অনলাইনঃ
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদ নির্মাণে মানা হয়নি কোনো প্রকার নিয়ম। এটি নির্মাণকালে গ্যাসের পাইপও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়া গোপনে দুজন গ্রাহক মাটির নিচ দিয়ে গ্যাসের রাইজার টেনে নেন। এরপর বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে ওই অগ্নিকাণ্ড হয়।
আর ওই বিদ্যৎ সংযোগ অবৈধভাবে নেয়া হয়েছিল। মসজিদ বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। এ সময় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন।
ওই তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন আব্দুল ওহাব। তিনি বলেন, তিতাস গ্যাসের নিয়ম না মেনে গ্রাহক তাদের নিজ উদ্যোগে তাদের রাইজারগুলো নরমালভাবে প্লাগ এবং সকেট দিয়ে স্থানান্তর করে। এটি ১৯৯৮ সালের দিকে করা হয়। আমাদের লাইনগুলো ১৯৯৬ সালে দুর্ঘটনাস্থলের নিচে বসানো হয়েছিল। তারা নিয়ম না মেনে আমাদের লাইনের নিচে দিয়ে বেইজমেন্ট তৈরি করে। এরপর ২০০০ সালে মসজিদের স্থাপন করে। মসজিদটি নির্মাণের সময়ই লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি আরো বলেন, লিকেজ না হওয়া পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায় না। যেহেতু আমাদের গ্যাস লাইন অবৈধভাবে স্থানান্তরিত করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে মসজিদ নির্মাণের সময় পুরাতন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখান থেকে লিকেজ তৈরি হলে গ্যাস লিক হতে থাকে।
আব্দুল ওহাব আরো বলেন, মসজিদের মেঝেতে ৬/৮ সিসি ঢালাই দেয়া হয়নি। এতে করে গ্যাস মসজিদের এসি চেম্বারে জমা হয়। আর বিদ্যুৎ গেলে বিকল্প লাইন চালু করলে সেখানে স্পার্ক করে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলেও মনে করেছে তদন্ত কমিটি।
তিনি আরো বলেন, দেওয়ান ও শওকত আলী নামের দুই ব্যক্তি অবৈধভাবে তিতাসের নিয়ম না মেনে গ্যাস লাইন স্থানান্তর করে। এছাড়া মসজিদে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ ছিলো। আর গ্যাস লিকের বিষয়টি মসজিদ কমিটি বা স্থানীয়রা কাউকে জানায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় গ্যাসের লাইন সারানোর জন্য কারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল সে বিষয়ে মসজিদ কমিটি কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি উল্লেখ করেন আব্দুল ওহাব।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা প্রায় ৫০ জনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়াহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তারা। তাদের মধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলা হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছিল, এসি নয়, গ্যাসলাইন থেকে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
এ ঘটানার পর মসজিদ কমিটির দাবি করে, মসজিদের নিচ দিয়ে গ্যাসের পাইপ চলে গেছে। আর প্রায়ই সেখানে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যেতো। এ বিষয়ে তিতাসের কর্মকর্তাদের বলা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
এই দুর্ঘটনার পরেরদিন তিতাসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার নেতৃত্ব দেন তিতাসের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল ওহাব। এই ঘটনায় ৭ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা অফিসের আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে সংস্থাটি।
-কেএম