অনলাইনঃ
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রেলওয়ে ও গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি) জায়গা পুনারায় দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড।
সন্ধ্যার পর থেকেই ট্রাক রাখা শুরু হয় সড়কের ওপর। আর রাত ৯টা বাজতেই ট্রাকস্ট্যান্ডে পরিণত হয় সড়কটি। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড ও রাস্তায় ট্রাকের দখল উচ্ছেদ করেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর অল্প সময়েই বেশ কিছু জনবান্ধব উদ্যোগ নিয়েছিলেন আনিসুল হক। এর মধ্যে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে তেজতুরিবাজার রেলগেট পর্যন্ত সড়কে স্থাপিত অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ, আমিন বাজার থেকে শ্যামলী সড়ক পার্কিং-ফ্রি ঘোষণা, গাবতলীতে অবৈধ দখলে থাকা ৫২ একর জমি উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করেছিলেন তিনি।
মেয়র নির্বাচনের পর আনিসুল হক তেজগাঁওয়ের অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। পিডব্লিউডি’র জায়গা দখল করে তেজগাঁওয়ে ট্রাকস্ট্যান্ডটি গড়ে তোলা হয়েছিল। সরকারের অনুমতি ও নিবন্ধন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৩৯ বিঘা জমি দখল করে রেখেছিলেন এই ট্রাকস্ট্যান্ডের লোকজন। স্ট্যান্ডের সামনের সাতরাস্তা থেকে কারওয়ান বাজারসংলগ্ন রেললাইন পর্যন্ত প্রায় ১০০ ফুট প্রস্থের সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ট্রাক রেখে দখল করে রাখা হয়েছিল।
নির্বাচনের পর ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক ট্রাকমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন। অন্তত তিনবার ট্রাকস্ট্যান্ডের ভিতরের সব স্থাপনা সরিয়ে নিতে সময় বেঁধে দেন। ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ট্রাকস্ট্যান্ডে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন আনিসুল হক। তাকে হুমকিও দেয়া হয় তখন। অবশ্য পরদিন ট্রাক মালিকেরা নিজেরাই সড়ক থেকে ট্রাক সরিয়ে নেন।
এরপর ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকায় এক সমাবেশ করে তেজগাঁও এলাকাকে পার্কিংমুক্ত ঘোষণা করেন আনিসুল হক। দখলমুক্ত সড়কটি আধুনিকায়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু আনিসুল হকের মৃত্যুর পর সড়কটি আবারও ট্রাকস্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে ট্রাকস্ট্যান্ড এবং এর আশপাশের সড়কগুলোতে গড়ে উঠেছে কয়েকশ দোকানপাট। তেজগাঁও ১ নম্বর রেলগেটসংলগ্ন জমজম মার্কেটের পাশের সড়কে সারি সারি ট্রাক রাখা। তেজগাঁও মিনি ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকা নামে পরিচিত মদিনা মসজিদসংলগ্ন সড়ক পুরোটাই চলে গেছে ট্রাকের দখলে। মদিনা মসজিদসংলগ্ন সড়কটিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ট্রাক মেরামতের দোকান। সড়কের দুই পাশে ট্রাক দাঁড় করিয়ে মেরামতের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। মাঝের ফাঁকা জায়গা দিয়ে পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলার উপায় নেই। সন্ধ্যার পর ট্রাকের ভিড়ে বিভীষিকায় রূপ নেয় পুরো এলাকা। মধ্যরাতেও এই রাস্তায় ঘণ্টা দুয়েক যানজটে আটকে থাকতে হয়। সকাল ৭টা পর্যন্ত ট্রাকের দখলে থাকে পুরো সড়ক।
গাবতলীতে অবৈধ দখলে থাকা ৫২ একর জমি উদ্ধার করেন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক। এখানে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্লান্ট, মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ, বাস, ট্রাক ডিপোসহ কিছু স্থাপনা করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরিকল্পনায় কোনো অগ্রগতি না থাকায় এসব জায়গা আবারও দখল হয়ে যাচ্ছে। আমিনবাজার থেকে শ্যামলী পর্যন্ত পার্কিংমুক্ত করেছিলেন আনিসুল হক। কিন্তু এসব জায়গা আবার আগের রূপে ফিরে গেছে। আরও পড়ুনঃ
বান্দরবানেও জিকে শামীমের দখলকৃত সম্পত্তির খোঁজ
এ ব্যাপারে ডিএনসিসি বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা উচ্ছেদ করে যাই আবার দখল হয়ে যায়। এ জন্য এবার নিরবচ্ছিন্ন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। উচ্ছেদ অভিযানে পর্যাপ্ত পুলিশ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে ডিএমপি কমিশনারের কাছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। উত্তরা থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। রাস্তা-ফুটপাথ দখলদার মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
-ডিকে