অনলাইনঃ
শিল্পোন্নত জাপানে তরুণ-তরুণীদের স্বাধীন জীবনযাপন ও বিলাসী মনোভাব দেখে তাদের মনে তৈরি হয় জাপান যাওয়ার আগ্রহ।
সেজন্য তারা শিখছিল জাপানী ভাষা; এরপর জাপান যেতে ঘর ছাড়ে ৩ ছাত্রী।
নিখোঁজ ঢাকার পল্লবীর তিন কলেজছাত্রীকে উদ্ধারের পর এই তথ্য জানিয়েছে র্যাব। র্যাব জানায়, “জাপানি সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক হওয়ার সুযোগ এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি-নিষেধ না থাকার কারণেই জাপান যেতে পরিকল্পনা করে তারা।”
পরিকল্পনা অনুযায়ী নৌপথে জাপান যেতে ওই তিন কিশোরী কক্সবাজার পর্যন্তও গিয়েছিল। কিন্তু ভয় পেয়ে তারা ঢাকায় ফিরে আসে। আর ফেরার পর বুধবার ভোরে তাদের মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে উদ্ধার করে র্যাব।
এই তিন বান্ধবী মিরপুর-পল্লবী এলাকার পৃথক তিনটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
গত ১ অক্টোবর সকালে তারা কলেজে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে জানা যায়, তারা সবাই বাসা থেকে টাকা, গয়না ও স্কুল সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়েছে।
তাদের মধ্যে এক ছাত্রীর বোন অপহরণের অভিযোগ এনে গত ২ অক্টোবর পল্লবী থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় ইতোমধ্যে তিন কিশোরীর পরিচিত ও চারজন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই কিশোরীদের উদ্ধারের পর বুধবার র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অপহরণ মামলা হওয়ার পর পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-৪ ছায়া তদন্ত শুরু করেছিল। নানা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে তারা কক্সবাজারে অবস্থান করছে।
সেখান থেকে বুধবার রাতে তারা ঢাকায় ফিরলে র্যাব তাদের উদ্ধার করে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় পুরো ঘটনা।
এই কিশোরীরা র্যাবকে বলেছে, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা নিয়ম মানতে পরিবারের চাপ তাদের বিতৃষ্ণ করে তুলেছিল।
সোশাল মিডিয়ায় আসক্তিতে তারা লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলে। পাশাপাশি ইন্টারনেটে দেখে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি তারা আগ্রহী হয়ে ওঠে।
ইন্টারনেটে জাপানি নাটক-সিনেমা দেখার পাশাপাশি জাপানি ভাষাও আয়ত্ত করা শুরু করে তারা্ এবং সুযোগ খোঁজে কীভাবে জাপান যাওয়া যায়।
র্যাব জানায়, দুই মাস আগে তিন বান্ধবী তাদের আরেক বন্ধুর সঙ্গে মিরপুরের দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে ২৪/২৫ বছরের এক নারীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়, এরপর তারা ফেইসবুকে তাকে বন্ধু করে নেয়।
তিন কিশোরীর আগ্রহ দেখে হাফসাই তাদের জাপানে নেওয়ার পরিকল্পনা সাজায়।
“হাফসা চৌধুরীর পরিকল্পনায় ওই তিন বান্ধবী বাসা থেকে বের হয়ে জাপানে যাওয়ার উদ্দেশে প্রথমে গাবতলীতে যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেন তাদের অবস্থান চিহ্নিত না করতে পারে, সেজন্য তারা নিজেদের ই মেইল, ফেইসবুক আইডি ও মোবাইল গাবতলী এলাকায় ধ্বংস করে ফেলে।”
পরে তারা নৌকায় নদী পার হয়ে আমিন বাজার পৌঁছায়। সেখানে হাফসার দুই সহযোগী একটি কালো রঙের নোয়া গাড়ি নিয়ে তৈরি ছিল বলে ওই তিন কিশোরী জানায়। ওই গাড়ি তাদের অচেনা একটি স্থানে নামায়। এরপর অটোরিকশায় করে তাদের নেওয়া হয় কমলাপুর রেলস্টেশনে।
কিন্তু চট্টগ্রামের ট্রেন তখন না পেয়ে তারা বাসে উঠে কুমিল্লার ময়নামতিতে গিয়ে নামে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পথিমধ্যে তারা নিজেদের পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে নিজেদের চুল কেটে ফেলে পশ্চিমা বেশ ধারণ করে। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছে তারা কেডস্, পোশাক ও একটি মোবাইল ফোন কিনে।”
এরপর কুমিল্লা থেকে বাসে চট্টগ্রাম যায় ওই তিন কিশোরী। চট্টগ্রাম সিনেমা প্যালেস মোড়ে নেমে দুটি মোবাইল ফোন কেনে। তারপর বাসে করে কক্সবাজার গিয়ে কলাতলীতে একটি হোটেলে ওঠে। তারা ১ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারে ছিল। এসময় অবস্থান গোপন রাখতে তারা মোবাইল ইন্টারনেটের পরিবর্তে ওয়াইফাই ব্যবহার করছিল।
ওই তিন কিশোরী বলেছে, ২ অক্টোবর কক্সবাজার সৈকতে ‘হাফসার লোক’ আসিফ ও শফিকের (৩০-৩২ বছর বয়সী) সঙ্গে দেখা করে তারা। ওই দুজন তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নিলে তারা আতঙ্কিত হয়ে হোটেলে ফিরে আসে।
র্যাব জানায়, হোটেলেই থাকে তারা, কিন্তু হোটেলের আশপাশে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা ৫ অক্টোবর রাতে বাসে ওঠে। ৬ অক্টোবর বুধবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছে বেড়িবাঁধ এলাকায় গেলে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, হাফসা নামের ওই নারীকে শনাক্ত করার পাশাপাশি কক্সবাজারে থাকা ওই দুই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
-ডিকে