অনলাইনঃ
নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারবাড়ী ‘মা হাওয়া (আ.) কওমি মহিলা মাদ্রাসা’র ৬ শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগে আটক মাদ্রাসার মুহতামিম আবুল খায়ের বেলালীর বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা করা হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে তার বিরুদ্ধে নির্যাতিত শিশু ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারবাড়ী ‘মা হাওয়া (আ.) কওমি মহিলা মাদ্রাসা’র মুহতামিমের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাওলানা আবুল খায়ের বেলালীকে। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার সোনাকানি গ্রামের ইব্রাহিম বেলালীর ছেলে। মাওলানা আবুল খায়ের বেলালী কেন্দুয়া পৌর শহরের দরগাহ মোড় জামে মসজিদের খতিবেরও দায়িত্ব পালন করতেন।
এছাড়া তিনি একজন ওয়াজ-মাহফিলের জনপ্রিয় বক্তা ছিলেন। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ওই মহিলা মাদ্রাসার শিশু ছাত্রী (১১) কে ধর্ষণে দায়ে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল খায়ের বেলালী (৩২) কে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। পরে আরো এক ছাত্রী (৮)কে একই কায়দায় ধর্ষণের কথা প্রকাশ হয়। এ ঘটনায় শিশু ছাত্রীর (১১) বাবা ও অপর ছাত্রীর (৮) চাচা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়েরের পর পুলিশ ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করে গতকাল নেত্রকোনা আদালতে সোপর্দ করেছেন।
এদিকে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা আবুল খায়ের বেলালী গত একবছরে ৬ জন ছাত্রীর সঙ্গে অনুরূপ কুকর্মের কথা স্বীকার করেছে। এসব ছাত্রীর বয়স ৮ থেকে ১১ বছর।
কেন্দুয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবুল খায়ের বেলালী বিভিন্ন প্রলোভনে ও ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীসহ ৬ জন ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে নির্যাতিত শিশুদের অভিভাবকরা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে পৃথক দু’টি মামলা করেন। অন্যরা অভিযোগ দিলে তাদের মামলাও নেওয়া হবে। তিনি জানান, গত এক বছর ধরে তিনি কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারবাড়ী ‘মা হাওয়া (আ,) কওমী মহিলা মাদ্রাসা’র মুহতামিমের দায়িত্ব নেন।
মাদ্রাসায় প্রায় ৩৫ জন শিশু ছাত্রী রয়েছে। এদের ১৫ জন থাকে আবাসিক। মাওলানা আবুল খায়ের বেলালীও সেখানে আবাসিক বাসিন্দা হন। সময় সুযোগ বুঝে তার পছন্দমতো কোমলমতি ছাত্রীকে ডেকে আনতো তার খাসখামরায় এবং তার গা-হাত-পা টিপে দেওয়ার জন্য হুকুম দিতেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে এই অবুঝ শিশুদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতেন তিনি। কাজ শেষে ওই অবুঝ শিশুদের হাতে কোরআন শরীফ তুলে দিয়ে- হুজুরের সাথে বেয়াদবি করা যাবে না, হুজুর যা বলে তাই করতে হবে। হুজুরের কথা অমান্য করলে বেহেশতে যাওয়া যাবে না, অমান্য করলে আল্লাহ্ তোমাকে দোযখের আগুনে পোড়াবেনসহ আরো অনেক ভীতিকর শপথ করাতেন। হুজুরের এই ভয়ানক শপথের বাধা অতিক্রম করে শুক্রবার সকালে ওস্তাদের অনৈতিক আচারণ ও যন্ত্রনার মুহূর্তগুলো নির্যাতনের শিকার ছাত্রী তার বড়বোনসহ বাড়ির অন্যদের বলে দেয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়।
-কেএম