ধর্ম, ইসলামঃ
রমজানের ফজিলত অপরিসীম। এই ফজিলত অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আমল করতে হয়, একই সঙ্গে ত্যাগ করতে হয় বেশ কিছু বিষয়ও।
রমজানে রোজা রাখার সময় ঘটে যাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বিরত থাকা দরকার এমন ১০টি বিষয় উপস্থাপন করা হলো-
১. সাহরি না খাওয়া: অনেকে সাহরি খান না, অনেকে আগ রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নাহ পরিপন্থী। কারণ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সাহরি গ্রহণ।’ –সহিহ মুসলিম: ২৬০৪
২. বিলম্বে ইফতার করা: সিয়ামের পূর্ণ সওয়াব পাওয়ার জন্য বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাহাবি হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ, ইহুদি-নাসারারা তা বিলম্বে করে।’ –সুনানে আবু দাউদ: ২৩৫৫
৩.মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা: একজন রোজাদার মিথ্যা কথা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ –সহিহ বোখারি: ৬০৫৭
৪. দান-সদকা না করা: পুণ্য অর্জনের মাস রমজান। এ মাসে রোজা-নামাজ ইত্যাদির পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরীব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ তারা হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ –সহিহ বোখারি: ১৯০২
৫. সুন্নাহ ত্যাগ করা: আমাদের প্রত্যেকটি আমল হবে সুন্নাহ মোতাবেক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে।’ –মুসনাদে আহমাদ: ৮৮৪৩
৬. লাইলাতুল কদর তালাশ না করা: রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ –সূরা কদর: ৪
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) (রমজানের) শেষ দশদিন লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ।’ –সহিহ বোখারি: ২০২০
৭.তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম করা: শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়লে কোরআনের হক আদায় হয় না। বিশেষ করে খতমে তারাবিতে খতম শেষ করা বা ২০ রাকাত তারাবি শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়।’ –সহিহ বোখারি: ৭৫২৭
৮. অপচয় ও অপব্যয় করা: প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপচয় করা থেকে বিরত থাকা। অনেকে রমজান মাসে ইফতার বা সাহরিতে এমন খরচ করেন যার প্রয়োজন নেই। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান কর এবং খাও, পান কর ও অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ -সূরা আরাফ: ৩১
৯. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা: ইবাদতের মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়াবি কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহতায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ -জামিউস সাগির: ৩৯৩৩
১০.ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা করা: সিয়াম পালনের সঙ্গে সঙ্গে ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতএব সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজেদের নামাজে অমনোযোগী।’ -সূরা মাউন: ৪-৫