অনলাইনঃ
মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৫-৩০ টাকা বেড়ে গেছে।
কিন্তু সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানিতে এলসি মার্জিন, সুদের হার হ্রাস, বন্দরে দ্রুত খালাস এবং নির্বিঘ্নে পরিবহন নিশ্চিত করার করার পরেও তা কাজে আসছে না।
মূলত ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার পর থেকে দেশের বাজারে প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। যুগান্তর‘র প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও রামপুরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭৮-৮০ টাকা কেজি দরে, যা শনিবার ছিল ৭০ টাকা। আর বৃহস্পতিবার বিক্রি হয় ৫০-৫৫ টাকায়।
ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০ টাকা কেজি দরে। শনিবার তা বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। বৃহস্পতিবার ছিল ৪৫-৫০ টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে সোমবার পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বড় ৭৫ ও ছোট ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়, যা ১০ দিন আগে ছিল ৪০ টাকা।
চট্টগ্রাম ব্যুরো খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানায়, বাজার সামাল দিতে ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে, এর পরদিন থেকেই চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে।
শুক্রবার যেখানে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫০ টাকা, সেখানে সোমবার তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকার উপরে। পেঁয়াজের বাড়তি দামে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় ভারতের মহারাষ্ট্রের লাসাগাঁও ও নাসিক থেকে। কিন্তু খাতুনগঞ্জে গত এক সপ্তাহ ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি কমে গেছে।
ব্যবসায়ীদের গুদামে যেসব পেঁয়াজ মজুদ আছে তারা সেগুলো এখন বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। গত দুই দিন ধরে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। দাম কমার আশায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। ঈদের আগে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং সাব্বির ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ ছগির আহমদ বলেন, ‘ভারতে পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে দাম বাড়িয়ে দেয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বাতাসে বাতাসে মুখে মুখে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা জেলা প্রশাসক চাইলে মনিটরিং করতে পারেন। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও মিয়ানমারে পেঁয়াজের দাম আগের মতো রয়েছে। এখন মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।’
এদিকে বেনাপোল পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রভাব যশোরের সর্বত্র পড়েছে। বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৩০ টন পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি হয়। সোমবার আমদানি হয় ১৭০ টন পেঁয়াজ। ভারতের নাসিক, হরিয়ানা ও কালনা থেকে বেশিরভাগ পেঁয়াজ আমদানি হয় এই বন্দর দিয়ে।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক আবু হাসান জানান, তিনি সর্বশেষ ২৫০ ডলার দরে ভারত থেকে পেঁয়াজ এনেছেন। ভারত যে ন্যূনতম দাম ঠিক করে দিয়েছে, তাতে খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বেনাপোলের আড়তদার আলাউদ্দিনও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভারত যেভাবে পেঁয়াজ রফতানিতে দাম বাড়িয়েছে তাতে করে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ না আনা হলে দাম প্রায় ১০০ টাকা হবে।’
শিকদার ভান্ডারের মালিক শামছু শিকদার বলেন, ‘এখন ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আসে। তার সঙ্গে দেশের উৎপাদন মিলিয়ে ঘাটতি খুব বেশি হবে না। ফলে খুচরা বাজারে দাম কিছুটা বাড়লেও পরিস্থিতি অতটা মারাত্মক হওয়ার কথা নয়। আমদানিকারকরা ইতোমধ্যে তুরস্ক, মিসর, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন।’
আরও পড়ুনঃ
সাপের কামড়ে ২ ভাইয়ের মৃত্যু
তথ্যমতে, এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকেও একবার ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে ন্যূনতম রফতানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন ঢাকার খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজিতে পাওয়া গেলেও দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছিল।
-কেএম