নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাডিয়ান বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি নাইকো কর্তৃক ছাতকের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে সংগঠিত বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিপূরণের মামলার আংশিক রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তির প্ল্যাটফর্ম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপুটেড (ইকসিড) গত ফেব্রুয়ারি মাসে রায় ঘোষণা করে। পূর্ণাঙ্গ রায় পেতে আরও দেড় বছর সময় লাগবে।
আংশিক রায়ের ভিত্তিতে জ্বালানি বিভাগ দাবি করেছে, নাইকোর কাছ থেকে বাংলাদেশ এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পাবে। তবে কানাডিয়ান কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়েছে। বাংলাদেশে থাকা নাইকোর অর্থ ও সম্পত্তি থেকে ৩১০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যেতে পারে। ক্ষতিপূরণের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থই আদায়ের বিষয়টি পুরো অনিশ্চিত।
রোববার দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে রায়ের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়। এ সময় জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, দীর্ঘ ১০ বছর আইনি প্রক্রিয়ার পর এই মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইকসিড এই রায় প্রদান করে। মার্চে শুরুতে সংবাদ সম্মেলন করে রায় জানানোর কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির জন্য তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান বলেন, নাইকো ২০০৩ সালে বাংলাদেশের ছাতক গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান উন্নয়নের কাজ পায়। একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে প্রান্তিক দেখিয়ে নাইকোকে কাজ দেওয়া হয়। নাইকোর অদক্ষতায় দুই দফা এই গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বিপুল রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়।
প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে যে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয় তা ২০১৮ সালে ইকসিডে জমা দেওয়া হয়েছে। ইকসিড রায়ে বলেছে নাইকোর গাফিলতি এবং অদক্ষতার জন্যই বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফলে এর দায় নাইকোকেই নিতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
মামলাটির আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গণি জানান, বাপেক্স এর ১১৮ মিলিয়ন ডলার এবং পেট্রোবাংলার ৮৯৬ মিলিয়ন ডলার মিলিয়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এর বাইরে আদালত বলেছেন, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি নিরুপণ করে আদালতে জমা দিতে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
তিনি আরও জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে আরও একটি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেটি সম্ভব হবে না। ফলে পরিস্থিতি ভাল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আগামী বছরের মাঝামাঝি পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া যেতে পারে।
তিনি জানান, প্রতিবেশ ও পরিবেশ এবং স্বাস্থগত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তাদের দিয়ে পুনরায় মূল্যায়ন করে ইকসিডে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফেনীর গ্যাসক্ষেত্রের বিক্রিত গ্যাসের দাম হিসেবে নাইকো পেট্রোবাংলার কাছে ৩০ মিলিয়ন ডলার পাবে। এটা আদালতের নির্দেশে এই অর্থ এখনো নাইকো পরিশোধ করেনি। ক্ষতিপূরণের অর্থ এখান থেকে সমন্বয় করা হবে। এছাড়া স্থলভাগের ব্লক-৯ এ বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রে নাইকোর সম্পত্তি থেকে ক্ষতিপূরণ উসুল করা যাবে।
বাঙ্গুরার সম্পত্তি তারা বছর কয়েক আগে ২৮০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করতে চেয়েছিল। সব মিলে বাংলাদেশ এক বিলিয়নের মধ্যে ৩১০ মিলিয়ন ডলারের মতো পেতে পারে।
এই সময় জ্বালানি সচিব বলেন, পুরোটা না পেলেও কিছু তো পাচ্ছি। আবার এর ফলে বিশ্বের কাছেই একটি সুন্দর বার্তা পৌঁছেছে। এটিও বিবেবচনা করতে হবে।
গ্যাসকূপ খনন করার সময় ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাতকে প্রথম দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আবার চেষ্টা করতে গেলে আরও এক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে খনিটিতে থাকা গ্যাসও পুড়ে যায়। স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য বিলুপ্ত হয়। এখনও ছাতকে এই গ্যাসক্ষেত্রের আশেপাশের এলাকায় গ্যাস উদগীরণ ঘটছে।
-এফকে