বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে বেশি মুনাফা অর্জন সম্ভব

কৃষি সংবাদঃ
আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে মাছ চাষ করা গেলে মাছের চাহিদা পূরণ এবং কম পুঁজি বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা অর্জন সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঘরের ভিতর, বাসার ছাদ বা আঙ্গিনায় ড্রামে কিংবা ট্যাংকিতে কম খরচে অধিক মাছ চাষের নতুন এক প্রযুক্তির নাম ‘বায়োফ্লক’।

এ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একোয়াকালচার বিভাগের একদল গবেষক। গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ছাদে স্থাপন করা হয়েছে বায়োফ্লক ল্যাব। গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন একোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এ এম সাহাবউদ্দিন।

বায়োফ্লক সম্পর্কে গবেষক দলের প্রধান ড. এ এম সাহাবউদ্দিন বাংলা’কে বলেন, ‘বায়োফ্লক হলো প্রোটিন সমৃদ্ধ জৈব পদার্থ এবং বিভিন্ন অণুজীবের সমষ্টি। এখানে অণুজীব মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মূলত উপকারী ব্যাকটেরিয়া দিয়ে পানিতে উচ্চ কার্বন নাইট্রোজেন অনুপাত নিশ্চিত করে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া কে রূপান্তর করা হয় অনুজীব আমিষে।’

বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষকরা জানান, প্রথমে ট্যাংকে পানি দিয়ে এক সপ্তাহ অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। এতে আয়রন বা অন্য ভারী পদার্থ থাকলে ওপরে জমা হবে। এরপর প্রতি ১ হাজার লিটারে ১ কেজি হারে আয়োডিন মুক্ত সাধারণ লবণ প্রয়োগ করতে হবে। এরপর টিডিএস ১২০০ এর ওপরে হলে প্রতি ১ হাজার লিটারে ১০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে। কার্বনের উৎস হিসেবে চিটাগুড় ৫০-১০০ গ্রাম দিতে হবে। সবসময় অক্সিজেনের সরবরাহ রাখতে হবে। দুই সপ্তাহ পর এতে বায়োফ্লক (ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, শৈবাল, ডায়াটম) তৈরি হবে। পানিতে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার বায়োফ্লক তৈরি হলে মাছ ছাড়া যাবে। এ জন্য দরকার উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উত্স, নিয়মিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বদা বিদ্যুত্ সরবারহ নিশ্চিতকরণ।

ড. এ এম সাহাবউদ্দিন আরো বলেন, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, কৈ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যেতে পারে। যেখানে উত্পাদন বাড়বে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে তিনগুণ। রোগের প্রাদুর্ভাব কম হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য মাছ চাষের এ প্রযুক্তি হতে পারে নতুন দিগন্ত।

মাঠ পর্যায়ে এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের বিষয় তিনি বলেন, দেশব্যাপী এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে পারলে মাছের উত্পাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই কারিগরি জ্ঞান থাকতে হবে। প্রশিক্ষণ বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মাছ চাষ করতে হবে। প্রতি বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত আমাদের বায়োফ্লক ল্যাব উদ্যোক্তাদের সেবার জন্য উন্মুক্ত।

-কেএম

FacebookTwitter