বাঙালী, পিঠ পিছে কথা বলতে খুব পারে

মিলি সুলতানা, কুইন্স, নিউইয়র্ক থেকেঃ

সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে। ঝিরঝির বাতাস বইছিল।অদ্ভুত আবহাওয়া এদেশের।সকালে ঠান্ডা দুপুরে মোটামুটি গরম এবং বিকেলে ঠান্ডা বাতাস।বেশ ভোগান্তি যাচ্ছে এবার।

সন্ধ্যে হয়ে এলেও আকাশে সূর্যাস্তের কমলা নীল রঙের চমৎকার খেলা। বিকেলে রাস্তায় যানবাহনের প্রচুর ভীড় দেখা যায়।কর্মক্ষেত্র থেকে সবার মধ্যে বাসায় ব্যস্ততা।সাইড ওয়াক ধরে হাঁটছি।সড়কের নিচ থেকে সাবওয়ের সরু সিঁড়ি ডিঙিয়ে দলে দলে মানুষ বাসস্ট্যান্ডে খুবই সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। নিউইয়র্ক সিটির মত যানবাহনের এমন অফুরন্ত সুবিধা অন্য কোন স্টেটসে নেই। প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর বাস পাওয়া যায়। মানুষ সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে।কেউ কাউকে ঠেলেঠুলে যাচ্ছেনা।সভ্য দেশের সভ্য নিয়ম।আমাদের বাংলাদেশে যা আশা করাটা বোকামি।এদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ম কানুন মেনে চলা হয়। তাই হয়ত তাদের এমন উন্নতি।আমি একটা প্রয়োজনীয় কাজ সারতে দোকানে ঢুকতে যাব এমন সময় “হ্যালো আপা, লাল আপা” বাক্য শুনে দাঁড়ালাম।বাংলা বাক্য শুনে বুঝলাম নিশ্চয়ই পরিচিত কেউ হবে। দেখলাম মেরুন লেগিংস ঘিয়ে রঙের কোট পরা এক মহিলা। দৃষ্টি বিনিময় হতেই হাত তুলে হাই বললাম।কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভীষণ অস্বস্তিতে আমি।কারণ মহিলাকে আমি চিনতে পারছি না।

যদিও ভাবভঙ্গি করছি চেনাজানার মত।মনের মধ্যে লজ্জা আর অস্বস্তি।মহিলার চেহারার ভাষা বলছে আমি অবশ্যই তাকে চিনতে পেরেছি।কিন্তু কিভাবে বলবো আমি চিনতে পারছিনা তাকে!এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ব ভাবিনি।লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম ভেতরে ভেতরে।মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম এমন বিব্রতকর অবস্থা থেকে আমাকে যেন বাঁচান।এত পরিচিত হাসি দেয়ার পর মুখের উপর যদি তাকে চিনতে পারছিনা,খারাপ লাগতে পারে মহিলার।এছাড়া আমাকে অহংকারী ভাবতে পারেন।আমি চাচ্ছিলাম না মহিলা আমাকে ভুল বুঝুক।কারণ আমি মোটেও অহংকারী নই।মানুষ ভুল বুঝলে আমার হৃদয়ে ব্যথা লাগে।আমি কৌশল অবলম্বন করতে বাধ্য হলাম।নিজ থেকে বললাম, “কেমন আছেন?কতদিন পর দেখা হল।” ভালো কাজ করলো আমার কথাটা।

মহিলা -“জি অনেক অনেক দিন পর দেখলাম আপনাকে।ওয়েট লুজ করেছেন সুন্দর লাগছে।”

আমি-“আমারও স্বস্তি লাগছে।”

মহিলা-“তবে আপনি আদুরে মোটা।আপনি হেলথি কিন্তু চোখে লাগার মত মোটা মনে হয়নি কখনো। কেউ কেউ আছে আটার বস্তার মত মোটা।হাঁটার সময় কোমর নাড়তে পারেনা।আমি শুধু চেয়ে থাকি তাদের বিশাল কোমর আর পেটের দিকে।আপনাকে লাল আপা বলে কেন ডাকলাম জানেন?”

