অনলাইনঃ
লোকাল বাস গানটি দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে দেশ বিদেশের শ্রোতাদের মধ্যে বেশ আলোচনায় আছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম।
নারী জাগরণের অংশ হিসেবে নারী জীবনের গতি বাড়াতে এবার বাজারে এলো পথের সাথী নামে একটি সেবা কার্যক্রম।
৪ মে সকালে ঢাকার লেডিস ক্লাবে এই সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম।
‘সকল সফল নারীগণ এখানে রয়েছেন, কেউ রাজনীতি, কেউ পর্যটক, কেউ ব্যাংক খাত আর আমি গানেরে মাধ্যমে বিচরণ করেছি। আমরা সবাই এখানে এসেছি তরুণ নারীদের অনুপ্রেরণা দিতে, তাদের সাহস যোগাতে। সবাইকে একটি কথাই বলতে চাই, সবাই মিলে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাব।
পথের সাথীর এটি খুব ভালো উদ্যোগ, যার মাধ্যমে দেশের নারীরা আরো বেগবান হবে তাদের কর্মক্ষেত্রে। বেসরকারিভাবে এরকম আরো উদ্যোগ দেশের নারীদেরকে আরো সমৃদ্ধ করবে। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘আমার গাওয়া লোকাল বাস গানটি অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। আমি সব সময় ফোক ঘরানার গান করতাম, তার মাঝ থেকে এমন একটি র্যা প গান গাওয়া সত্যিই অনেক সাহসী পদক্ষেপ ছিল আমার জন্য। অনেকেই বলেছেন মমতাজের এই গানটি গাওয়া ঠিক হচ্ছে না, তারপরও আমি সাহস নিয়ে গানটি গাই, যার ফলাফল আজকে আপনারা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। তাই বলবো এমন সাহসী পদক্ষেপই সবাইকে নিতে হবে যার যার কর্মস্থল থেকে। তাহলেই দেশে এগিয়ে যাবে।
নারী পুরুষ সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক সাথে আগাতে হবে তবেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। আমি আমার কষ্টের উপার্জনের টাকায় চক্ষু হাসপাতাল করেছি, আরো উন্নয়নমূলক কাজ করি। দিনে শেষে আমরা কেউই থাকবো না, আমাদের কাজগুলোই থাকবে।’ এরপর তিনি খালি গলায় অনুষ্ঠানে তার জনপ্রিয় গান লোকাল বাসটি গেয়ে শোনান।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘আমরা একা কেউ চলতে পারি না, নারী পুরুষ একজন আরেকজনের উপর নির্ভরশীল। তাই নারীকে চার দেয়ালের মাঝে বন্দি করে রাখলে চলবে না, তাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে পুরুষদেরই সহযোগীতা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু নারীদের সমান অধিকার দিয়ে গেছেন, কিন্তু আমাদের দূর্ভাগ্য যে তাকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি।
বর্তমান সরকার তারই যোগ্য উত্তরসুরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাকে সহযোগীতার মাধ্যমেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমি যখন প্রতিমন্ত্রী ছিলাম, তখন অনেকেই আসতো বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে, কেউ সেলাই মেশিন বা কেউ হাতের কাজের জন্য আসতো। তখন প্রধানমন্ত্রী বলতেন যে এভাবে সেলাই মেশিন দিয়ে কী চলবে? এতে নারীরা তো ঘরেই বন্দি হয়ে রইলো। তখন আমরা নারীদেরকে সিএনজি চালনার মতোও ব্যবস্থা করেছি। আজকের এই ধরনের স্কুটি সার্ভিস প্রদক্ষেপ নারীদেরকে আরো চলমান করবে, এগিয়ে যেতে আরো উৎসাহ যোগাবে।’
চুমকি আরো বলেন, ‘সমাজ নারীদেরকে বঞ্চিত করে রেখেছে, এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। নুসরাতকে আজ প্রতিবাদের কারণেই জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও থেমে থাকলে চলবে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যেতেই হবে। কোন ধরনের লোভের কারণে অন্যায়কারীকে সহযোগীতা করা যাবে না। অনেক পুরুষের ধারণা নারীদের এগিয়ে দিয়ে সমাজকে ধ্বংস করা হচ্ছে, এই ধরনের মন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। মেয়ে শিশুদের কোনো কাজে দমিয়ে রাখলে চলবে না, তাদেরকে প্রতিভা বিকাশে সুযোগ দিতে হবে। তবেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। পুরুষদের শুধু পাওয়ার মানসিকতা বাদ দিয়ে দেয়ার মানসিকতাও তৈরি করতে হবে, নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই, তাদেরকে অনেক দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে, তবেই দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। সবার জন্য শুভ কামনা।’অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি।
অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রতিষ্ঠান মিহা.কম.বিডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধুমাত্র নারীরা সহজ কিস্তিতে কোনো রকম জামানত ছাড়াই ভেসপার স্কুটি নিতে পারবেন পথের সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে। আগামীতে শুধুমাত্র নারীদের জন্য একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপের সেবাও তারা চালু করবেন।
প্রফেসর সাহিদা নাজরিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নারী জাগরণ, নারী উন্নয়ন ও গণপরিবহনে নারীর ভোগান্তি বিষয়ে আলোচনা করেন নার্গিস রহমান এমপি, সাংসদ সংরক্ষিত নারী আসন ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগ, নাজমুন নাহার হেলেন, কাউন্সিলর (২৪, ২৫ ও ৩৫ নং ওয়ার্ড), রানধীর সিং, সিইও, কে আর ইন্ডাস্ট্রিজ, ভেসপা বাংলাদেশ, খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ তাঁতী লীগ, আনোয়ারা বেগম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, প্রবাসী পল্লী গ্রুপ ও সাবেক ডিজিএম অগ্রণী ব্যাংক, নাজমুন নাহার, বিশ্ব পর্যটক।