নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী তরুণ ও যুব সমাজকে বিভ্রান্তির থেকে দূরে রাখতে ও তারা যেন হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে সে লক্ষ্যে একটি যুব সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা থেকেই ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর দেশের প্রথম যুব সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত নবজাতক বাংলাদেশের তরুণ যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে আদর্শিক দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজে লাগানোই ছিল যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুজিব ভাবাদর্শের এই সংগঠনটি আজ উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ যুব সংগঠন হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যুবলীগ নেতাকর্মীরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগের পাশাপাশি অপশক্তির অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে বারংবার রাজপথে রক্ত দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। যুবলীগ নেতাদের বঙ্গবন্ধুর নীতি ও ত্যাগের আদর্শ নিয়ে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া কোন যুবলীগ কর্মীল নীতি হতে পারেন। তাই সবসময় সবাইকে মনে রাখতে হবে সততাই সবচেয়ে বড়ো শক্তি। একটা দেশ গড়ে তুলতে হলে সবচেয়ে বড়ো প্রয়োজন আমাদের যুব সমাজের মেধা, তাদের শক্তি, তাদের মননকে কাজে লাগানো। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে—ভোগে নয়, ত্যাগেই হচ্ছে মহত্ত্ব। কী পেলাম, কী পেলাম না, সে চিন্তা নয়; মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম, কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম—সেটাই হবে রাজনীতিবিদের চিন্তা-ভাবনা। একজন রাজনীতিবিদ যে হবে, তার জীবনে ত্যাগ ও মানুষের কল্যাণের আদর্শ থাকতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুবলীগ নেতাদের ত্যাগের মন্ত্রে দীক্ষিত করার পাশাপাশি বিপথে গেলে তার কঠোর অবস্থানের কথাও সকলকে জানিয়ে দিয়েছেন। আজ (৩০ নভেম্বর, ২০১৯) শনিবার সকালে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যুবলীগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফঅ কামাল এসব কথা বলেন।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে সুন্দর সময় আমরা এখন পার করছি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে চলেছি। গত দুই দশকে পৃথিবীতে কয়েকবার অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে সারা বিশ্বে যে মহা অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল তাতে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার বেশ কিছু দেশ চরম অবস্থায় পতিত হয়। আর ২০০৮ সালের বিপর্যয়ে খোদ আমেরিকাসহ অনেক দেশে চরম অবস্থার সষ্টি হয়। কিন্তু তখনও আমাদের অর্থনীতি বিপর্যের সম্মুখীন হয়নি। এখন পৃথিবীতে তৃতীয় চরম অবস্থা বিরাজ করছে আর সেটি হচ্ছে তথাকথিত বানিজ্য যুদ্ধ। চলমান এই বানিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে সারাবিশ্বের অথনীতিতে নিম্নমুখীতা দেখা দিয়েছে। এতে চীনের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক চার শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমে গেছে, কিন্তু বাংলাদেশের অথনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এটাকে কোন কল্প কাহিনীর মত মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। এতে সবচেয়ে বড় অবদান বাংলাদেশের মানুষের। কেননা আমাদের উৎপাদন আর চাহিদা আমাদের নিজেরাই তৈরি করি। ফলে আমাদের আথিক খাতে এই মুহুর্তে কোন রকম ঝুঁকি নেই। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের অথনীতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে। আমাদের অগ্রগতি দেখে তারা অভিভূত। অন্য দেশগুলোর কাছে আমাদেরকে তারা ইতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করছে। আমাদের রয়েছে কর্মদক্ষ ভবিষ্য যুবশক্তির সম্ভাবনা। ২০৩০ সাল নাগাদ ৩ কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং তখন কারোর কর্মসংস্থানের অভাব থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে আগামী বছর ‘মুজিববর্ষ’ উদ্যাপনকালে সারা দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বর্তমান সরকার। বাংলাদেশের একটি ঘরও অন্ধকার থাকবে না। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলবে। কাজের গতি বাড়বে, সময় বাড়বে। বিদ্যুতের আলোয় কাজ হবে। ২০০৯-এ আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ করব, সত্যি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।
লালমাই উপজেলা যুবলীগের আহবাহক এম এ মোতালেবের সভাপতিত্বে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন লালমাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক (বি.কম), কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার, লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ (বি.এ), লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু কল্যাণ মিত্র সিংহ (রতন), লালমাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজুমদারসহ প্রমুখ।
-শিশির