করোনা সংবাদঃ
১৯ মার্চ দেশে সর্বপ্রথম শিবচরকে লকডাউন করা হয়। শুরুতে প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলাটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও স্থানীয় সাংসদের তৎপরতা ও প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজরদারির ফলে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেনি শিবচরে।
মূলত ৩০ হাজারের বেশি দরিদ্র পরিবারে নিয়মিত খাবার সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কারণে কেউ লকডাউন ভেঙে ঘর থেকে বের হয়নি। এর সুফলও মিলেছে। গত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত শিবচরে মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭ জন। এর মধ্যে আগেই সুস্থ হন তিনজন। গত রোববার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আটজন। বর্তমানে মাত্র পাঁচজন করোনা আক্রান্ত রোগী আইসোলেশনে রয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এর এক দিন আগে ইতালি থেকে বাংলাদেশে আসেন শিবচর পৌরসভার গুয়াতলার এক ব্যক্তি। তিনি ১৩ মার্চ কভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। পরদিন শনাক্ত হয় তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। ১৭ মার্চ শনাক্ত হন তার শাশুড়ি ও এক বন্ধু। ১৮ মার্চ ওই প্রবাসীর বাবাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে তিনি পজিটিভ শনাক্ত হন। উল্লিখিত সাতজন ওই প্রবাসীর মাধ্যমেই সংক্রমিত হন। এর বাইরে উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের হোগলার মাঠ গ্রামের একজন আক্রান্ত ছিলেন।
১৯ মার্চ উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ দেশের প্রথম কোনো এলাকা হিসেবে শিবচরকে প্রথম কনটেইনমেন্ট, পরে লকডাউন ঘোষণা করে। ওই সময় জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) টিম শিবচরে অবস্থান নিয়ে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা মানুষের তালিকা তৈরিসহ তাদের নমুনা সংগ্রহ করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখে। পরে ওই পরিবারের আরও দু’জনের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়। ২৪ মার্চ ওই প্রবাসীর বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১১ এপ্রিল পর্যন্ত শিবচরের করোনা রোগীর সংখ্যা স্থিতিশীল ছিল। ১২ এপ্রিল ওই প্রবাসীর এক প্রতিবেশী নারীর মধ্যে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মেলে। এর বাইরে আরও তিনজন আক্রান্ত হন। এ তিনজনই নারায়ণগঞ্জফেরত। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক আছেন, যিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। তিনি শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসকের স্বামী। তিনি স্ত্রীর কাছে বেড়াতে আসেন এবং তার মাধ্যমে তার চিকিৎসক স্ত্রী ও ৭ বছরের শিশুকন্যা আক্রান্ত হয়। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত শিবচরের মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭। তাদের মধ্যে আগেই সুস্থ হন তিনজন। রোববার সদর হাসপাতালের আইসোলেশন থেকে আটজন মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফেরেন (তাদের মধ্যে পাঁচজন দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত)। বর্তমানে পাঁচজন আইসোলেশনে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিবচরে করোনার বিস্তার রোধে শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও আইইডিসিআরের নির্দেশনা মেনে চলতে স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী কঠোর অবস্থান নেন। তার নির্দেশে আড়াই শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় উপজেলাজুড়ে। একই সঙ্গে কাজ করে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট, নৌবাহিনী ও র্যাব। বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকানপাট, গণপরিবহন। মাত্র চার ঘণ্টা খোলা থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। বন্ধ হয়ে যায় সব সাপ্তাহিক হাট।
চিফ হুইপ ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসী ও দরিদ্রদের খাবার সহায়তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন। আক্রান্ত পরিবারগুলোর প্রতি খাদ্য সহায়তায় নজর দেন বিশেষভাবে। মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দেন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীসহ (পিপিই) আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সেলিম বলেন, চিফ হুইপ লিটন চৌধুরীর উদ্যোগে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠন করে ৩০ হাজার পরিবারের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে খাদ্য সহায়তা। দলীয় নেতারাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরও ১০ হাজার প্যাকেট খাবার দিয়েছেন।
পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, চিফ হুইপের নির্দেশে রোজার শুরুতে আরেক দফা খাদ্য সহায়তার জন্য তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিবচরে চিফ হুইপের নির্দেশনা ও খাবার সহায়তা কার্যক্রম মানুষকে ঘরে রাখতে সহায়তা করেছে।
চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, যতদিন অচল অবস্থা থাকবে ঘরে ঘরে খাবার সহায়তা চলতে থাকবে। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করায় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।