পূর্বাচল নতুন শহরে শোভা পাবে দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’

পূর্বাচল নতুন শহরে শোভা পাবে দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’
পূর্বাচল নতুন শহরে শোভা পাবে দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’

অনলাইনঃ
রাজধানীর মনোরম এলাকা পূর্বাচল নতুন শহর ৩০০ ফিট এলাকায় ২ দশমিক ৩১৯ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭১ ফুট উচ্চতার ভাস্কার্যসহ ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের শূন্যে উত্থিত তর্জনী ভাস্কর্য শোভা পাবে। ব্রোঞ্জের তৈরি তর্জনী ও বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণে ৫৫ কোটি ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১৫ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর সড়কের ১৭ নম্বর প্লটে ২ দশমিক ৩ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে ঐতিহাসিক এ স্থাপনা। এটি নির্মাণে খরচ হবে ৫৫ কোটি ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমানের শূন্যে উত্থিত তর্জনী ব্রোঞ্জ নির্মিত ভাস্কর্যে শোভা পাবে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ভাস্কর্যটির উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়ছে ৭১ ফুট। দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যটি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কে আগামী প্রজন্মের কাছে অনন্য মাইলফলক হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই চত্বর নির্মাণ করতে গিয়ে কয়েকবার নক্শা পরিবর্তন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টম্বর কর্মপরিকল্পনা অনুসারে পূর্বাচল নতুন শহরে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ স্থাপনে অর্থায়নসহ যাবতীয় দায়িত্ব গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত করা হয়। এখানে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থাপত্য অধিদপ্তর ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) দায়িত্ব দেয়া হয়। যা পূর্বাচল নতুন শহরের সেক্টর-৫ সড়ক-১০৩ এর কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা-কালীগঞ্জ বাইপাস সড়কের মধ্যে পড়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুরোধে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১৫ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর সড়কের ১৭ নম্বর প্লটে ২ দশমিক ৩১৯ একর জমি চূড়ান্ত করা হয়েছে। যার পাশ ঘেষে ১০০ ফুট চওড়া রাস্তা রয়েছে। নতুন কূটনৈতিক পাড়া দুই কিলোমিটার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বরাদ্দকৃত স্থান ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের হাতের উচ্চতা নির্ধারণ হয়েছে ৭১ ফুট যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী বছরকে বুঝানো হবে। ভিত্তি থেকে ব্রোঞ্জের তর্জনীর উচ্চতা প্রায় ১১৩ ফুট করা হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলমের স্বাক্ষরিত চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু চত্বর বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে সহযোগিতা ও দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকারিয়া মিঠুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ভাস্কার্যের বেদী, ভিত্তি ও অন্যান্য অবকাঠামো: ভাস্কার্যটি বহু দূর হতে দৃশ্যমান করতে স্থাপত্য নকশায় ভূমি হতে প্রায় ৪২ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট বেদী করা হবে। বেদীসহ ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে কাঠামোগত নকশায় কাস্ট-ইন-সিটু পাইল করা হবে। রাজউক প্রণীত মাস্টার প্ল্যান মোতাবেক এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজউকের মাস্টার প্ল্যানে কৃত্রিম লেকের পাশে ২ মিটার চওড়া সাইকেল ট্র্যাক ও ২ দশমিক ৫৭২ মিটার চওড়া ওয়াকওয়ে থাকবে। ভাস্কার্য নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডিপ টিউবওয়েল থাকবে। বঙ্গবন্ধু চত্বরে ফুলের বাগানের পরিকল্পনা রয়েছে।

ভবন নির্মাণ : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কার্যটি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ৮শ’ বর্গফুট একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ও লোকজনের বসার জায়গা তৈরি করা হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ভবনটিতে রাখা হবে।

গেইট ও গেইট হাউজ: স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রণীত নকশা মোতাবেক গেইট ও গেইট হাউজের প্রাক্কলন পৃথকভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় প্রবেশকারীসহ যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে রিভল্বিং গেইট বিবেচনা করা হয়েছে। গেইট হাউজের সাতে একটি ভিজিটরস ওয়েটিং রুম বিবেচনা করা হয়েছে। এই রুমে দর্শনার্থীগণ যেন মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন সেজন্য ‘পরিদর্শন বই’ সংরক্ষণ করা হবে।

আরবরিকালচার ও ল্যান্ডস্কেপিং কাজ: বঙ্গবন্ধু চত্বরের কাজ শেষে দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের অবাধ চলাফেরাসহ নান্দনিক স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে। সে লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ভাস্কর্যের চতুর্দিকে স্থাপত্য নকশা অনুযায়ী দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক ধ্যান ধারণার সন্নিবেশ ল্যান্ড স্কেপিং ডিজাইন সৃজন করা হয়েছে। ডিজাইন মোতাবেক ল্যান্ড স্কেপিংয়ের বিভিন্ন দফা যথা সবুজ চত্বর সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রাকৃতিক ঘাস স্থাপনসহ বিভিন্ন ফুলের বাগানসহ আরবরিকালচার ও ল্যান্ডস্কেপিং কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ চলতি মাসে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভাস্কর্যটি তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরবে। পূর্বাচল নতুন শহর এলাকার শিশু-কিশোরসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও কর্মকে উপস্থাপনের মূর্ত প্রতীক হিসেবে কাজ করবে এই বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।

-কেএম

FacebookTwitter