রাবি প্রতিনিধিঃ

“যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না” ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী মহান শিক্ষক ড.শামসুজ্জোহার ক্ষেত্রে উক্তিটির প্রতিফলন দৃশ্যমান। শাহাদাতের ৫১ বছর পেড়িয়ে গেলেও আজও মেলেনি জাতীয় স্বীকৃতি।

অগ্নিঝরা ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের যখন চারদিক তোলপাড়, মৃত্যুকে হাতের মুঠিতে নিয়ে শত্রুর বুলেট আর বেয়নেটের আঘাতে আত্মত্যাগ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নিজের জীবন উৎসর্গ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড.শামসুজ্জোহা।

প্রতি বছর দিবসটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।

মঙ্গবার( ১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ জোহার মাজার ও স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, আবাসিক হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতি, রিপোর্টার্স ইউনিটি, শাখা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

এদিকে দিনটিকে জোহা দিবসে সীমাবদ্ধ না রেখে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে মানবন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে মাববন্ধনে অংশ গ্রহন নেয়।

এছাড়াও গণস্বাক্ষর কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশন ও প্রথম আলো বন্ধু সভা।

অন্যদিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে ড. ‘জোহা স্মারক বক্তৃতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশর সাবেক হাইকমিশনার অধ্যাপক ড. এম সাইদুর রহমান খান বলেন, ড. জোহা ছাত্র শিক্ষক সম্প্রীতির এক জলন্ত উদাহরণ। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত সার্জেন্ট জহরুল হককে ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলখানায় গুলি করে হত্যা করা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদুল্লাহ্ কলাভবনের সামনের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ড. জোহা বলেছিলেন, যে কোন ছাত্রের শরীরে গুলি লাগার আগে যাতে আমার গায়ে গুলি লাগে। জোহা তার জীবনদানের মধ্য দিয়ে সেটি প্রমাণ করে গেছেন। জোহার মৃত্যুর পরে কারফিউ জারি করা হয় এবং তার মৃত্যু সংবাদ আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ঢাকায় সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে প্রতিবাদ মিছিল হয়।

জোহা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন আরও তরান্বিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু প্রমুখ।

এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পযর্ন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখাসহ বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআনখানি ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে দোয় মাহফিল ও প্রদীপ প্রজ্জলন অনুষ্ঠিত হবে।

FacebookTwitter

About Bangla Daily

একটি পরিপূর্ণ বাংলা অনলাইন পত্রিকা। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি সস্প্রচারিত হচ্ছে।

View all posts by Bangla Daily