শিল্প ও সাহিত্যঃ
ফাওয়াজ রবের “লং ওয়াক হোম” চিত্রটি পেনআর্ট আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে। জুরার এবং শ্রোতারা ফ্রান্স, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সহ সারা বিশ্ব থেকে আশিজন শিল্পীর মধ্যে তাঁর চিত্রটিকে সেরা হিসেবে বিবেচিত করেন।
“আমি এই আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেয়ে খুব আনন্দিত,” ফওয়াজ রব বললেন, “তবে একজন শিল্পীর দায়িত্ব শুধু সুন্দর ছবি আঁকা নয়, তার দায়িত্ব সময়ের কথা বলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের অমানবিকরণ আমাদের সময়ের একটি বড় ট্র্যাজেডি।
রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি বা উইঘুরদের কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি সম্মিলিতভাবে এদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুরস্কার এর চাইতে বড় কথা, আমার শিল্প যদি রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের দিকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আনতে পারে তবে আমার উদ্দেশ্য সার্থক। এর জন্য যদি শিল্পী হিসেবে পাশ্চাত্যে অথবা চীনে প্রত্যাখ্যিত হতে হয়, তাতে কিছু যায় আসে না”।
ফওয়াজ রব সান ফ্রান্সিসকো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং ফ্লোরেন্স (ইতালি)র বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা করেছেন। তিনি একজন স্থপতি এবং দশ বছর ধরে এন এস ইউ আর্কিটেকচার বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।
একজন স্ব-শিক্ষিত শিল্পী যার প্রথম একক প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল খোদ প্যারিসে এবং তার কথা উঠে এসেছিলো “লে প্যারিসিয়েন” ম্যাগাজিনে।
তিনি বাংলাদেশী প্রিন্টমেকারদের একজন সক্রিয় সদস্য এবং শত শত শিক্ষার্থীকে প্রিন্টমেকিং শিখিয়েছেন। পেনআর্ট একটি মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী যা সমসাময়িক শিল্পের দৃশ্য প্রদর্শন করে।
“আমাদের জুরিরা সারা বিশ্ব থেকে সমসাময়িক বিষয়ে শক্তিশালী ধারণা এবং উদ্ভাবনী কৌশলের শিল্পকর্মগুলোকে নির্বাচন করার উচু মানদণ্ড অনুসরণ করেছে।”
একজন জুরার বললেন “ফাওয়াজ রবের শিল্পকর্মটি রোহিঙ্গা সহ পৃথিবীর সকল শরণার্থীদের, মানুষ হিসেবে যে অসন্মান ও কষ্টের মুখোমুখি হতে হয় তা স্পর্শ করেছে।”
ফওয়াজ রব প্রথম বাংলাদেশী শিল্পী যিনি প্রিন্টমেকার হিসেবে ক্যাম্বডিয়ায় এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি অর্জন করলেন। এই সুবাদে সেই দেশের বহু পত্রপত্রিকায় শিল্পী সহ বাংলাদেশের কথা ছাপা হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশের প্রিন্টমেকারদের জন্য এবং সমগ্র দেশের জন্য একটি বড় সম্মান বয়ে আনলেন। এই পদকটি এমন একটা সময়ে আসলো যখন বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে দেখা হচ্ছে।
শিল্পীর ভাষায় “লং ওয়াক হোম” ছবিটির পেছনে দর্শন ছিলো: “দশ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বার্মা ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।
তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, পরিবারের সদস্য নিহত হয়েছে, ফসল পুড়ে গেছে। এমতাবস্থায় জাতিসংঘ নিতান্তই নিথর ।
বার্মিজ সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে যখনি কোনও রেজোলিউশন আনা হচ্ছে, চীন সরকার সেটাতে ভেটো দিচ্ছেন।
আর এদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শরণার্থীর শিবিরে দিন গুনছেন। অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের শুধুমাত্র ঠাই দেয়নি, তাদের অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান উদাসীনতা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। সবচেয়ে অবাক করা ব্যপার হলো পৃথিবীময় সৎ, শিক্ষিত সাধারন মানুষরা ৯/১১ এর পর থেকে মুসলিম জনগোষ্টিকে বিপজ্জনক হিসেবে দেখতে শুরু করে।
দুঃখজনক সত্য হ’ল পৃথিবীর সাধারণ জনগন নিয়ন্ত্রিত তথ্যের শিকার। একটি বিশেষ শ্রেনী তাদের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে সাফল্যের সাথে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করেন।
ফেসবুক নামক প্রচার মেশিন এর কারখানাটি সর্বোচ্চ ক্রেতার কাছে বিক্রি হয়। শুধুমাত্র বার্মা নয়, ট্রাম্পের জয় এর পেছনেও এর চতুরতা কাজ করেছিল। আমাদের সময়ের ডিজিটাল অপরাধের বিশালতা একদিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হয়ত পড়ানো হবে।
তবে রোহিঙ্গা বা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের কি তাতে কিছু আসে যায়? তারা বিশ্ববাসীর উপেক্ষায় ধুকে ধুকে মরছে।
আমরা সবাই বাড়ি ফিরতে চাই। রোহিঙ্গারা বাড়ি ফিরতে চান। তারা হাটতে হাটতে একটি বাড়ির কথা চিন্তা করেন যার অস্তিত্ব আর নেই। তারা হয়ত সেই বাড়িতে আর কোনদিনও ফিরে যেতে পারবেন না। কিন্তু সেই বাড়ির খোজে নিরন্তর হেটে চলা। লং ওয়াক হোম।”
শিশির