শিশির মোজাম্মেল:
‘ওমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ ফেস্টিভ্যাল (ওয়াও ফেস্টিভ্যাল) বাংলাদেশে তাদের পরবর্তী আয়োজনের তারিখ ঘোষণা করেছে ।
আগামী ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মূল মাঠ ও চিত্রশালা ভবনে অনুষ্ঠিত হবে দুই দিনব্যাপি এই উৎসব।
নারী-ভিত্তিক উৎসবটির আয়োজক হিসেবে ইউকে চ্যারিটি- ওয়াও ফাউন্ডেশনের সাথে অংশীদারিত্বে থাকছে বৃটিশ কাউন্সিল, মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন এবং সিসিডি বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ‘ওমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা জুড কেলি। ২০১০ সালে এই ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করে। এ ফাউন্ডেশন নারীদের সংগ্রাম এবং সাফল্যের গল্প তুলে ধরে লিঙ্গবৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি একটি বৈশ্বিক উৎসব।
বিশ্বব্যাপী নারীদের এগিয়ে চলার পথে সমাজে যেসব বাধা বা সমস্যা সৃষ্টি হয়, তা সমাধানে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে ঢাকায় জাতীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
করোনা মহামারির সময়েও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নারী প্রতিনিধিদের নিয়ে ভার্চ্যুয়াল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, এবারের উৎসবে লিঙ্গ সমতার বিষয়ে শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান থাকবে। নারীর ক্ষমতায়নের উদ্ভাবনী পন্থা খুঁজে বের করা, বিভিন্ন সম্প্রদায়কে নারী অধিকার সম্পর্কে বোঝাতে অংশগ্রহণমূলক কর্মশালা পরিচালনা করা, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার ও পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ পাবেন উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা।
উৎসবে উদ্যোক্তারা পণ্য প্রদর্শনীর সুযোগ পাবেন। উৎসবটিতে সংগীত পরিবেশনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, পারফরম্যান্স আর্ট, কনসার্টসহ অন্য আয়োজনও থাকবে। আয়োজকেরা বলছেন, এই উৎসবের মধ্য দিয়ে সমাজে বিদ্বেষ ও বৈষম্যময় পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করতে মানুষকে একত্রিত করা যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কালচারাল এনগেজমেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইফরা ইকবাল বলেন, ‘ওমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ একটি প্ল্যাটফর্ম বা সমতাপূর্ণ সমাজ গঠনের আন্দোলন।
এ উৎসব কেন হচ্ছে তার উত্তরে বলা যায়—জেন্ডার সমতার বিষয়টি প্রতিষ্ঠা হোক, তা সবাই চাইলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ব্রিটিশ কাউন্সিলের অগ্রাধিকারের তালিকায় নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্য বিষয় থাকায় এ উৎসব আয়োজনে অংশ নিচ্ছে।
মঙ্গলদীপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সারা যাকের বলেন, ওয়াও ফ্যাষ্টিভ্যালটি হলো একটি নারী উৎসব। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের নারীরা অনেক বাধাবিপত্তি সত্বেও অনেক বেশি এগিয়ে যাচ্ছে।
আবার অন্তরায়ের কথা উল্লেখ করে আরেক বক্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নারীরা আয় করছে কিন্ত আয়ের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
তিনি আরো বলেন, নারীদের পুরুষ সমানে এসে দাঁড়াতে হলে এই উদযাপনটা করতেই হবে। বক্তব্যের শেষে সবাইকে উৎসবে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
জাকিয়া হক, ওয়াও এর কিউরেটর হিসেবে যুক্ত তার প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ পাথওয়েজ। তিনি জানান, উৎসবে ৩০টি স্টল থাকবে, যাতে উদ্যোক্তারা তাঁদের উদ্ভাবিত পণ্যগুলো তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। এস স্টলের নাম না বলে চমক হিসেবে গোপন রেখেছেন তিনি। স্টলগুলোতে নানান ধরনের পণ্যের সমাহার থাকবে।
চিরকুট ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও নতুন ধারার সংগীতশিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি জানালেন, নিতি পারিবারিকভাবে নারী পুরুষ ভেদে বড় হননি। তাঁর পরিবার থেকেই তিনি নারী পুরুষ সমভাবে চলার শিক্ষা নিয়েই বড় হয়েছেন।
সুমী চিরকট ব্যান্ড গড়ার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রায় শূন্য হাতে গড়ে তোলা চিরকুট ব্যান্ড। এই ব্যান্ড দলের গল্প নিয়ে তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারিতে হাজির থাকবেন উৎসবটিতে।
তিনি বলেন, দক্ষতা, যোগ্যতা থাকার পরও অনেক নারী সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পান না। এই নারীদের সাহস দিয়ে বলতে হবে—এগিয়ে যাও, তোমার পাশে আমরা আছি।
তিনি বলেন, নারীর চলার পথে কোনো বাধা যাতে না আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এখন পর্যন্ত সমাজে নারীরা একটি পর্যায় পর্যন্ত যাবে, তা মেনে নেওয়া হলেও নারী যখন অনন্য ভূমিকায় যেতে চায়, তখনই চারপাশ থেকে বাধা আসতে থাকে।
সিসিডি বাংলাদেশের যুগ্ম পরিচালক শাহানা পারভীন বলেন, আগের উৎসবগুলো থেকে এবার আরো বড় আকারে ওয়াও ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের প্রস্ততির কথা জানান। এবার সারাদেশ থেকে নারীরা যেন যোগদান করতে পরেন এবং এই প্ল্যাটফরমে এসে তাদের কথাগুলো বলতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান।
এ ছাড়া তিনি জানান, যুবদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে, মাসিক নিয়ে ট্যাবু বা নারীদের বিভিন্ন নির্যাতনের বিষয়গুলো সামনে এসেছে—এ ধরনের সমস্যা সমাধানে কথা বলার সুযোগ পাবেন উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা।
-শিশির