আমি-“জানিনা তো।”

মহিলা-“আপনার সেই রকম লাল ড্রেসটা আমার চোখ থেকে সরাতে পারছিনা।চার বছর হয়ে গেছে প্রায়।কিন্তু ওই লাল ড্রেস আর আপনি….রিয়েলি ওয়ান্ডারফুল কম্বিনেশন।”

আমি-“আমার ম্যাক্সিমাম ড্রেসই অজান্তে লাল হয়ে যায়।কোথায় যেন পরা হয়েছিল ওই ড্রেস।”

মহিলা-“ওমা ভুলে গেলেন?একটা বিয়ের পার্টিতে পরেছিলেন।আমি পরেছিলাম ব্লু ড্রেস।সেদিন বেশকিছু ছবি তুলেছিলাম আমরা।আমাদের রেড ব্লু কম্বিনেশনের ছবিগুলো এখনো আমার ফটো গ্যালারিতে আছে।মাঝেমধ্যে দেখি।ইচ্ছে হয় নক করি।কিন্তু সময় আর পাইনা।কিন্তু মিস করি আপনাকে।”

আমি-“আমারও একই অবস্থা।সময়ের অভাবে অনেকের সাথে যোগাযোগ করা হয়না।”

এবার আমার স্মরণশক্তির আয়নায় মহিলার চেহারা ভেসে উঠলো।মহিলা এখানকার এক পাকিস্তানি বিউটি সেলুনে কাজ করতো।ব্যাংকক থেকে বিউটিফিকেশন কোর্স শেষ করেছে।আমার সাথে পরিচয় ঘটে এক বিয়ের পার্টিতে।আমি কনে পক্ষের অতিথি ছিলাম।কনে আমার পূর্ব পরিচিতা।সেই মহিলা কনেককে বউ সাজিয়েছেন। সেই ভদ্রতায় কনে তাকে নিজের বিয়েতে দাওয়াত করেছিলো। বিয়ের আগে ফেশিয়াল মেনিকিউর পেডিকিউর করেছিল এই মহিলার কাছে।বিয়ের অনুষ্ঠানে ডিজে প্রোগ্রামে হুলস্থূল নাচগান চলছিলো। সবার সাথে বরকনেও নাচে অংশ নিয়েছে।আমি সোফায় বসে মোবাইল টেপাটেপি করছিলাম।এই মহিলা আমার কাছ ঘেঁষে বসলেন। শুরুতে আমাকে ভাবী বলে সম্বোধন করলেন। তারপর বেরিয়ে এলো উনার আসল চেহারা…….”জানেন ভাবী!কনের সাজসজ্জা আমার হাতে করা।গত পরশু তার বডি ম্যাসাজ করেছি।ওর টিশার্ট খোলার পর যা দেখলাম কি আর বলব আপনাকে!!সারা শরীরে দাগ আর দাগ।”

আমি বোকার মত প্রশ্ন করলাম কিসের দাগ?মহিলার উত্তর ছিলো এরকম,”বিয়ের আগেই শরীর ইউজ করে ফেলেছে।যখন মেহেদী লাগাচ্ছিলাম তখন তার গলায় বুকে লাভ বাইট (Love bite) দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি।এই ছেলের সাথে বিয়ের আগেই তার বাসররাত হয়ে গেছে…..”! আমি চমকে উঠলাম মহিলার কথাবার্তায়। দুজন যথেষ্ট ম্যাচিউর তরুণ তরুণী প্রেম করে বিয়ে করেছে। তাদের দৈহিক সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক, সেটা নিয়ে অন্যেরা মাথা ঘামাবে কেন? মহিলাকে খুবই জঘন্য স্বভাবের মনে হয়েছে আমার।বছর কয়েক পর আবার যখন দেখা হল মনে মনে ভাবলাম, এসব নেগেটিভ চরিত্রের লোকদের সাথে যোগাযোগ না রাখাই উত্তম।

FacebookTwitter