বৈধ পথে রেমিটেন্স বাড়ানোই প্রধানমন্ত্রীর ২% প্রণোদনার লক্ষ্য- অর্থমন্ত্রী

অর্থনীতিঃ
রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা সরাসরি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন।

বৈধ পথে প্রবাসীরা যত খুশি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন। এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রতি ট্রানজেকশনে ১৫০০ ডলারের বেশী না হলে যুক্তরাজ্যে বা বাংলাদেশে কেউ কোন প্রশ্ন তুলবে না।

বরং প্রেরিত রেমিট্যান্সের উপর ২% হারে প্রণোদনা রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে দেয়া হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে সরকার ৩০৬০ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। তাই প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহবান আপনারা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠান। বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো বাড়ানোই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২% প্রণোদনার মূল লক্ষ্য। লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর, ২০১৯) আয়োজিত ‘Incentivizing Remittances from the UK: Milestone Initiatives of Prime Minister Sheikh Hasina’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ২০টি‘রও বেশী রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সাথে মত বিনিময় করেন।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, রেমিটেন্সের ওপর এ প্রণোদনা জুলাই ২০১৯ থেকে কার্যকর হয়েছে। কাজেই যারা ওই সময় থেকে বাংলাদেশে বৈধ পথে টাকা পাঠিয়েছেন, তারা রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের প্রাপ্য প্রণোদনা গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে পারেন।

প্রবাসীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২% প্রণোদনা একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। বিশ্বের আর কোনো দেশের প্রবাসীরা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধাগুলি সার্বক্ষণিক নজরদারীর জন্য যুক্তরাজ্যে হাইকমিশনারের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হবে।

প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন বন্ডের মাধ্যমে প্রবাসীদের বিনিয়োগে সুযোগ রযেছে। আগামী মাসে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বাংলা টাকা বন্ড চালু করা হচ্ছে। যা প্রবাসীদের বিনিয়োগের একটি বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ১৩০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে।

এরমধ্যে ৪০টি অঞ্চলের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি লাভবান হতে পারেন।

বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগ বা এফডিআই ও বিদেশি সহায়তা বাড়ছে। গত বছরের হিসাবে আমাদের এফডিআই ৪০ শতাংশ বেড়েছে। শতকরা হিসাবে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ বিনিয়োগ আকর্ষণে এগিয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বে ফিজিক্যাল ও ননফিজিক্যাল অবকাঠামোর দূর্বলতার কারণে আমারা পিছিয়ে ছিলাম কিন্তু এখন আমাদের অবকাঠামো মুটামুটিভাবে তৈরী হয়েছে তাই এখন আর আমরা পিছিয়ে থাকবোনা। তাছাড়া বিভিন্ন মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে যেভাবে আমাদের অবকাঠামো তৈরী করা হচ্ছে তাতে আমাদের সম্ভাবনা আরো বাড়ছে। বিদেশীদেরও বিনিয়োগের জন্য আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক অনুযায়ী চলতি বছরে বিশ্বের সব দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। ডুয়িং বিজনেস সূচক-২০২০ এ বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে, এবার বাংলাদেশ আট ধাপ এগিয়েছে। এ সূচকে সবচেয়ে ভালো করা ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম ঘোষণা করেন ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে সর্বাধিক রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সন্মাননা দেয়া হবে।

হাইকমিশনার বলেন, যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়ছে। বৈধ পথে রেমিটেন্স আরো বাড়ানোর জন্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাস আয়ের ওপর ২% প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আশা করা যায় প্রণোদনা দেয়ার ফলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আগামী বছর রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে রেমিট্যান্স হাউজের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে প্রবাস-আয়ের ওপর প্রণোদনা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তারা আশা প্রকাশ করেন, এই প্রণোদনার জন্য বৈধ পথে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরনের পরিমাণ বাড়বে। তারা এক্ষেত্রে সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রচার-প্ররোচনা জোরদার করার পরামর্শ দেন।

-শিশির

FacebookTwitter