নিয়োগকর্তারা শিশুদের ঝূঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করেন -বেইজলাইন

অনলাইনঃ
যদিও বেশীরভাগ নিয়োগকর্তা শিশুশ্রমের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে অবগত, তথাপি তারা শিশুদেরকে ঝূঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করেন। তবে তারা শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালা এবং এর প্রবিধান সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানেন না।

যেহেতু প্রাপ্ত বয়স্ক কর্মী নিয়োগকরা ব্যয়বহুল এবং অনেকসময় দুষ্প্রাপ্য, তাই তারা শিশুদেরকে গৃহকর্মে নিয়োগ করেন। ট্রান্সপোর্ট ও গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের নিয়োগকারীরা মনে করেন, যেহেতু এসব শিশু অতি দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে তাই তাদের এ উপার্জন তাদের পরিবারের জন্য সহায়ক। শিশুরা যাতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

বেইজলাইন জরীপ থেকে প্রাপ্ত এসব তথ্য ও সুপারিশমালা আজকের ট্রান্সপোর্ট ও গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুশ্রম সম্পর্কিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। চাইল্ড ফান্ড কোরিয়ার আর্থিক সহায়তায় এডুকো দুই বৎসর মেয়াদী অপশনস ফর ডিগনিটি অফ হিউম্যান বিং বাই ইনফ্লুইনসিং কি এ্যাকটরস টু রিফর্ম (অধিকার) পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার সহযোগি সংগঠন হিসাবে কাজ করছে ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেন (ইএসডিও)। এই প্রকল্পের আওতায় দুইটি নির্দিষ্ট সেকটরের উপর একটি বেইজলাইন জরীপ পরিচালনা করা হয়, যা এই অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়। শরফুদ্দিন খান, চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিষ্ট এবং স্টাডি টিম লিডার জরীপের ফলাফল উপস্থাপন করেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ মুজিবুল হক, এমপি প্রধান অতিথি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি জনাব মুজিবুল হক, এমপি বলেন, শিশুশ্রম নিরসন করার জন্য আমাদের নিজেদের ঘর থেকে কাজ শুরু করতে হবে। শুধুমাত্র আইন ও নীতিমালা দিয়ে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবেনা, এজন্য নীতি নির্ধারক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যসহ সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের ইতিবাচক মানসিক পরির্তন প্রয়োজন।

বিশেষ অতিথি জনাব আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, যদি আমরা আইনী কাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বৃদ্ধি, অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করতে পারি, তাহলে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসন করা অবশ্যই সম্ভব।
এডুকো’র কান্ট্রি ডাইরেক্টর জনাব জনি এম সরকার বলেন, সরকার এবং এনজিওদের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে শিশুশ্রমিকদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সরকার কর্তৃক গৃহীত ২৮৪ কোটি টাকার শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্প খুব শীঘ্রই শুরু হবে, যা এক লক্ষ শিশুকে ঝূঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে প্রত্যাহার করতে সহায়ক হবে।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের মৌলিক অংশ:
• ৪৬. ৯৬% শিশু গৃহকর্মীদের শারীরিক আঘাতের শিকার হচ্ছে, ৩৫.৫১% মানসিক সমস্যায় ভুগছে, ৬৮.৪৯% তাদের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে বকুনির শিকার হচ্ছে, এবং ১৭.১৪% জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

•পরিবহনক্ষেত্রে ৬৮.৪৯% শিশু পরিবহন শ্রমিক প্রায়ঃশই তাদের নিয়োগকর্তা এবং যাত্রীদের কাছ থেকে নিগৃহীত হয়। ৬৪.০৪% শারীরিক আঘাতের ঝুঁকিতে রয়েছে, ৩৬.৯৯% হতাশায় ভুগছে।

•পরিবহনক্ষেত্রে শিশুদের বেশিরভাগ ঢাকা শহরে হিউম্যান হলার-এ কাজ করতে দেখা যায়। ঢাকায় হিউম্যান হলার গুলোর ৩১টি রুট রয়েছে যার মধ্যে প্রায় ১৬৪২টি হিউম্যান হলার প্রতিদিন চলাচল করে। প্রায় ১০৬৮জন শিশুশ্রমিককে হিউম্যান হলারের সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করতে দেখা গেছে।

•৮৩.৬৫% শিশু গৃহকর্মী এবং ৬৯.৩৮% শিশু পরিবহন শ্রমিক এর বয়স ৮ বছর থেকে ১৩ বছরের মধ্যে।
• গবেষণায় জানা গেছে যে, বেশিরভাগ শ্রমজীবী শিশু এবং তাদের পিতামাতাদের শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালা সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। তবে, বেশিরভাগ নিয়োগকর্তাদের শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইন ও নীতি সম্পর্কে ধারণা আছে।

•৫৮.৭৩% শিশু গৃহকর্মী কখনও স্কুলে যায়নি, এবং ৮২.৬৮% শিশু পরিবহন শ্রমিক কখনও স্কুলে যায়নি।
•৯৬.৪৩% শিশু গৃহকর্মী এবং ৯৯.৩২% শিশু পরিবহন শ্রমিকরা নিকটবর্তী কারিগরি বিদ্যালয়ের অনুপস্থিতির কারণে কোনও প্রযুক্তিগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারছে না।
•এই গবেষণায় শ্রমজীবী শিশুদের পিতামাতাকে সহায়তা করছে এমন কোনও কর্মসংস্থান বা উপার্জনমূলক উদ্যোগের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

• শ্রমজীবী শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে কোনও উপবৃত্তি বা অনুদান দেয়া হয়নি।

•৮৩.২৭% শিশু গৃহকর্মী এবং ৮৬.১১% শিশু পরিবহন শ্রমিকের সঠিক স্বাস্থ্যসেবার ধারণা নেই। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ফার্মেসির প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ কিনে থাকে।

FacebookTwitter