অনলাইনঃ
পাঁচ জন শিক্ষকের স্থগিত থাকা এমপিও ছাড়করণের একটি ঘটনা ধরা পড়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের একটি চক্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে প্রথম চিঠি লিখেছে গত বছরের অক্টোবর মাসে। আর এই চক্রের মূল হোতা ডিজির পিয়ন জুয়েল।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভুরারঘাট বহুমুখী ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার অধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেনসহ ৫ শিক্ষকের স্থগিত এমপিও ছাড়ের একটি জাল চিঠি মাদরাসা অধিদপ্তর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয় গত বছরের অক্টোবরে।
মাদরাসা অধিদপ্তরের দুইজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছে কর্মচারীদের চক্রটি। শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও জালিয়াতি করার চেষ্টায় ছিলো চক্রটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুরার ঘাট মাদরাসার একজন শিক্ষক গত বছরের অক্টোবর মাসে জানান, পাঁচ লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছে স্থগিত এমপিও ছাড়ের।
ভুরারঘাট বহুমুখী ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার অধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেনসহ পাঁচ জন শিক্ষকের বন্ধ থাকা এমপিও ছাড়করণের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ৩ অক্টোবর একটি চিঠি এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর দুটি চিঠি আসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে। কিন্তু মাদরাসা অধিদপ্তর থেকে এসব শিক্ষকের এমপিও ছাড় করার জন্য কোনো চিঠি শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়নি বলে জানান কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, এই চিঠিগুলো জাল। স্বাক্ষর জাল করে চিঠি দুটি পাঠানো হয়েছে। জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তিন ও মাদরাসা অধিদপ্তরের দুই কর্মচারী।
গত তিন মাস ধরে অনুসন্ধানের পর গতকাল সোমবার হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় শিক্ষা অধিদপ্তরের মাদরাসা শাখার উচ্চমান সহকারি মোজাম্মেল হোসেন। এই মোজাম্মেলের এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পিয়ন জুয়েল এবং বেসরকারি কলেজ শাখার উপ-পরিচালকের পিয়ন রাব্বি। আর মাদরাসা অধিদপ্তরের কর্মচারী মোজাহিদ ও ফারুক। এই মোজাহিদ ও ফারুক মাদরাসা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও যুগ্ম-সচিব মো: বিল্লাল হোসেনের ভাতিজা ও ভাগ্নি জামাই।
জানা যায়, ভোলার যুবদল নেতা রাব্বী এলাকা থেকে তাড়া খেয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে এসেছেন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হলেও রাব্বী নিজেকে তার এলাকায় শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। সম্প্রতি বেসরকারি শাখা থেকে ফাইলের তথ্য অভিযুক্তদের কাছে ফটোকপি করে দেয়ার একটি ঘটনা ধরে পড়ে কলেজ শাখার একজন সহকারি পরিচালকের হাতে। শিক্ষকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও তথ্য পাচার এবং জালিয়াতিতে যুক্ত না থাকতে সম্প্রতি রাব্বীকে সতর্ক করেছেন শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুল হুদা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, মাদরাসা অধিদপ্তরের দুই কর্মচারী ও শিক্ষা অধিদপ্তরের তিন কর্মচারী সঙ্গে গোপন চুক্তি হয়, ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে এমপিও ছাড় করিয়ে দেয়ার।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর একজন কর্মকর্তা বলেন, গত সপ্তাহে তথ্য পাওয়ার পর দুই জন কর্মকর্তাকে শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। কর্মকর্তারা গিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, যে ওই স্বাক্ষর তাদের নয়। কিন্তু তারপরও মাদরাসা শাখার কর্মচারী মোজাম্মেল এই ফাইল নিয়ে গড়িমসি করছিলেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠির স্বাক্ষর জাল ছিল। এই খবর জানার পরে আমরা ফাইল তলব করে জালিয়াত চক্রের উদ্যোগ ভন্ডুল করে করে দেই।