অনলাইনঃ
শেখ রুবেল। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক করা, বিয়ে করাসহ নানা উপায়ে প্রতারণা করতেন তিনি। আর এসব করতেন তিনি সামাজিক যোগায়োগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে। এসব অভিযোগের কারণে সম্প্রতি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে শেখ রুবেলকে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার খারুয়া বড়াইল গ্রামের আব্দুল খালেক শেখের সন্তান শেখ রুবেল ফেসবুকে অনেক আইডি চালায়। কিন্তু সর্বশেষ মেডিকেলে কর্মরত এক তরুণীর কাছে ধরা খেলেন এই পাকা খেলোয়ার। নির্যাতনের শিকার হওয়া ওই তরুণীর মামলাতেই বর্তমানে কারাগারে আছেন রুবেল।
রুবেল জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে জানায়, ব্যক্তি জীবনে অসুখি থাকার কারণেই একের পর এক মেয়েদের টার্গেট করে ভালোবাসার অভিনয় করতেন। বন্ধুতা দিয়ে শুরু করে সঙ্গী করতেন বিছানা পর্যন্ত। এসব দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি।
তার প্রতারণার শিকার এক তরুণী জানায়, গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারিতে তার ফেসবুক আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান রুবেল। রিকোয়েস্ট কনফার্ম করার পরই ইনবক্সে হানা দিতে থাকেন তিনি। নিজেকে বিশেষ একটি বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। কারণে-অকারণে কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কি করছেন এসব প্রশ্ন করতে থাকেন তরুণীকে। বিরক্ত হয়েই মাঝে-মধ্যে রিপ্লে দিতেন তরুণী। এর মধ্যে ইউনিফর্ম পড়া বেশ কয়েক ছবি পাঠান তরুণীকে। এভাবে চলে বেশ ক’দিন। এভাবে দু’জনের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
এরপর দিনে-রাতে চ্যাট হতো, আদান প্রদান হয় ফোন নাম্বার। তারপর কথা হয় ফোনে। মাঝে-মধ্যে ভিডিও কলেও কথা হতো। এক পর্যায়ে বন্ধুতা থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমের এবং দু’জনের দেখা হয় টঙ্গীতে। দিনভর ঘুরে বেড়ান। একসঙ্গে খাবার খান। এর মধ্যেই রুবেল বিয়ে প্রস্তাব দিয়ে রাজি হয়ে যান তিনি।
সেই কথামত গত বছরের ১৩ এপ্রিল বাড়ি থেকে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে চলে যান গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট বাজারে। সেখান থেকে টঙ্গির একটি কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করেন তারা দু’জন। শুরু হয় নতুন সংসার।
কিন্তু এক সময় ভুক্তোভোগী তরুণী বুঝতে পারেন তার স্বামী শেখ রুবেল কোনো বাহিনীতে চাকরি করেন না। মূলত গাজীপুরের একটি পোষাক কারখানায় চাকরি করেন। এদিকে রুবেলের প্রতি পদক্ষেপেই তখন সন্দেহ বাড়তে থাকে তার। রুবেলের মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে হতভম্ভ হয়ে যান। সেখানে অসংখ্য নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ চ্যাট এবং ছবি। তখন থেকেই কলহ সৃষ্টি হয় দু’জনের মধ্যে।
গত বছরের নভেম্বরে কর্মক্ষেত্রে পরিচয় হয় স্বামী রুবেলের এক ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে। তখনই কঠিন সত্যটি ফাঁস হয়ে যায়। জানতে পারেন, তার আগেও তিনটি বিয়ে করেছেন রুবেল। ১০-১২ বছর বয়সের দুই বাচ্চাও আছে তার। এর কিছুদিন পর সিদ্ধান্ত নেন যা হওয়ার হয়েছে রুবেলকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন করে বাঁচতে হবে।
এবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি রুবেলকে ডিভোর্স দেয়ার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ফেসবুকে অন্তত তিন-চারটি আইডি থেকে শুরু হয় অশ্লীল প্রচারণা। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে ধারণ করা ছবি, ভিডিও চিত্র ওই তরুণী ও তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠাতে থাকেন।
তখন বাধ্য হয়েই ১ জুন ঢাকা মেট্টোপলিটনের শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন ভুক্তোভোগী ওই তরুণী। এরপর ৪ জুন সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেন অভিযুক্ত রুবেলকে।
পুলিশকে রুবেল জানান, প্রেম করেছেন অনেক নারীর সঙ্গে। এর মধ্যে বিয়ে করেছেন চার জনকে। তিন জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। মিথ্যা পরিচয়ে প্রেম, বিয়ে করার পর এর আগেও জেল খেটেছেন তিনি।
২০১৬ সালের গোপালগঞ্জের এক তরুণীকে একই ভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। এরপর তরুণী যখন সত্য জানতে পারলে রুবেলকে ডিভোর্স দিলে সেই তরুণীরও ধারণকৃত ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেন রুবেল। এ নিয়ে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হলে জেল খাটেন তিনি।
পুলিশকে রুবেল আরো জানায়, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ না হলেও দুজনই আলাদা থাকেন। এই সংসারে দু’সন্তান আছে তার।
এসব বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা নাজমুল নিশাত বলেন, রুবেল মূলত প্লে বয়। একের পর এক নারীদের সঙ্গে মিথ্যা পরিচয়ে প্রেমের নামে শারীরিক সম্পর্ক করা তার স্বভাব। ফেসবুকে নামে-বেনামে তার বিভিন্ন আইডি রয়েছে। বিভিন্ন পোশাকের ছবি এডিট করে এতে নিজের মুখ বসিয়ে দেন তিনি।
তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারের পর নিজের সবদোষ স্বীকার করে গত ২৮ জুন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন রুবেল। তার কাছ থেকে ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে।
-এইচএম