নানীর গর্ভে নাতনীর জন্ম!

আন্তর্জাতিকঃ

যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার ৬১ বছর বয়সী এক নারী তার গর্ভেই নিজের নাতনিকে জন্ম দিয়েছেন। সিসিল এলেজ তার সমকামী পুত্র ম্যাথিউ এলেজ এবং তার স্বামী এলিয়ট ডোহার্টির কন্যা সন্তান উমা লুইসের জন্ম দিয়েছেন।

এলেজ বলেন তার ছেলে এবং ডোহার্টি যখন তাকে জানায় যে তারা সংসার শুরু করতে চায়, তখন তিনিই তাদের এই প্রস্তাব দেন।

এলেজ বিবিসিকে বলেন, দু’বছর আগে তিনি যখন এই প্রস্তাব দেন তখন তার পরিবারের সদস্যরা এটিকে গুরুত্বের সাথে নেয়নি। শুরুতে তারা সবাই এই পরিকল্পনা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এলেজ এবং ডোহার্টি যখন সন্তানের বিষয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন, তখন একজন চিকিৎসকের পরামর্শে মত পরিবর্তন হয় তাদের।

সারোগেট মা হওয়ার জন্য এলেজের একটি ইন্টারভিউ নেয়া হয় এবং অনেকগুলো পরীক্ষা করা হয়। প্রক্রিয়ায় এলেজ শুক্রাণু প্রদান করেন এবং ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয় ডোহার্টির বোন লেয়া’র কাছ থেকে।

নরসুন্দরের কাজ করা ডোহার্টি বলেন, সাধারণ যুগলদের জন্য আইভিএফ বা তৃতীয় একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার চিন্তা করা সাধারণত অনেকগুলো পছন্দের শেষ পছন্দ হলেও তাদের মত সমকামী যুগলের জন্য নিজেদের সন্তান পাওয়ার এটিই ‘একমাত্র আশা।’

স্কুলশিক্ষক এলেজ বলেন, সবসময়ই জানতাম নিজেদের সন্তান চাইলে আমাদের ভিন্নধর্মী কিছু ভাবতে হবে।

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর এলেজের অধিকাংশ অভিজ্ঞতা ইতিবাচকই ছিল বলে জানান তিনি। তবে এলেজের অন্য দুই ভাইবোন শুরুতে তাদের মা’র গর্ভবতী হওয়ার খবর শুনে কিছুটা চমকে গিয়েছিল বলে জানান এলেজ।

তবে এই ঘটনার ফলে নেব্রাস্কায় এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সাথে হওয়া বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়টি অনেকটাই প্রকাশিত হয়েছে।

২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট সমকামী বিয়েকে বৈধতা দিলেও ঐ রাজ্যে যৌনতাকে কেন্দ্র করে বৈষম্য রোধ করার কোনো আইন এখনো নেই।

প্রাচীন এক আইন অনুযায়ী, ২০১৭ পর্যন্ত নেব্রাস্কা রাজ্যে সমকামী পুরুষ ও নারী যুগলের জন্য সন্তান দত্তক নেয়া নিষিদ্ধ ছিল।

এলেজ বলেন, নিজের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচের জন্য তার বীমা প্রতিষ্ঠানের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে হয় তাকে। তিনি যদি তার নিজের সন্তান জন্ম দিতেন, তাহলে বীমা প্রতিষ্ঠান তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচ বহন করতো, কিন্তু এক্ষেত্রে শেষপর্যন্ত বীমা প্রতিষ্ঠান খরচ বহন করেনি।

আরেকটি আইন অনুযায়ী, সন্তানের জন্মদাত্রীকে মা হিসেবে চিহ্নিত করায় সদ্যজাত উমা’র মা হিসেবে তার জন্ম সনদে দেয়া হয়েছে এলেজের নাম, এবং পিতার নাম হিসেবে জায়গা পেয়েছে তারই পুত্র এলেজের নাম। এলেজের স্বামী ডোহার্টির নাম বাদ দেয়া হয়েছে জন্ম সনদ থেকে।

এলেজ বলেন, আমাদের পথে কী পরিমাণ বাধা ছিল, তার একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ এটি।

চারবছর আগে স্কুট ক্যাথলিক হাই স্কুলের শিক্ষক এলেজ যখন স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানান যে তিনি ডোহার্টিকে বিয়ে করতে চান, তখন তাকে চাকরীচ্যুত করা হয়। এনিয়ে সে সময় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি বাংলা।


FacebookTwitter