ্যডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডি’র ডিআরজি পরিচালক র্যান্ডল ওলসন এবং ডিএফআইডি বাংলাদেশের প্রধান জুডিথ হারবার্টসন।
সম্মেলনটি ইউএসএআইডি ও ইউকেএইড এর যৌথ অর্থায়নে `Strengthening Political Landscape in Bangladesh’ প্রকল্পের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসপিএল প্রকল্পের ‘নারীর জয়ে সবার জয়’ ক্যাম্পেইনের আওতায় সারাদেশে ২০,০০০ এর বেশি নারী নেতাদের সমন্বয়ে একটি ক্রমবর্ধমান বহুদলীয় নেটওয়ার্ক আছে যা আজ পর্যন্ত ৪৬৯টি তৃণমূল কমিটিতে ৫,৭৬৯ জন নারীকে অন্তর্ভুক্ত হতে সহায়তা করেছে।
-শিশির