ডেস্ক রিপোর্টঃ
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে কানাডা সরকারের অর্থায়নে ও হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় আইপাস বাংলাদেশ এবং এর সহযোগী সংস্থাসমূহ কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘ইম্প্রুভিং এসআরএইচআর ইন ঢাকা’ প্রকল্পের পক্ষ থেকে ‘সাইলেন্ট ফ্রেমস লাউড ভয়েসেস: এক্সপ্লোরিং এসআরএইচআর থ্রু কমিউনিটি লেন্স’ শীর্ষক ফটোভয়েসের মাধ্যমে গণঅংশগ্রহণমূলক গবেষণাকর্ম হয়েছে।
উক্ত ফটোভয়েস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অভিনব এবং অংশগ্রহণমূলক ফটোভয়েস পদ্ধতি ব্যবহার করে শহরকেন্দ্রিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার (SRHR) বিষয়ক সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলোকে তুলে আনাই ছিলো
এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। প্রদর্শনীটি সকাল ১০ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় এবং বেলা ১২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব এ. এফ. এম. আলাউদ্দিন খান, অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট (UPHCSDP-II), বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ডা: মনির উদ্দিন সিদ্দিকী, পরিচালক, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য (সার্ভিসেস), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, জনাব ডা: ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, লাইন ডিরেক্টর (সিসিএসডিপি), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, জনাব এস এম সৈকত, নির্বাহী পরিচালক, সিরাক বাংলাদেশ, সন্মানিত অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জো গুডিংস, হেড অফ কো-অপারেশন, হাইকমিশন অফ কানাডা ইন বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা: সাইদ রুবায়েত।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ইম্প্রুভিং এসআরএইচআর ইন ঢাকা (নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্য) প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা বাপসা, সিরাক বাংলাদেশ, আরএইচস্টেপ-এর নির্বাহী পরিচালক, ওজিএসবি-এর প্রেসিডেন্ট, আইপাস বাংলাদেশ ও প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবী ও কমিউনিটির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রদর্শনীতে প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা সিরাক বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২৫ জন তরুন স্বেচ্ছাসেবীর (প্রজনন স্বাস্থ্যবন্ধু) সংগৃহীত ২৬টি ছবির গল্পের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার নিম্ন আর্থ-সামাজিক এলাকায় বসবাসকারী নারী ও কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার (SRHR) বিষয়ক সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের স্বতস্ফূর্ত সম্পৃক্ততা এবং আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে।
প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত ছবির গল্পগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, মাসিক নিয়মিতকরণ, গর্ভপাত পরবর্তী সেবা, প্রজননে জবরদস্তি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং নারী ও কিশোরীদের অধিকার ভঙ্গসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিষয়ে আরও বৃহত্তর পর্যায়ের আলোচনা এবং কমিউনিটির ঐক্যবদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টি করাই এই ফটোভয়েস প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানে পৃথক বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ তাদের অনুভূতি ও মতামত ব্যক্ত করেন।
প্রদর্শনীর গ্যালারি ঘুরে এসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ এফ এম আলাউদ্দিন খান বলেন, “ছবিগুলো নীরব, কিন্তু কিছু না বলেও এই ছবিগুলো আমাদের অনেক বার্তা দেয়, যা সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে পার্থক্যগুলোকে তুলে ধরে। ছবি ও গল্পগুলোর মাধ্যমে আমাদের সামাজিক অবস্থান, শিক্ষার অবস্থা ও অসঙ্গতিগুলো উঠে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনগুলো অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু সঠিক শিক্ষা ও তথ্যের অভাবের কারনে তারা নানান ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হয় এবং ফাঁদে পড়ে। তারা বেশিরভাগ সময়েই থাকে কল্পনার জগতে। তাই আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীদের জন্য এই প্রদর্শনীর মতো উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যা তাদের প্রয়োজন ও চিন্তাভাবনার বিষয়টিকে বিবেচনা করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জো গুডিংস বলেন, “এই প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখে যদি অনুভব করা যায়, তবেই প্রকৃত দৃশ্যপট বোঝা সম্ভব। এভাবে যদি সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা যায়, তবে, সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াটাও সহজ হবে।”
ফটোভয়েস প্রদর্শনী ও এই উদ্যোগের প্রশংসা করে জো গুডিংস বলেন, “এই প্রদর্শনীটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করেছে যে আমাদের আসলে কী পরিবর্তন আনতে হবে।”
উপস্থিত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা: সাইদ রুবায়েত বলেন,“আমরা আমাদের সমাজের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্যই গবেষণা করি।
‘ফটোভয়েস ইনিশিয়েটিভ’ আজকাল প্রতিকূলতা এবং অজ্ঞতাকে মোকাবেলা করার জন্য একটি হাতিয়ারের মতো কাজ করে।
আমরা এই প্রদর্শনীতে ‘ফটোভয়েস’ পদ্ধতিই ব্যবহার করেছি যেখানে সরাসরি ভুক্তভোগী এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে প্রকৃত গল্পগুলো আমরা শুনতে পেরেছি।
আপনাদের উপস্থিতির মাধ্যমে আমাদের এই অনুষ্ঠানটিকে আরও অর্থবহ করে তোলার জন্য আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
ফটোভয়েস প্রদর্শনীসহ এই উদ্যোগের কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে আইপাস বাংলাদেশ এবং মাঠপর্যায়ে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছে সিরাক বাংলাদেশ।
ইম্প্রুভিং এসআরএইচআর ইন ঢাকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আইপাস বাংলাদেশ নামক একটি আন্তর্জাতিক এনজিও। সিরাক বাংলাদেশ, ওজিএসবি, বাপসা এবং আরএইচস্টেপ মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আইপাসের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রকল্পটি পরিবার পরিকল্পনাসহ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে মোট ১৫৭টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে সহায়তা দিয়ে আসছে।
এছাড়া গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জের নগর এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র ও অতি-দরিদ্র নারী ও কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার, বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা, মাসিক নিয়মিতকরণ (এমআর) এবং গর্ভপাত-পরবর্তী সেবার সুরক্ষা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নগরবাসীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে যৌন ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা (SGBV) নিরসনে কাজ করছে।
প্রকল্পটি্র কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং এর অধিদপ্তরসমূহ (DGFP, DGHS), স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট (UPHCSDP) এবং BKMEA সহযোগীতা প্রদান করছে।
পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পটি ২০২১ সালের অগাস্ট মাস থেকে এর কার্যক্রম শুরু করেছে যা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে।
-শিশির