স্বাস্থ্যঃ সাধারণ জনগনের জন্য সার্বজনীন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তার, নার্সসহ চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন বক্তারা।

বেসরকারী সংস্থা সিরাক বাংলাদেশ, ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ কোয়ালিশন ও আশার আলো সোসাইটি কর্তৃক সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বিষয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত বক্তারা এই কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো: শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, একটি দেশ এগিয়ে যেতে তিনটি জিনিস প্রয়োজন- দক্ষ জনশক্তি, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সেবার মানসিকতা।
তিনি বলেন, চিকিৎসা এখন মানবিক সেবা থেকে ব্যবসায়িক হয়ে গেছে। সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সেবা প্রদানকারীদের মানসিকতা থাকতে হবে এবং মানবিক সেবা হিসেবে কাজ করতে হবেও বলে জানান তিনি।

ড. মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে জনপ্রতি বার্ষিক স্বাস্থ্যসেবার খরচ হয় ৩৭ ডলার। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি পাইলট প্রজেক্টের অধীনে টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলায় ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য বীমা চালু করা হয়েছে। এই উপজেলাসমূহের ৮৭ হাজার পরিবার সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকার স্বাস্থ্য সেবা পাবে এই বীমার অধীনে। পরবর্তীতে এই জেলার আরো দশটি উপজেলাকে যুক্ত করা হবে। এমনিভাবে ক্রমান্বয়ে দেশের সকল স্থানের মানুষকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক।

আরও পড়ুনঃ

বেআইনি অর্ডার মেনে নেওয়া একটা অপরাধঃ ড.কামাল

গ্রাম পর্যায়ে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই সাড়ে বার হাজার কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক তৈরি করা হয়েছে। আরো সাড়ে পাঁচ হাজার করা হবে, যার ফলে স্বাস্থ্য সেবার ঘাটতি অনেকাংশে কমবে বলেও আশা প্রকাশ তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিরাক বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত বলেন, সবার জন্য কম খরচে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাস্থ্য ডাটাবেজ তৈরি করা দরকার। যেটা আফ্রিকার অনেক অনুন্নত দেশেও রয়েছে।
তিনি বলেন, ডাক্তারের নিকট থেকে রোগীর রেফারেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন দালালের খপ্পরে পড়তে না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মরত সংস্থা আশার আলো সোসাইটির চেয়ারপার্সন ডা. নিলুফার বেগম বলেন, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইডস এর রোগী শনাক্ত হয়। প্রতি বছর সেই সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে সরকারী মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় সরকার এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবা দিচ্ছে। এর ফলে আক্রান্তরা অনেকাংশে ভালো থাকছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতিক ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা রহমান বলেন, নিজের পকেট থেকে টাক দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়াটা একটা বোঝা হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ মানুষ সরকরী হাসপাতালে, ২৫ শতাংশ মানুষ বেসরকারী হাসপাতাল এবং বাকী ৬০ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক সেবা যেমন: ফার্মেসী থেকে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে। ফলে মানুষ অনেক ভুল চিকিৎসার স্বীকার হচ্ছে। যাচ্ছে তাইভাবে এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে জনগন সর্দি কাশিতেও মৃত্যুবরণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করার ব্যাপারেও জোর দাবি জনান তিনি।

সিরাক বাংলাদেশের কমিউনিকেশন অফিসার সাকিল আহমাদ এর পরিচালনায় ঢাকার বিভিন্ন জায়গা হতে আগত প্রায় শতাধিক অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিনিধি মো: কামাল হোসেন।

এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে সিরাক বাংলাদেশের সহকারী পরিচালক (প্রোগ্রাম) আব্দুল ওয়াদুদ, প্রোগ্রাম অফিসার তাসনিয়া।আহমেদ, প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট নুসরাত শারমিন রেশমা, ইন্টার্ন মাহমুদা রিদিয়া রশনী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এসএম

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily