অনলাইনঃ
খাদ্যে ভেজাল দেয়াকে এক ধরনের দুর্নীতি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণ মানুষের জীবন রক্ষার্থে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল প্রদান বন্ধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সেখানে সফলতা অর্জন করেছি, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। খাদ্যে ভেজাল দেয়াও এক ধরনের দুর্নীতি, এই দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
‘কারণ কোন বিষ খেয়ে আমাদের দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটা আমরা চাই না’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০১৯ উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে ভেজাল দেয়াটা মনে হয় কিছু কিছু শ্রেণীর একটি চরিত্রগত বদঅভ্যাস। এটা বন্ধ করতে হবে। এই ভেজাল খাদ্য খেলেতো মানুষের উপকার নয়, অপকারই হয়।
তিনি বলেন, দেশে ভেজাল খাদ্য বিরোধী অভিযান চলছে এবং এটিকে ভালোভাবে পরিচালনার জন্য আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি আলাদা কতৃর্পক্ষ করে দিয়েছি এবং তাদের লোকবলের যে সমস্যা রয়েছে সে সমস্যা আমরা দূর করে দেব। হাটে, মাঠে, ঘাটে সর্বত্রই যেন এই ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও নেব।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থার চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ভেজালের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনার সাথে সাথে এসব বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার।
বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরায় ভেজাল বা বাসি খাবার বা পচা খাবার সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এখানে নাগরিক সচেতনতা একান্তভাবে দরকার। জনগণ যদি সচেতন হয় তাহলে তাদেরকে এভাবে কেউ ঠকাতে পারবে না।
তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা একটু লাভ যদি নিতে চান লাভ নেন, কিন্তু ভাল জিনিসটা দেন, ভেজাল কেন দেবেন।
‘খারাপভাবে করে মানুষকে ঠকিয়ে, মানুষের জীবন ধ্বংস করা, এটার কোন অধিকার কারো নাই’,যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছি এবং আমরা চাই আমাদের দেশের মানুষকে নিরাপদ খাদ্য দেব।
তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রসংগ উল্লেখ করে বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করার কথা বলেছি । নির্বাচনী ইশতেহার যথাযথভাবে পূরণ এবং সেটা আমরা বাস্তবায়ন করবো।
এজন্য সকল বিভাগীয় শহরে তাঁর সরকারের উদ্যোগে খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণের প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভেজাল রোধে খাদ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিশেষ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমাদের একটি কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি যেমন থাকবে তেমনি প্রতিটি বিভাগেও এর একটি করে শাখা থাকবে, যাতে করে যে কোন জায়গায় যেকোন ভেজাল খাবার যেন সাথে সাথে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি।
তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন সেই ভোটের মর্যাদা যেমন আমরা রক্ষা করবো, সেইসাথে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকেও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি খাদ্য সংরক্ষণের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছে এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের ভর্তুকিসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের নিরাপদ খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ-সবল জাতি চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই’ যা খুবই সময়োপযোগী। আমরা প্রথমবার সরকারে আসার পরই দেশে পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিই। যদিও পরবর্তী সরকার এসে তা বন্ধ করে দেয়।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বের চতুর্থ, সবজিতে তৃতীয় এবং মৎস্য উৎপাদনেও আমাদের দেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
এ সময় তাঁর সরকার দেশীয় মাছ উৎপাদন গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ডিম-মাংস উৎপাদনেও বিশেষ নজর দিয়েছি আমরা। আমিষ জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য চাহিদা কখনও শেষ হয়ে যায় না। যেহেতু আমাদের জমি বেশ উর্বর সেজন্য আমরা ফসল ফলনে নানা ধরেনের উদ্যোগ নিয়েছি। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা দেশজুড়ে খাদ্য গুদাম নির্মাণ করেন, যাতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল মজুদ করতে পারেন। আমরাও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কাজ করছি।
তাঁর সরকার নতুন করে দেশজুড়ে সাইলো তৈরি করে দিচ্ছে উল্লেখ করে ২৭ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বলেন তিনি।
জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুষ্টিকর খাবারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মা-শিশুর স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে অতি দরিদ্রদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মা যাতে তার শিশুর পরিচর্যা করতে পারেন সেজন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস করে দিয়েছি তাঁর সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে চিকিৎসা অপর দিকে পুষ্টিকর খাদ্য। এই দুটোর সমন্বয় হলেই আমাদের দেশের মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।
আজকের শিশু আগামী দিনে যেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে সেজন্য তাঁর সরকার দরিদ্র মা বা কর্মজীবী মা এবং সন্তানসম্ভবা মায়েদের ভাতা প্রদান করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবার সন্তান প্রসবের পর মা তাঁর সন্তানকে যেন তারজন্য আমরা ভাতা দিচ্ছি। যাতে করে ওই শিশুটা একটু হৃষ্টপুষ্ট হয়। আর হাটে-মাঠে-ঘাটেও যেন এই ভেজালবিরোধী অভিযানটা অব্যাহত থাকে। তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। ভবিষ্যতে আরও নেবো।
নৌকায় ভোট দিয়ে পুনরায় দেশ পরিচালনার সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং দেশে চলমান উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে এবং উন্নত সমৃদ্ধ জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
-বাসস